ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর, ২০২৫

১০ মাস ধরে বন্ধ ওষুধ সরবরাহ

মল্লিক মাকসুদ, মির্জাগঞ্জ
প্রকাশিত: অক্টোবর ১৬, ২০২৫, ০১:৩৭ এএম

*** পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়
*** ব্যাহত হচ্ছে পরিবার-পরিকল্পনা ও মাতৃস্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম
*** সেবা না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েছেন সেবা গ্রহণকারীরা

পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ে টানা ১০ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে ওষুধ ও চিকিৎসা সামগ্রী সরবরাহ। এতে উপজেলাজুড়ে পরিবার-পরিকল্পনা ও মাতৃস্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। সেবা না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েছেন সেবা গ্রহণকারীরা।

উপজেলার সদর স্বাস্থ্যকেন্দ্র, এমসিএইচসহ ছয়টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণকেন্দ্র এবং আরও আটটি স্যাটেলাইট ক্লিনিক রয়েছে। পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এসব কেন্দ্রে ২০২২ সালে সেবা নিয়েছেন ২৪ হাজার ৭০১ দম্পতি ও ১৯ হাজার ২১৯ জন সাধারণ সেবা গ্রহণকারী। গত বছরও প্রায় একই সংখ্যক মানুষ সেবা নেন।

অফিস সূত্রে জানা যায়, এসব সেবাকেন্দ্রে ২৩ ধরনের ওষুধ ও সামগ্রী সরবরাহ করা হতো। তবে বর্তমানে ইনজেকশন ব্যতীত প্রায় সব ওষুধের সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। নিয়মিত মাসিক চাহিদা ছিল ৫১০০টি কনডম, ৫৫৭৫টি খাওয়ার বড়ি ও ১১০টি ‘আপন বড়ি’। কিন্তু বর্তমানে হাতে আছে মাত্র ২৪টি কনডম ও ৪০টি ‘সুখি বড়ি’; ‘আপন বড়ি’ সম্পূর্ণ শেষ। ইনজেকশন থাকলেও সিরিঞ্জ নেই। সবচেয়ে জনপ্রিয় পদ্ধতি ইমপ্লান্ট ও ডিডিএস কিট-এর সরবরাহও বন্ধ রয়েছে। সরেজমিন বিভিন্ন ইউনিয়নের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণকেন্দ্র ঘুরে এমনই চিত্র দেখা গেছে।

মির্জাগঞ্জ ও মাধবখালী পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক ফারজানা আক্তার বলেন, আমরা শুধু পরামর্শ দিচ্ছি; কিন্তু রোগীরা ওষুধ না পেয়ে বিরক্ত হয়ে ফিরে যান। আগে প্রতিদিন গড়ে ৫০ জন বা বেশি রোগী আসতেন। এখন সে সংখ্যা নেমে এসেছে ২ থেকে ৩ জনে।  উপজেলা সদর পরিবার কল্যাণকেন্দ্রসহ সবকয়টি সেবাকেন্দ্রের একই অবস্থা। সেবা গ্রহণকারীরা ওষুধ না পেয়ে ব্যর্থ মনোরথে ফিরে যায়।

উপজেলার একমাত্র ১০ শয্যা বিশিষ্ট পরিবার কল্যাণ ও স্বাস্থ্য কেন্দ্র দেউলী-রানীপুরে অবস্থিত। এখানকার পরিদর্শিকা শিরিন আক্তার জানান, প্রয়োজনীয় কনডম, পিল, ইমপ্লান্ট, আয়রন, ক্যালসিয়াম ও ফলিক অ্যাসিড ট্যাবলেট নেই ১০ মাস ধরে। এতে গর্ভবতী মা ও কিশোরীরা স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। রোগীদের শুধু রক্তচাপ মেপে কিছু পরামর্শ দিয়ে বিদায় জানাতে হয়।

এদিকে, সেবা না পাওয়ায় অনেক পরিবার এখন নিজেদের খরচে ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনে নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন অনেক রোগী। তারা বলেন, তাদের পরিবার নি¤œ আয়ের থাকার কারণে  পরিবার নিয়ে প্রকট সমস্যায় আছেন।

মহিষকাটা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণকেন্দ্রে সেবা নিতে আসা স্থানীয় বাসিন্দা লিলি বেগম বলেন, আমরা গরিব মানুষ। টাকা দিয়ে ওষুধ কেনার সামর্থ্য নেই। তাই আমরা বিনা টাকায় ডাক্তার দেখাতে ও ওষুধ নিতে এখানে আসি। কিন্তু ওষুধ না থাকায় কয়েকদিন পর পর এসেও খালি হাতে ফিরে যাই। আমাদের মতো গরিবের পক্ষে নিয়মিত ওষুধ কেনা সম্ভব না।

সেবাদান কেন্দ্রগুলো খোলা থাকলেও ওষুধ না থাকায় হতাশ হয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে সেবা গ্রহীতাদের। জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন সেবা গ্রহণকারী লোকজন।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এভাবে একটানা দীর্ঘদিন ওষুধ ও সামগ্রী বন্ধ থাকায় স্বাস্থ্যসেবায় ব্যাপক প্রভাব লক্ষণীয়। বিশেষ করে মধ্যম ও নি¤œ আয়ের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী ক্রমাগত মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পতিত হচ্ছে।

এ বিষয়ে উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. নেছার আলী বলেন, ওষুধ সরবরাহ বন্ধ থাকায় আমাদের পক্ষে চিকিৎসা সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, খুব শিগগিরই এ সমস্যার সমাধান হবে। ওষুধের বাজেট ও ক্রয় করা সম্পন্ন হয়েছে। আমরা আশাবাদী, অল্প কয়েকদিনের মধ্যে ওষুধ হয়তো বা হাতে পাব।