ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর, ২০২৫

আগাম শীতকালীন সবজি চাষে ব্যস্ত কৃষকেরা

বিরামপুর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: অক্টোবর ১৬, ২০২৫, ০১:৩৮ এএম

দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার কৃষকেরা আগাম শীতকালীন সবজি চাষ ও ফসল পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। প্রতিবছর সাধারণত নভেম্বর থেকে জানুয়ারি মাসে শীতকালীন সবজি বাজারে উঠলেও, সে সময় চাহিদার তুলনায় উৎপাদন ও সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় বাজার দর কমে আসে। এখন আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করে কৃষকরা মৌসুমের শুরুতেই সবজি বাজারে তোলার পরিকল্পনা নিয়েছেন। মৌসুমের শুরুতে বাজারে সবজির দাম ও চাহিদা দুটোই বেশি থাকে, ফলে কৃষকেরা অধিক লাভের আশা করছেন।

‎উপজেলার মাহমুদপুর, হাবিবপুর, সারঙ্গপুর, প্রস্তমপুর, চক হরিদাসপুর, মুন্নাপাড়া, জোতজয়রাম, ভেলারপাড়, পটুয়াকোলসহ আরও কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, আগাম শীতকালীন সবজি চাষে মাঠজুড়ে সবুজের সমারোহ। এসব জমিতে এখন আলু, বেগুন, মুলা, ফুলকপি, বাঁধাকপি, শিম, করলা, লাউ, ঢেঁড়শ, শসা এবং লালশাক, কলমিশাক, লাচ্ছাশাক, পালংশাকসহ বিভিন্ন শাক-সবজির চারা রোপণ এবং আগাম লাগানো সবজির খেত পরিচর্যার কাজ চলছে। এরই মধ্যে আগাম কিছু সবজি বাজারেও উঠতে শুরু করেছে।

‎উপজেলার হাবিবপুর গ্রামের কৃষক শাহ আলম বলেন, সাড়ে চার বিঘা জমিতে আগাম জাতের ফুলকপি, বাঁধাকপি, বেগুন, শিম ও শসা চাষ করেছেন। তার প্রত্যাশা, ১০-১৫ দিনের মধ্যে তিনি আগাম ফুলকপি, বাঁধাকপি ও বেগুন বাজারে তুলতে পারবেন। উপজেলা কৃষি অফিসের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা কখন কি ফসল চাষ করতে হবে, কোনো জাতের বীজ বপন করলে আবাদ ভালো হবে নিয়মিত এ ধরনের পরামর্শ ও সহযোগিতা করে থাকেন। তাদের নির্দেশনা মেনে চাষাবাদ করি বিধায় ফসলের উৎপাদন ভালো হয়।

‎পৌর এলাকার মাহমুদপুর মুন্সিপাড়া গ্রামের কৃষক রবেন সরেন বলেন, গত কয়েক বছর ধরে আগাম বেগুন, বাঁধাকপি ও ফুলকপি চাষ করে ভালোই লাভ করেছেন। এবারও ৩৩ শতক জমিতে বেগুন, ৩৩ শতক জমিতে বাঁধাকপি ও ফুলকপি এবং ২০ শতক জমিতে সাথী ফসল হিসেবে লাউ ও করলার চারা লাগিয়েছেন। আর কয়েকদিনের মধ্যেই ফসল বাজারে বিক্রি করতে পারবেন বলে তিনি জানান। বর্ষার শেষ দিক হওয়ায় অসময়ে বৃষ্টি হওয়ার বিষয়টি মাথায় রেখে কৃষি অফিসের পরামর্শে তিনি জমিতে বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছেন। যাতে বৃষ্টি হলেও জমি থেকে সহজেই পানি নেমে যেতে পারে।

‎প্রস্তমপুর দয়েরপাড় গ্রামের চাষি সানোয়ার হোসেন বলেন, সব ধরনের শাক-সবজি মৌসুমের শুরুতে বাজারে বিক্রি করতে পারলে দাম বেশি পাওয়া যায়। তিনি এবার ৫০ শতক জমিতে আগাম জাতের বাঁধাকপি, ৩০ শতক জমিতে আগাম জাতের আলু ও ১৪ শতক জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছেন। গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে সবজি খেতের কিছুটা ক্ষতি হলেও বর্তমানে আবহাওয়া ভালো থাকায় এ ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারবেন বলে তিনি জানান।

‎বিরামপুর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ কমল কৃষ্ণ রায় জানান, উপজেলা কৃষি অফিস থেকে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা আধুনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ ও রোগবালাই দমনে কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ ও সহযোগিতা করছেন। তিনি আরও জানান, বিরামপুর উপজেলায় চলতি খরিপ-২ মৌসুমে শীতকালীন আগাম সবজি আবাদ হয়েছে ১৫৬ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে বাঁধাকপি ৩৫ হেক্টর, ফুলকপি ৪৫ হেক্টর, শিম ৮ হেক্টর, বেগুন ১৫ হেক্টর সহ অন্যান্য শাক-সবজি আবাদ হয়েছে। গত রবি মৌসুমে ১২৭০ হেক্টর শাক-সবজি আবাদ হয়েছিল। আসন্ন রবি মৌসুমে ১২৮০ হেক্টর জমিতে শাক-সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে এবং লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি জমিতে শাক-সবজির আবাদ হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। ‎বিরামপুর উপজেলার কৃষকরা আশাবাদী, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ বছরের আগাম শীতকালীন সবজি চাষ তাদের মুখে হাসি ফোটাবে এবং বাজারে সবজির সরবরাহও বাড়াবে।