ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর, ২০২৫

অকেজো পল্লি উন্নয়ন একাডেমি

রেজাউল করিম, রংপুর
প্রকাশিত: অক্টোবর ১৬, ২০২৫, ০১:৪১ এএম

*** হতদরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রশিক্ষণের কথা থাকলেও তিন বছরে চালু হয়নি
*** খুলে পড়ছে ভবনের প্লাস্টার, ভেঙেছে জানালা, পড়ে আছে অকেজো ট্রাক্টর
*** প্রত্যাশিত প্রশিক্ষণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন রংপুরের সুবিধাবঞ্চিত মানুষ

১৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত রংপুর পল্লি উন্নয়ন একাডেমি এখন কার্যত অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে। ভবনের দেয়ালে শ্যাওলা, খুলে পড়ছে প্লাস্টার, জানালা ভাঙা, বাইরে অকেজো ট্রাক্টর পড়ে আছে। হতদরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরুর কথা থাকলেও তিন বছর পার হলেও এখানকার মাঠে-ময়দানে কাশফুল আর ঝোপঝাড়ই একমাত্র দৃশ্যমান। ফলে প্রত্যাশিত প্রশিক্ষণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সুবিধাবঞ্চিত মানুষ।

জানা যায়, ২০২২ সালে নির্মাণের পর থেকে এটি খালি পড়ে রয়েছে। নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১৩৪ কোটি টাকার বেশি। লক্ষ্য ছিল বৃহত্তর রংপুর অঞ্চলের হতদরিদ্র মানুষকে প্রশিক্ষিত করে জনশক্তিতে রূপান্তর করা। রংপুরের পল্লি উন্নয়ন একাডেমিটি জেলার তারাগঞ্জের ইকরচালীতে ঢাকা-দিনাজপুর মহাসড়কের পাশে অবস্থিত। এটি নির্মাণ করা হয়েছে ৫০ একর জায়গায়। ১০ তলা প্রশাসনিক ভবন, ৪ তলা কাফেটেরিয়া ও গেস্টহাউস, দোতলা মেডিকেল সেন্টার। খামার ভবন ছয়তলা দ্বিতীয় তলা পর্যন্ত নির্মিত।

লাইব্রেরি ভবন, হোস্টেল, মহাপরিচালকের বাংলো, ফ্যাকাল্টি কোয়ার্টার, স্টাফ কোয়ার্টার। এসব ভবনের আসবাব, বৈদ্যুতিক পাখা, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণসহ (এসি) অন্যান্য সরঞ্জাম অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে। সেগুলোতে ময়লা পড়েছে। আবাসিক ভবনে রয়েছে মডেল হোস্টেল। যা দ্বিতীয় তলা পর্যন্ত নির্মিত। সাধারণ হোস্টেল ষষ্ঠ তলা পর্যন্ত, ফ্যাকাল্টি কোয়াটার চতুর্থ তলা, স্টাফ কোয়াটার তৃতীয় তলা পর্যন্ত নির্মিত। পল্লি উন্নয়ন একাডেমি রংপুরের নাম পরিবর্তন করে শেখ রাসেল পল্লি উন্নয়ন একাডেমি রংপুর করা হলেও গণ-অভ্যুত্থানের পর ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে আগের নাম বহাল থাকে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আড়াই বছর আগে প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। কিন্তু মহাপরিচালক ও পরিচালক ছাড়া কাউকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। একাডেমির তথ্য অনুযায়ী, এখানে বিভিন্ন মেয়াদে প্রশিক্ষণ নিয়েছে ৫৫৫ জন।

একাডেমির নিরাপত্তা কর্মী এজাজুল ইসলাম বলেন, ‘তিনিসহ তিনজন নিরাপত্তাকর্মী, একজন কেয়ারটেকার, একজন ইলেকট্রিশিয়ান, একজন মালি দায়িত্ব পালন করছেন। মহাপরিচালক মাঝে মধ্যে আসেন। স্যার সচিবালয়ের লোক। এখানে কাজ কম তাই বেশির ভাগ সময়ে ঢাকায় থাকেন।’

তবে বাইরে পোল্ট্রি ফার্ম ও ডেইরি শেড ভাড়া দেওয়া হয়েছে বলে জানানÑ খামারি তাজুল ইসলাম। কত টাকায় নেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বছরে ২৫ হাজার টাকা সে হিসেবে মাসিক ভাড়া দিতে হয়। গরুর ডেইরি শেড ভাড়া নিয়েছে এখানে যিনি মসজিদ দেখেন। তিনি বছরে ৩০ হাজার টাকা  দেন।’

ডেইরি সেড ভাড়া নিয়েছেন একাডেমির মসজিদের খাদেম শাহিনুর রহমান। তিনি বলেন, ‘কিছুদিন আগে ভাড়া নিয়েছি মাসে তিন হাজার করে টাকা দেই। সাত আটটা গরু তুলেছি।’

পল্লি উন্নয়ন একাডেমি রংপুরের পরিচালক মো. জাহিদুল হক চৌধুরী বলেন, ‘আমরা এখানে মাত্র তিনজন আছি। দুই মাস হয় যোগদান করেছি। আপাতত কাজ নেই তবে নিয়োগ প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। সম্পন্ন হলে তখন কার্যক্রম শুরু হবে। লোকবল সংকটে ব্যাহত হচ্ছে একাডেমির সব ধরনের কার্যক্রম।’

পল্লি উন্নয়ন একাডেমি রংপুরের মহাপরিচালক খায়রুল আনাম বলেন, ‘পলেস্তারা খুলে যাওয়ার বিষয়ে আমি আসলে কিছু জানি না। এটা জানতে হলে সেই সময়ের কর্তৃপক্ষ যারা দায়িত্বে ছিলেন তাদেরকে বলতে হবে। এখানে শুধু আমাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কোনো লোকবল নেই। নতুন প্রতিষ্ঠান হিসেবে কিছু চ্যালেঞ্জ আছে। জনবল নিয়োগের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আগামী সপ্তাহেই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে।’ ডেইরি সেড ও পোলট্রি  ফার্ম ভাড়া দেওয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ভাড়া দেওয়া হয়নি এটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য দেওয়া হয়েছে।’