- কুমিল্লায় ১,১৯৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নেই
- নেতৃত্বের অভাবে পাঠদান ও প্রশাসনে অচলাবস্থা
- অভিভাবকদের ক্ষোভ, শিক্ষার মানে ধস
- নভেম্বর-ডিসেম্বরে শূন্য পদে নিয়োগের আশ্বাস
কুমিল্লা জেলার প্রাথমিক শিক্ষায় নীরব সংকট ক্রমেই গভীর হচ্ছে। জেলার ১৭টি উপজেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অর্ধেকেরও বেশি প্রতিষ্ঠান চলছে প্রধান শিক্ষকবিহীন অবস্থায়। ফলে প্রশাসনিক কাজকর্ম, পাঠদানের মান ও শিক্ষার পরিবেশ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, কুমিল্লা জেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ২ হাজার ১০৭টি। এর মধ্যে মাত্র ৯০৯টি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক রয়েছেন, বাকি ১ হাজার ১৯৮টি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নেই। এসব বিদ্যালয়ে বর্তমানে জ্যেষ্ঠ সহকারী শিক্ষকেরা ‘চলতি দায়িত্বে’ স্কুল পরিচালনা করছেন।
উপজেলাভিত্তিক চিত্রে দেখা যায়, সংকট প্রায় সর্বত্র। আদর্শ সদর উপজেলার ১১০টি বিদ্যালয়ের মধ্যে ৩৯টিতে, লাকসামে ৭৬টির মধ্যে ৪৩টিতে, দেবীদ্বারে ১৮৫টির মধ্যে ১২০টিতে, মুরাদনগরে ২০৪টির মধ্যে ১২৯টিতে এবং দাউদকান্দিতে ১৪৯টির মধ্যে ১০১টিতে প্রধান শিক্ষক নেই।
এ ছাড়া চৌদ্দগ্রামে ১৭৫টির মধ্যে ১১৪টি, ব্রাহ্মণপাড়ায় ১০৮টির মধ্যে ৫৬টি, বরুড়ায় ১৫৪টির মধ্যে ৯৩টি এবং বুড়িচংয়ে ১৪৯টির মধ্যে ৫৬টি বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষকবিহীন। চান্দিনায় ১৩৬টির মধ্যে ৬৫টি, হোমনায় ৯২টির মধ্যে ৬০টি, নাঙ্গলকোটে ১৫১টির মধ্যে ৮৫টি, মেঘনায় ৬৫টির মধ্যে ৪০টি, মনোহরগঞ্জে ১০৪টির মধ্যে ৬৩টি, তিতাসে ৯২টির মধ্যে ৫৫টি, সদর দক্ষিণে ৯০টির মধ্যে ৪৫টি এবং লালমাইয়ে ৬৭টির মধ্যে ৩৪টি বিদ্যালয় একই সংকটে ভুগছে।
প্রধান শিক্ষকের সংকটে বিদ্যালয়গুলোতে শৃঙ্খলা ও শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে বলে অভিভাবকদের অভিযোগ। আদর্শ সদর উপজেলার অভিভাবক তাবারক হোসেন বলেন, ‘প্রধান শিক্ষক না থাকায় স্কুলের শৃঙ্খলা ধরে রাখা কঠিন হয়ে গেছে। সহকারী শিক্ষকেরা যতই চেষ্টা করুন, নেতৃত্বের অভাবটা স্পষ্ট।’
দেবীদ্বারের রুবিনা আক্তার নামের আরেক অভিভাবক বলেন, ‘আমাদের সন্তানদের লেখাপড়া ঠিকমতো হচ্ছে না। কখনো ক্লাস বন্ধ থাকে, কখনো শিক্ষক কম। এত বড় জেলায় এত স্কুলে কেন প্রধান শিক্ষক নেই, এটা অগ্রহণযোগ্য।’
শিক্ষাবিদদের মতে, একটি বিদ্যালয়ের প্রাণ হলেন প্রধান শিক্ষক। তিনি শুধু পাঠদানের মানই নয়, বিদ্যালয়ের সার্বিক প্রশাসনিক শৃঙ্খলারও মূল দায়িত্বে থাকেন। সেই নেতৃত্বের অনুপস্থিতি কুমিল্লার প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থায় স্থবিরতা তৈরি করেছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তাপস কুমার পাল বলেন, ‘প্রধান শিক্ষক পদে ৩৫ শতাংশ সরাসরি নিয়োগ এবং ৬৫ শতাংশ পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ হয়। বর্তমানে অধিকাংশ শূন্য পদই পদোন্নতির জন্য খালি রয়েছে।’
তিনি আরও জানান, ‘মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেলেই নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হবে। নভেম্বর-ডিসেম্বরের মধ্যেই শূন্য পদগুলো পূরণ করা সম্ভব হবে বলে আশা করছি।’