ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর, ২০২৫

হাঁসের ডাকে বদলে গেল মোনাজাতের ভাগ্য

মো. মিঠুন মাহমুদ, চুয়াডাঙ্গা
প্রকাশিত: অক্টোবর ১৬, ২০২৫, ০১:৫৯ এএম

বর্ষার পানি কমে গেলে চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার রামনগর গ্রাম যেন প্রাকৃতিক জলজ প্রাণীর এক অভয়ারণ্যে পরিণত হয়। বিলজুড়ে তখন ছড়িয়ে থাকে ছোট মাছ, ব্যাঙ, শামুক, ঝিনুকসহ নানা জীব। এই সময়ে বিলের পানিতে প্রাণ ফিরে আসে, আর সেই পানিই হয়ে ওঠে হাঁস পালনের স্বর্গভূমি। এই সুযোগটাই কাজে লাগিয়ে রামনগরের কৃষক মোনাজাত আলী গড়ে তুলেছেন একটি সফল হাঁসের খামার, যা এখন তার অর্থনৈতিক স্বাবলম্বনের পথ খুলে দিয়েছে।

২০২৩ সালে ইউটিউবে হাঁস পালনের ভিডিও দেখে অনুপ্রাণিত হন মোনাজাত আলী। সামান্য পুঁজি নিয়ে তিনি শুরু করেন মাত্র ৬ হাজার হাঁসের বাচ্চা দিয়ে। প্রতিদিন সকালবেলা হাঁসগুলো বিলের পানিতে ছেড়ে দেওয়া হয়, যেখানে তারা প্রাকৃতিক খাবার খায়। সন্ধ্যায় সেগুলো শুকনো স্থানে এনে পরিচর্যা করা হয়। এক জায়গায় না রেখে পানি ও খাবারের প্রাপ্যতা অনুযায়ী স্থান পরিবর্তন করা হয়, যা হাঁসগুলোর স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী।

বর্তমানে মোনাজাত আলীর খামারে রয়েছে ১৮ হাজার হাঁস। এপ্রিলের শুরুতে হাঁসের বাচ্চাগুলো কেনা হয়েছিল, আর জুলাইয়ের মাঝামাঝি থেকেই সেগুলো ডিম দেওয়া শুরু করে। বর্তমানে খামারে গড়ে প্রতিদিন ৩ হাজার ডিম সংগ্রহ করা হচ্ছে।

খামারটি এখন পুরোপুরি বাণিজ্যিকভাবে গড়ে উঠেছে। ডিমগুলো পাইকারি ব্যবসায়ীরা প্রতিটি ১৩ টাকা দরে কিনে নিচ্ছেন। এতে প্রতিদিন আয় হচ্ছে প্রায় ৩৯ হাজার টাকা, যা মাস শেষে দাঁড়ায় প্রায় ১১ লাখ ৭০ হাজার টাকা।

সব খরচ বাদ দিয়ে মোনাজাত আলীর গড়ে মাসিক নিট আয় সাড়ে ৬ লাখ টাকা। তার খামারে খাকি ক্যামবেল জাতের হাঁস রয়েছে, যা ডিম উৎপাদনে বিশেষভাবে জনপ্রিয়। হাঁসগুলোর দেখভালে নারী-পুরুষ মিলিয়ে পাঁচজন শ্রমিক কাজ করেন, যাদের মোট মাসিক বেতন ৫০ হাজার টাকা।

মোনাজাত আলী জানান, ‘ছোট করে শুরু করেছিলাম, এখন এটা আমার জীবনের প্রধান আয়ের উৎস। ডিম বিক্রি শেষে হাঁসগুলো মাংস হিসেবেও বিক্রি করা যাবে, তাতেও লাভ থাকবে। এই খামার আমার জীবনে নতুন আশার আলো জ¦ালিয়েছে।’

দামুড়হুদা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা নীলিমা আক্তার হ্যাপি বলেন, ‘হাঁস পালনে অপার সম্ভাবনা রয়েছে। মোনাজাত আলীর খামার এ অঞ্চলে উদাহরণ হয়ে উঠেছে। অনেকেই এখন তার অনুপ্রেরণায় হাঁস পালন শুরু করছেন। প্রাণিসম্পদ বিভাগ থেকে খামারিদের সরকার নির্ধারিত মূল্যে ভ্যাকসিন, চিকিৎসা ও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।’

তিনি আরও জানান, হাঁস পালনে জলাশয়ভিত্তিক এ ধরনের উদ্যোগ গ্রামীণ অর্থনীতিকে চাঙা করছে, পাশাপাশি বেকারত্ব দূরীকরণেও ভূমিকা রাখছে।