- ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে হাজারো ট্রলার সাগরমুখী
- লঘুচাপের আশঙ্কা সত্ত্বেও আশাবাদী জেলেরা
- সহায়তা পেয়েছেন জেলার ৩৭ হাজার ৯৯৫ জন জেলে
মা ইলিশ রক্ষায় ২২ দিনের সরকারি নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে গতকাল মধ্যরাতে। নিষেধাজ্ঞা শেষে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র বরগুনার পাথরঘাটা, চরদুয়ানী, সদর ইউনিয়নের পদ্মা স্লুইস ঘাট ও তালতলী বিএফডিসি উপকেন্দ্রে এখন সমুদ্রগামী হাজারো ট্রলারের সমাবেশ। ভরা মৌসুমে ইলিশ আহরণ ঘিরে নতুন আশার আলোয় বুক বেঁধেছেন উপকূলীয় জেলেরা।
তবে এ আনন্দের মাঝেও কিছুটা দুশ্চিন্তা রয়ে গেছে সাগরে সৃষ্ট লঘুচাপ নিয়ে। অনেক জেলে জানিয়েছেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবারের মৌসুমে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়বে বলে তারা আশাবাদী।
সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, মা ইলিশের নির্বিঘœ প্রজনন নিশ্চিত করতে গত ৩ অক্টোবর রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে শুরু হয়ে ২৫ অক্টোবর রাত ১২টা পর্যন্ত সারা দেশে ইলিশসহ সব ধরনের মাছ আহরণ, বিপণন ও বিক্রয়ে নিষেধাজ্ঞা ছিল। এই সময়টাতে জেলেরা ট্রলার ও জাল মেরামতে ব্যস্ত ছিলেন।
বরগুনার সাধারণ জেলেরা জানান, নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবারে অভাব-অনটন থাকলেও এবার ভালো মাছ ধরতে পারলে সেই ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে। তাই নিষেধাজ্ঞা শেষে সাগরে নামছেন তারা নতুন আশায়।
জেলার পাথরঘাটা ট্রলারের মাঝি রফিক মিয়া বলেন, ‘সাগরে একটু লঘুচাপ আছে ঠিকই, তবে এই সময়ে প্রচুর মাছ থাকে। সাবধানতা নিয়েই আমরা জাল ফেলতে যাচ্ছি।’
জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, নিষেধাজ্ঞা চলাকালে বরগুনার ৪৮ হাজার ৭৯৫ জন নিবন্ধিত জেলের মধ্যে ৩৭ হাজার ৯৯৫ জন সমুদ্রগামী জেলেকে ভিজিএফ কর্মসূচির আওতায় ২৫ কেজি করে চাল বিতরণ করা হয়েছে।
তবে অনেক জেলের অভিযোগ, খাদ্য সহায়তা বণ্টনে অনিয়ম হয়েছে। এ বিষয়ে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মহসিন বলেন, ‘কোনো নিবন্ধিত জেলে খাদ্য সহায়তা থেকে বাদ পড়েননি। নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে ৫৫টি ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান চালিয়ে প্রায় ২০০ কেজি মাছ জব্দ করা হয়েছে, যা এতিমখানায় বিতরণ করা হয়েছে। ৪১টি ট্রলার আটক করা হয়েছে, অভিযান আজ রাত পর্যন্ত চলবে।’
অন্যদিকে, বরগুনা ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি আলহাজ মোস্তফা চৌধুরী অভিযোগ করে বলেন, ‘বাংলাদেশি জেলেরা সরকারের দেওয়া ৬৫ দিনের অবরোধ ও ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা মেনে চলে, কিন্তু ভারতীয় ট্রলারগুলো প্রায়ই আমাদের জলসীমায় প্রবেশ করে মাছ ধরে নিয়ে যায়। প্রশাসনের উদাসীনতার কারণেই এটা হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘অবৈধ ট্রলিং বোটের কারণে সাগরের মাছের বংশ ধ্বংস হচ্ছে। সরকার যদি দ্রুত ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে সাধারণ জেলেরা আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবে।’
এদিকে, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা দাবি করেন, এবার ভারতীয় ট্রলার বাংলাদেশের জলসীমায় প্রবেশ করতে পারেনি। তিনি বলেন, ‘দুই-একটি ট্রলার অনধিকার প্রবেশ করলেও তাদের আইনের আওতায় আনা হয়েছে।’
নিষেধাজ্ঞা শেষে উপকূলীয় জেলা বরগুনায় এখন জেলেদের চোখে নতুন আশার ঝলক। সাগরে নামা হাজারো ট্রলার আর রূপালী ইলিশের সম্ভাবনায় মুখর হয়ে উঠেছে পুরো উপকূল।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন