প্রচলিত কৃষি পদ্ধতি থেকে ভিন্ন পথে হাঁটলেন পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার এক তরুণ চাষি। মাচায় বারোমাসি তরমুজ চাষ করে তিনি এখন আলোচনার কেন্দ্রে। উপজেলার উত্তর কাটাখালী গ্রামের কৃষক সোহাগ মৃধা তার উদ্ভাবনী চিন্তা ও পরিশ্রমের মাধ্যমে প্রমাণ করেছেন ইচ্ছা ও পরিশ্রম থাকলে কৃষিতেই সাফল্য আসে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, দশমিনা উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের কৃষকেরা ধীরে ধীরে এই পদ্ধতির দিকে ঝুঁকছেন। চলতি বছর উপজেলায় প্রায় দশ একর জমিতে মাচায় তরমুজ চাষ হয়েছে, যার বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ফলন আশানুরূপ। চলতি মৌসুমে সোহাগ মৃধা প্রায় সাড়ে পাঁচ একর জমিতে মাচা পদ্ধতিতে তরমুজ চাষ করেছেন। উত্তর কাটাখালী খালের পাড়ে ও স্থানীয় এক মাছচাষির ঘেরের পাশে গড়ে তোলা মাচাগুলোতে বর্তমানে ঝুলছে সবুজ রঙের আকর্ষণীয় তরমুজ। তার মাচায় থাকা তরমুজের বাজারমূল্য বর্তমানে প্রায় ২৩ লাখ টাকা।
সোহাগ মৃধা জানান, ‘গত তিন বছর ধরে আমি মাচায় তরমুজ চাষ করে আসছি। এ বছর তুলনামূলক বড় আকারে করেছি। বারোমাসি তরমুজের বাজারে চাহিদা বেশি, তাই এই উদ্যোগ নিয়েছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘এই চাষে আমার প্রায় ১৫ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে বাজারে তরমুজ বিক্রির পর ৭ থেকে ৮ লাখ টাকা পর্যন্ত লাভ হবে বলে আশা করছি।’
মাচায় তরমুজ চাষের সুবিধা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাচায় তরমুজ চাষের ফলে রোগ-পোকা কম হয় এবং ফলনও তুলনামূলক বেশি পাওয়া যায়। পাশাপাশি জমি দীর্ঘসময় চাষযোগ্য থাকে এবং গাছের শিকড় বন্যা বা জলাবদ্ধতার ক্ষতি থেকে রক্ষা পায়।
বাজারে তরমুজের চাহিদা স্থানীয় ফল ব্যবসায়ীরা মিন্টু আকন জানিয়েছেন, দক্ষিণাঞ্চলে এখন বারোমাসি তরমুজের চাহিদা ব্যাপক। আগে যেখানে উত্তরবঙ্গ থেকে তরমুজ এনে বিক্রি করতে হতো, এখন স্থানীয় চাষিরাই সেই চাহিদা পূরণ করছেন। এতে পরিবহন খরচ কমছে, তরমুজের সতেজতাও বজায় থাকছে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী মো. রহিম ফকির বলেন, ‘উত্তরাঞ্চল থেকে তরমুজ আনতে অনেক খরচ হতো। এখন সোহাগ ভাইদের মতো চাষিদের কারণে আমরা স্থানীয়ভাবেই ভালো মানের তরমুজ পাচ্ছি। এতে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ই উপকৃত হচ্ছেন।’ উদাহরণ তৈরি করলেন সোহাগ গ্রামের অন্য কৃষকরাও সোহাগের সাফল্য দেখে অনুপ্রাণিত হচ্ছেন। ইতোমধ্যেই অনেকেই আগামী মৌসুমে এই পদ্ধতিতে চাষের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। সোহাগ মৃধা বলেন, ‘আমি চাই আমার সফলতা দেখে অন্যরাও উৎসাহ পাক। কৃষিতে আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করলেই আমরা দেশের চাহিদা মেটাতে পারব, এমনকি রপ্তানিও সম্ভব।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ জাফর মো. জাফর আহমেদ বলেন, ‘মাচায় তরমুজ চাষে এই অঞ্চলে ভালো ফলন পাওয়া গেছে। আমরা নিয়মিতভাবে কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি এবং প্রয়োজনীয় সহায়তা করছি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ পদ্ধতিতে চাষ করে চাষিরা দারুণভাবে লাভবান হবেন।’ এদিকে, দশমিনার মাটিতে সোহাগের এই সাফল্য প্রমাণ করেছে উদ্ভাবনী চিন্তা, শ্রম ও অধ্যবসায় থাকলে কৃষিই হতে পারে সবচেয়ে লাভজনক বিনিয়োগ।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন