ঢাকা বুধবার, ১২ নভেম্বর, ২০২৫

মেঘনা-ধনাগোদা সড়ক

বেড়িবাঁধ সড়ক যেন মরণফাঁদ

লিয়াকত হোসাইন, মতলব উত্তর
প্রকাশিত: নভেম্বর ১২, ২০২৫, ০২:০৬ এএম

চাঁদপুরের মতলব উত্তরে মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের আওতায় নির্মিত ৬৪ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ সড়কটি এখন যেন এক মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। সড়কের বিভিন্ন স্থানে সৃষ্টি হয়েছে ছোট-বড় দেড় শতাধিক গর্ত। এসব গর্তে প্রতিদিনই ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে পথচারী ও যানবাহন। এলাকাবাসীর আশঙ্কা, যেকোনো মুহূর্তে ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।

সরেজমিনে দেখা যায়, মেঘনা-ধনাগোদা বেড়িবাঁধ এলাকার মোহনপুর, ষাটনল, শিকিরচর, এখলাসপুর, নন্দলালপুর, সাহেববাজার, আমিরাবাদসহ বেরিবাঁধের বিভিন্ন স্থানে দুপাশের বিভিন্ন জায়গায় বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। কোথাও কোথাও সড়কের পিচ উঠে গেছে, আবার কোথাও গর্তের গভীরতা এত বেশি যে ছোট যানবাহন উল্টে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, এই সড়ক ব্যবহার করে মতলব উত্তর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা, ঢাকা থেকে চাঁদপুর জেলার বিভিন্ন উপজেলা, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালীসহ দক্ষিণ অঞ্চলের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় চলাচল করে। দীর্ঘদিন ধরে সড়কটি সংস্কারের দাবি জানানো হলেও সড়ক ও জনপদ বিভাগ (সওজ) কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

এদিকে মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের বেড়িবাঁধটি পাউবোর আওতাধীন হলেও এর ওপরে নির্মিত পাকা সড়কটি সওজ বিভাগের আওতাধীন।

স্থানীয় অটোরিকশাচালক রুবেল হোসেন বলেন, রাস্তা নির্মাণের দুই-তিন বছর যেতে না যেতেই দুপাশে গর্তের সৃষ্টি হয়। এখন প্রতিদিন গাড়ি চালাতে হচ্ছে ঝুঁকি নিয়ে। একটু অসাবধান হলেই ঘটে যায় দুর্ঘটনা।

মোটরসাইকেলচালক আনোয়ার হোসেন জানান, দিনে কোনোভাবে রাস্তা পার হওয়া যায়, কিন্তু রাতে ভয়ংকর পরিস্থিতি। অনেক সময় দূর থেকে গর্ত দেখা যায় না, হঠাৎ পড়ে গেলে বড় দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা থাকে।

পিকআপচালক আব্দুর রহমান বলেন, কয়েক বছর না যেতেই রাস্তাটি গর্তে ভরে গেছে। রাতের বেলায় গর্তগুলো বোঝা যায় না, তাই সব সময় আতঙ্ক নিয়ে গাড়ি চালাতে হয়।

কলাকান্দা ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মেহেদী হাসান বলেন, বেড়িবাঁধ সড়কটি এলাকাবাসীর প্রাণের দাবি। এখন গর্তের কারণে দুর্ঘটনা বাড়ছে। সংশ্লিষ্ট বিভাগকে দ্রুত মেরামতের জন্য আমরা একাধিকবার জানিয়েছি।

সচেতন মহল বলছে, যদি সড়কের গর্তে পড়ে দুর্ঘটনার শিকার হয়ে করো প্রাণ যায়, তাহলে এর দায় কে নেবে? তারা মনে করছেন, দুর্ঘটনা এড়াতে দ্রুত সংস্কারের ব্যবস্থা নিতে হবে।

চাঁদপুর সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন জানান, সড়কটির গর্তগুলো মেরামতের জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মতলব ব্রিজ থেকে বেড়িবাঁধের পূর্ব অংশে সংস্কারকাজের জন্য ইতিমধ্যে টেন্ডার দেওয়া হয়েছে। পশ্চিম এলাকার মেরামতের কাজ এখনো ঠিকাদারের আওতায় আছে। এ কারণে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমরা তাদের চিঠি দিয়েছি।

অন্যদিকে মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী (চ. দা.) সেলিম শাহেদ বলেন, বেড়িবাঁধটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের হলেও এর ওপরে থাকা পাকা সড়ক সওজ বিভাগের দায়িত্বে। বেড়িবাঁধে যদি কোথাও ক্ষতি হয়, আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিই; কিন্তু সড়কের সংস্কারকাজ সওজ বিভাগকেই করতে হয়।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদা কুলসুম মনি বলেন, ‘বেড়িবাঁধের বিভিন্ন জায়গায় গর্ত দেখা গেছে। এগুলো সড়ক দুর্ঘটনার কারণ হতে পার। আমি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলব, এ বিষয়ে যাতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হয়।’