পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলায় গত দেড় বছরে পানিতে ডুবে ৬৭ জন শিশু দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে। এর মধ্যে দ্রুত উদ্ধার ও চিকিৎসার মাধ্যমে ৩১ জনকে জীবিত রাখা গেলেও ৩৬ শিশুর প্রাণহানি ঘটেছে, যা স্থানীয়ভাবে গভীর উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।
সর্বশেষ দুর্ঘটনাটি ঘটে গত ২১ অক্টোবর। ওইদিন উপজেলার চরবোরহান ইউনিয়নের উত্তর চরশাহজালাল গ্রামে রাফি (৪) নামে এক শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। রাফি স্থানীয় বাসিন্দা সিদ্দিক বেপারী ও শারমিন বেগমের একমাত্র সন্তান ছিলেন। পরিবারের সদস্যরা জানান, সবার অগোচরে খেলতে খেলতে রাফি বাড়ির পাশের পুকুরে পড়ে যায়। দীর্ঘ খোঁজাখুঁজির পর কয়েক ঘণ্টা পর পুকুর থেকে তার নিথর দেহ উদ্ধার করা হয়। একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে মা শারমিন বেগম মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। ঘটনাটি পুরো গ্রামজুড়ে শোকের ছায়া ফেলেছে।
দশমিনা উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত উপজেলায় মোট ৬৭টি শিশু পানিতে ডুবে দুর্ঘটনার শিকার হয়। এর মধ্যে ৩৬ জনের মৃত্যু ঘটে, যা এ অঞ্চলে শিশু নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
চরবোরহান ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান মো. ফরহাদ আকন বলেন, ‘উপকূলীয় এলাকায় প্রায় প্রতিটি বাড়ির পাশেই পুকুর বা জলাশয় রয়েছে। অভিভাবকদের সামান্য অসতর্কতার সুযোগে শিশুরা খেলতে গিয়ে এসব দুর্ঘটনায় পড়ে। সচেতনতার অভাবই বড় কারণ।’
দশমিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ‘শিশুদের পানিতে ডুবে মৃত্যুর ঘটনা রোধে পরিবারে সচেতনতা বাড়ানো জরুরি। অল্প বয়স থেকেই সাঁতার শেখানো এবং পানির উৎসের আশপাশে নজরদারি করলে এমন দুর্ঘটনা অনেকটাই কমানো সম্ভব।’
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, প্রতি বছরই পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু হলেও স্থায়ী ও কার্যকর প্রতিরোধমূলক উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। তারা শিশু নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সচেতনতা কার্যক্রম ও প্রশিক্ষণ কর্মসূচির দাবি জানিয়েছেন।

