ঢাকা রবিবার, ১৬ নভেম্বর, ২০২৫

হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে লাশ নিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ

শ্বশুরবাড়িতে স্ত্রীর প্রেমিকের  ছুরিকাঘাতে স্বামীর মৃত্যু

চৌদ্দগ্রাম (কুমিল্লা) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: নভেম্বর ১৬, ২০২৫, ০১:১৪ এএম

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলায় নববিবাহিত যুবক আবু বক্কর ওরফে আসিফ (২৬) হত্যার প্রতিবাদে লাশ নিয়ে মহাসড়ক অবরোধ করেছে স্বজন ও এলাকাবাসী। শনিবার সকালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চৌদ্দগ্রামের সৈয়দপুর এলাকায় প্রায় এক ঘণ্টা ধরে এ অবরোধ চলে। এতে দুই পাশে প্রায় চার কিলোমিটারজুড়ে তীব্র যানজট তৈরি হয়।

নিহত আসিফ চৌদ্দগ্রাম উপজেলার ঘোলপাশা ইউনিয়নের কেন্ডা গ্রামের মরহুম ফটিক মিয়ার ছেলে। তিনি দীর্ঘদিন সৌদি আরবে ছিলেন এবং দুই মাস আগে দেশে ফেরেন। গত ২৭ অক্টোবর তিনি সদর দক্ষিণ উপজেলার আবদুল্লাহপুর গ্রামের দেলোয়ার হোসেনের মেয়ে সুমাইয়া আক্তার সুইটিকে (১৯) বিয়ে করেন। পরিবারের ভাষ্য অনুযায়ী, গত ৮ নভেম্বর নববধূ স্ত্রীকে নিয়ে শ^শুরবাড়ি বেড়াতে যান আসিফ। সেদিন সন্ধ্যায় শ্যালক শান্তকে সঙ্গে নিয়ে অলির বাজার থেকে হেঁটে আবদুল্লাহপুরে ফেরার পথে সাদিয়া দারুল উলুম মাদ্রাসার সামনে পৌঁছালে আগ থেকে ওঁৎ পেতে থাকা দুই যুবক রাব্বি ওরফে বাপ্পি ও পারভেজ তার ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। তারা আসিফকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়।

গুরুতর আহত অবস্থায় প্রথমে সদর দক্ষিণ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয় তাকে। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (পিজি) নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে ভর্তি করা হলে শুক্রবার সকালে তিনি মারা যান।

নিহতের ছোট ভাই আরাফাত হোসেন বলেন, ‘ভাবি সুইটির সঙ্গে বাপ্পি নামে এক যুবকের বিয়ের আগের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। সেই আক্রোশ থেকেই বাপ্পি ও তার সহযোগী পারভেজ ভাইকে ছুরিকাঘাত করে। আমরা ধারণা করছি, এ ঘটনায় স্ত্রী সুইটিও জড়িত থাকতে পারে।’

আরাফাত আরও জানান, ঘটনার পর সুইটি নিজেই সদর দক্ষিণ থানায় ২৬ ধারায় একটি মামলা করেন। ‘ঘটনাটি ভিন্ন খাতে নিতে ভাবি পরিকল্পিতভাবে মামলা করেছেন,’ দাবি করেন তিনি। পরিবার শিগগিরই স্ত্রী সুইটিকে আসামি করে আদালতে হত্যা মামলা করবে বলে জানিয়েছে।

গত শুক্রবার রাতে মরদেহ গ্রামের বাড়িতে পৌঁছালে স্বজন ও এলাকাবাসী বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। গতকাল শনিবার সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত তারা মহাসড়ক অবরোধ করে হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি জানায়।

এ সময় বিপুলসংখ্যক নারী-পুরুষ অংশ নেন এবং নিহতের মা আলেয়া বেগম, নানি রুপিয়া বেগমসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ কান্নাজড়িত কণ্ঠে বক্তব্য দেন। পরে চৌদ্দগ্রাম থানা পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে দ্রুত গ্রেপ্তারের আশ্বাস দিলে অবরোধ তুলে নেওয়া হয়।

অভিযোগ সম্পর্কে সুইটির বাবা দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমার মেয়ে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত নয়। বিয়ের আগে তার কোনো প্রেমের সম্পর্কও ছিল না। সে মোবাইল ফোনও ব্যবহার করত না। আমরাও হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার চাই।’

চৌদ্দগ্রাম মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ হিলাল উদ্দিন বলেন, ‘বিক্ষোভের খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। বিষয়টি আইজিপি ও কুমিল্লা পুলিশ সুপার জানেন। আসামিদের গ্রেপ্তারের আশ্বাস দিলে অবরোধ প্রত্যাহার করা হয়।’

সদর দক্ষিণ মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ সেলিম জানান, ‘ঘটনার পর অভিযুক্তরা এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।’