সুনামগঞ্জের মধ্যনগর বাজারের কেন্দ্রে অবস্থিত শতবর্ষী ঐতিহাসিক পুকুরটি দীর্ঘদিনের অবহেলা, অনিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ এবং চারপাশ দখলের কারণে দ্রুত হারিয়ে যেতে বসেছে। প্রায় এক একর ৯৬ শতক আয়তনের এই পুকুরটি এখন কচুরিপানায় ভরাট, চারপাশে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ এবং দখলদারদের স্থাপনায় পরিবেষ্টিত। ফলে পুকুরটি ক্রমশ সংকুচিত হওয়ার পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ স্থানীয় বাসিন্দাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে।
উপজেলা প্রশাসন মাঝে মাঝে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান পরিচালনা করলেও পুকুরটির স্থায়ী সংস্কার ও সৌন্দর্যবর্ধনের বিষয়ে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
স্থানীয় প্রবীণ ব্যক্তিদের বর্ণনা ও উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, একসময় মধ্যনগর এলাকা জমিদার ব্রজেন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরীর জমিদারির অংশ ছিল। ১৮৮৫ থেকে ১৯২০ সালের মধ্যে মধ্যনগর অঞ্চলে তীব্র পানির সংকট দেখা দিলে জমিদার তার প্রজাদের সুবিধার্থে এই পুকুরটি খনন করেন। পুকুরটির মাটি দিয়েই পরবর্তীতে গড়ে ওঠে বর্তমান মধ্যনগর বাজারের বসতি। সে সময় পুকুরটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য দুজন পাহারাদারও নিয়োগ করেছিলেন তিনি।
একসময় পুকুরের পানি স্থানীয়দের পানীয়, অজু, গোসল, রান্নাসহ নানা কাজে ব্যবহৃত হতো। প্রায় তিন দশক আগে সংস্কারের অভাবে এটি ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ে। এমনকি শুকনা মৌসুমে উদ্দাখালী নদী শুকিয়ে গেলে বেশ কয়েকবার আগুন লাগার সময় এই পুকুরের পানি দিয়েই বাজার এলাকা রক্ষা করা হয়েছিল।
মধ্যনগর বি.পি. উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের সহকারী অধ্যাপক গোলাম জিলানী বলেন, মধ্যনগর বাজারের শতবর্ষী ঐতিহ্যের অংশ এই পুকুরটি। অবহেলা ও দখলের কারণে এটি হারিয়ে যাচ্ছে। আমরা চাই পুকুরটি সংস্কার করে চারপাশে ওয়াকওয়ে বা শিশুদের বিনোদনের জন্য একটি মিনি পার্ক তৈরি করা এখন সময়ের দাবি।
মধ্যনগর বাজার বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মিনু বলেন, ছোটকাল থেকেই এই পুকুরটিকে দেখে আসছি। এখন এটি দখল ও ভরাট হয়ে বিলীন হওয়ার পথে। পুকুরটি দখলমুক্ত ও সংস্কার করা হলে আগের মতো সৌন্দর্য ফিরে পাবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উজ্জ্বল রায় বলেন, শতবর্ষী পুকুরটি দখলমুক্ত করে পুনর্গঠন ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

