ঢাকা রবিবার, ১৬ নভেম্বর, ২০২৫

৩০ বছরের শিক্ষকতা শেষে জীবনের লড়াই, পাশে নেই প্রয়োজনীয় সহায়তা

আগৈলঝাড়া (বরিশাল) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: নভেম্বর ১৬, ২০২৫, ০১:১৭ এএম

বরিশালের আগৈলঝাড়ায় অবসরপ্রাপ্ত এক শিক্ষক জীবনের কঠিন সময়ে উপযুক্ত চিকিৎসা না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। ‘ভেগাই হালদার পাবলিক একাডেমি’র ইংরেজি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মো. মিজানুল হক (৭০) তিন বছর ধরে নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে বিছানায় পড়ে আছেন। ত্রিশ বছরের শিক্ষকতা জীবনে সৎ ও আদর্শবান হিসেবে পরিচিত এই শিক্ষক আজ চিকিৎসার অর্থের অভাবে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে।

বরিশাল জেলার উজিরপুর উপজেলার জল্লা ইউনিয়নের ওরাবাঁশবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা মিজানুল হক ২০২২ সালের ১১ অক্টোবর অবসরে যান। অবসরের পর তিনি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্ট ও অবসর সুবিধা বোর্ডের কাছে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিলেও এখনো অবসর ভাতা ও কল্যাণ ফান্ডের টাকা পাননি। দীর্ঘসূত্রতার কারণে তার চিকিৎসা সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে।

তিনি ডায়াবেটিক, হাই প্রেশার ও কিডনি ড্যামেজসহ বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত। স্ত্রী সাজেদা খানম নিজেও অসুস্থ এবং বয়সজনিত কারণে চলাফেরা করতে পারেন না। একমাত্র ছেলে ইমরান হোসেন ২০০৮ সালে আত্মহত্যা করেন। মেয়ের বিয়ে হয়ে যাওয়ায় বাবা-মায়ের সেবা করার মতো কেউ নেই।

মেয়ে সামিয়া আক্তার অভিযোগ করে বলেন, ‘পিতা সারাজীবন আদর্শ শিক্ষক হিসেবে কাজ করেছেন। আজ তিনি প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পাচ্ছেন না। সরকার যদি দ্রুত তার অবসর ভাতা ও কল্যাণ ফান্ডের টাকা প্রদান করে, তাহলে অন্তত তার চিকিৎসা করানো সম্ভব হবে।’

বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘একজন শিক্ষকের জীবনের শেষ ভরসা অবসর ভাতা ও কল্যাণ ফান্ড। মৃত্যু হলে সেই টাকা আর কোনো কাজে আসবে না। তাই দ্রুত অর্থপ্রদান জরুরি।’

আগৈলঝাড়া মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি ফারহানা আক্তার বলেন, ‘মিজানুল হক স্যারের মতো কোনো শিক্ষক যেন আর বঞ্চনার শিকার না হয়। আমরা দ্রুত তার পাওনা পরিশোধের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ চাই।’

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক যতীন্দ্র নাথ মিস্ত্রী বলেন, ‘শিক্ষকদের বেতন থেকে নিয়মিতই অবসর ভাতা ও কল্যাণ ফান্ডে টাকা জমা থাকে। তাই অবসরে যাওয়ার পর শিক্ষকরা যেন সময়মতো পাওনা পান তা নিশ্চিত করা উচিত।’

এ বিষয়ে আগৈলঝাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার লিখন বণিক বলেন, ‘বিষয়টি আগে জানতাম না। এখনই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করব।’