বিভিন্ন মৌসুমে ফসল কাটা-মাড়াইয়ের সময় আঞ্চলিক সড়কগুলোর বিভিন্ন স্থানে বিশেষ করে যেখানে সূর্যের আলো বেশি থাকে এমন স্থানে ধান, খড়, ভুট্টাসহ অন্য ফসল শুকানো হয়। চলতি আমন মৌসুমে বিভিন্ন উপজেলার পাকা-কাঁচা সড়কগুলো ধান ও খড় শুকানোর চাতালে পরিণত হয়েছে। তেমনি মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে বিভিন্ন কাঁচা-পাকা সড়ক দখল করে ধান ও খড় শুকাচ্ছেন স্থানীয় কৃষাণ-কৃষাণীরা। এতে সড়কে ছড়িয়ে পড়ছে খড়, ধানের তুষ ও ধুলাবালি। যানবাহনচালকদের দাবি, শুকনো বা ভেজা খড়ের ওপর দিয়ে গাড়ি চালাতে গিয়ে যেকোনো সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ধান কাটার পর ধান শুকাতে ও অবশিষ্ট খড় মাঠ থেকে সংগ্রহ করে রোদে শুকানোর প্রয়োজন হয়, যাতে তাতে লেগে থাকা ধান সহজে খসে পড়ে এবং সংরক্ষণযোগ্য হয়। গ্রামে সাধারণত খোলা জায়গার অভাবে কৃষকেরা পাকা সড়কে এই কাজের জন্য ব্যবহার করেন। কারণ, রাস্তায় রোদ সরাসরি পড়ে এবং সমতল থাকার কারণে খড় সহজে শুকিয়ে যায়। কিন্তু সড়ক ব্যবহার করার ফলে একদিকে যেমন যান চলাচলে বিঘœ ঘটে, অন্যদিকে দেখা দেয় গুরুতর দুর্ঘটনার ঝুঁকি।
গতকাল রোববার সরেজমিনে উপজেলার কয়েকটি এলাকায় দেখা গেছে, চলতি আমন মৌসুমের ধান ও অন্য ফসল কাটা-মাড়াই চলছে। মাড়াইকৃত ধান বা খড় পাশের সড়কের শুকাতে দেওয়া হয়েছে। এতে ট্রাক, মিনিবাস, মোটরসাইকেল, রিকশাভ্যান ও ইজিবাইক চালকদের বাড়তি ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে।
একাধিক যানবাহনের চালক আক্ষেপ করে বলেন, সড়কে ধান শুকানোর প্রবণতা প্রতি বছরই বাড়ছে। খড় শুকানো অবস্থায় রাস্তার ওপর ছড়িয়ে থাকে। যানবাহন খড়ের ওপর দিয়ে চললে চাকা হঠাৎ করে স্লিপ করতে পারে, বিশেষ করে ব্রেক করার সময়। দুই চাকা যানবাহনের জন্য এটা সবচেয়ে বিপজ্জনক। অনেক সময় হঠাৎ গতি কমাতে গিয়ে গাড়ি উল্টে যায়, ঘটে বড় দুর্ঘটনা।
উপজেলার ঝিটকা শিকদারপাড়া এলাকার বাসিন্দা মো. আইয়ুব আলী বলেন, স্থানীয় সড়কের বেশকিছু স্থানে ধান ও খড়ের স্তূপ থাকে, তাহলে তো আমাদের সমস্যা। হর্ন দিলেও শোনে না, হুট করে রাস্তা পারাপার হয়। অনেকে তো সড়ককে ধান ও ভুট্টা শুকানোর চাতালের মতো করে ব্যবহার করতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হন।
মোটরসাইকেল চালক নিরব খান বলেন, প্রতিদিনই খড় লম্বা এবং নরম হওয়ায় মোটরসাইকেলের চেইন ও চাকার সঙ্গে পেঁচিয়ে যায়। এতে হঠাৎ নিয়ন্ত্রণ হারানোর মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়। আবার ধুলাবালি উড়ে এসে চোখে পড়ে। প্রশাসনের হস্তক্ষেপ না করলে সড়কে ধান-খড় শুকানের এই সমস্যা সমাধান সম্ভব নয়।
অন্যদিকে স্থানীয় কৃষাণ-কৃষাণীরা বলছেন, বাড়িতে ধান শুকানোর পর্যাপ্ত জায়গা নেই। পাকা কোনো জায়গা পাওয়া যায় না। সড়কে রোদ ভালো পাওয়া যায় এবং দ্রুত শুকায়। তাছাড়া গাড়ির চাকার চাপেও ধান মাড়াইয়ে সুবিধা হয় বলে দাবি তাদের।
সড়কে ধান শুকানো এক কৃষক নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বলেন, বাড়িতে ধান মাড়াইয়ের পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় এ সময়টাতে অনেকটা বাধ্য হয়ে সড়কে ধান-খড় শুকাতে হচ্ছে। অনেকে বকাবকি করলেও অনেক সময় কিছু করার থাকে না।
সচেতন মহল বলছেন, ধান-খড় শুকানো কৃষকের মৌলিক কাজ। তবে সড়কে খড় ছড়িয়ে দিয়ে তা শুকানোর ফলে যে জীবনহানির মতো দুর্ঘটনা ঘটছে, তা কোনোভাবেই উপেক্ষা করা যায় না। একটি জীবনও মূল্যবান। কৃষিকাজ ও জননিরাপত্তার মাঝে ভারসাম্য রক্ষা করতে যথাযথ পরিকল্পনা, সচেতনতা ও প্রশাসনিক তৎপরতা প্রয়োজন।
এ বিষয়ে হরিরামপুর থানার ওসি মো. মুজিবুর রহমান বলেন, সড়কে ধান-খড় শুকানোর বিষয়ে কৃষকদের নিয়মিত সচেতন করা হচ্ছে। এরপরও সমাধান না হলে জনস্বার্থে অভিযান পরিচালনা ও আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

