*** রাজশাহীর পুঠিয়া
*** অল্প পরিশ্রম, কম খরচ বেশি লাভ হওয়ায় চাষে ঝুঁকছেন স্থানীয় কৃষকরা
*** শিক্ষিত তরুণরাও এখন যুক্ত হচ্ছেন কলা চাষে
উত্তরবঙ্গের সুমিষ্ট আমের জন্য খ্যাত রাজশাহীর পুঠিয়া এখন কলা চাষেও এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। অল্প পরিশ্রম, কম খরচ আর তুলনামূলক বেশি লাভজনক হওয়ায় এ অঞ্চলের কৃষকরা দিনদিন কলা চাষে ঝুঁকছেন। ফলে কলা চাষ এখন শুধু কৃষিকাজ নয়, অনেকের কাছে এটি হয়ে উঠেছে অর্থনৈতিক মুক্তির পথ।
পুঠিয়ার বিভিন্ন ইউনিয়নের মাঠজুড়ে এখন দেখা যাচ্ছে চাপা কলা, অনুপম কলা, সাগর কলা, রঙিন সাগর, জ্বিন ও আনাজী কলার চাষ। কলা চাষে কৃষকদের আগ্রহ ও সরকারি সহযোগিতায় দিনদিন বাড়ছে ফলন ও আয়। শিক্ষিত তরুণরাও এখন বেকারত্বের বিকল্প হিসেবে কলা চাষে যুক্ত হচ্ছেন।
পুঠিয়ার বানেশ্বর ও ঝলমলিয়া-এই দুই বড় কলার হাটে সপ্তাহে চারদিন বেচাকেনা হয় প্রায় ৪৫-৫০ হাজার কাদি কলা। হাটের ইজারাদার জাক্কার ও শরিফুল জানান, এসব কলা স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন শহরে সরবরাহ করা হয়। স্থানীয় অর্থনীতিতে কলা এখন অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক পণ্য হিসেবে ভূমিকা রাখছে। বিশেষ করে চাপা কলা, অনুপম, সাগর ও রঙিন সাগর কলা এই অঞ্চলে ব্যাপক চাষ হচ্ছে। স্থানীয় কৃষক থেকে শুরু করে শিক্ষিত তরুণরাও এখন কলা চাষে যুক্ত হচ্ছেন।
বেকার যুবক ইউসুফ আলী অন্যের সাত বিঘা জমি লিজ নিয়ে কলা চাষ করে এখন স্বাবলম্বী। বানেশ্বর হাটের পাইকারি ব্যবসায়ী আলাউদ্দিন জানান, এ বছর কলা আমদানি ও বিক্রি দুটোই বেড়েছে, ফলে ব্যবসাতেও লাভ হচ্ছে।
বানেশ্বর ইউনিয়নের বালিয়াঘাটি গ্রামের সহকারী অধ্যাপক নুরুল হুদা জানান, ‘এ বছর সাত বিঘা জমিতে রঙিন সাগর কলা চাষ করেছি। পাইকাররা জমি থেকেই কলা নিয়ে গেছে, এতে প্রায় ১৪ লাখ টাকা আয় হয়েছে।’
বানেশ্বর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আলমগীর হোসেন জানান, তিনি তিন বিঘা জমিতে রঙিন সাগর কলা চাষ করে প্রায় পাঁচ লাখ টাকা আয় করেছেন। অন্যদিকে বিরালদহ হাতিনাজা গ্রামের বেকার যুবক ইউসুফ আলী বলেন, তিনি অন্যের সাত বিঘা জমি লিজ নিয়ে পাঁচ বিঘাতে সাগর কলা চাষ করে এখন স্বাবলম্বী হয়েছেন।
বানেশ্বর হাটের পাইকারি ব্যবসায়ী আলাউদ্দিন বলেন, ‘এবার কলার আমদানি গত বছরের তুলনায় বেশি হওয়ায় বিক্রি ও লাভ দুটোই ভালো হয়েছে।’
কৃষক ইউসুফ জানান, এক বিঘা জমিতে কলা চাষে খরচ হয় ৩৫-৫০ হাজার টাকা (নিজস্ব জমি হলে), আর লিজকৃত জমিতে ৮০ হাজার টাকার মতো। সেখানে থেকে লাভ থাকে প্রায় ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ ১০-২০ হাজার টাকা। তিনি আরও বলেন, অন্যান্য ফসলের তুলনায় কলা চাষে শারীরিক পরিশ্রম কম ও লেবার খরচ কম, তাই এটি অধিক লাভজনক।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা স্মৃতি রানী দাস জানান, এ বছর প্রায় ৮০০ হেক্টর জমিতে কলার চাষ হয়েছে। উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের তত্ত্বাবধানে ভালো ফলন হয়েছে এবং দামও ভালো থাকায় কৃষকরা সন্তুষ্টি প্রকাশ করছেন। এই কলা বাণিজ্য পুঠিয়ার স্থানীয় অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখছে বলে মনে করছেন কৃষি কর্মকর্তারা। কলা চাষের এই ইতিবাচক ধারা অব্যাহত থাকলে অচিরেই পুঠিয়া ‘কলার জেলা’ হিসেবেও পরিচিতি পাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন স্থানীয় কৃষিবিদরা। পুঠিয়ার বিভিন্ন এলাকায় চাপা কলা, অনুপম কলা, সাগর কলা, জ্বিন কলা, আনাজী কলাসহ নানা জাতের কলার চাষ দেখা যাচ্ছে। কৃষি বিশেষজ্ঞদের মতে, মাটি ও জলবায়ু অনুকূল থাকায় পুঠিয়া কলা চাষের জন্য সম্ভাবনাময় অঞ্চল হয়ে উঠছে। এই অগ্রগতি পুঠিয়ার কৃষি ও অর্থনীতিতে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ সাফল্য পুঠিয়াকে কলা উৎপাদনে দেশের অন্যতম সম্ভাবনাময় অঞ্চলে রূপান্তরিত করছে। কৃষিবিদরা মনে করছেন, এই ধারা অব্যাহত থাকলে পুঠিয়া অচিরেই পরিচিতি পাবে ‘কলার রাজ্য’ হিসেবে।

