দলীয় ঐক্যে নির্ভর করে নির্বাচনি বৈতরণী পার হতে চায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। এ জন্য সমমনা দলগুলোকে পাশে রাখতে চায় জামায়াত। নিজেদের মধ্যে আসন ভাগাভাগি নিয়ে যাতে কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি না হয় সে কারণে আগেভাগে চট্টগ্রামের ১৬ আসনে চূড়ান্ত প্রার্থী ঘোষণা করেছে শরিয়াহভিত্তিক শাসনব্যবস্থায় রাষ্ট্র চালানোর ঘোষণা দেওয়া ইসলামি এই দলটি। প্রকাশ্যে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিএনপির সাথে বিরোধিতা করলেও নির্বাচনি ফুলসিরাত পার হতে আসন ভাগাভাগিতে আপত্তি নেই দলের নীতিনির্ধারকদের। একাধিক সূত্রের দাবি, ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনে নির্বাচিত সংসদে প্রধান বিরোধী দল হিসেবে নিজেদের অবস্থান পাকাপোক্ত করতে চায় জামায়াত। জামায়াতের একাধিক নেতা বিভিন্ন গণমাধ্যমে চট্টগ্রামের ১৬ আসনের মধ্যে ১০টি আসনে নিজেদের প্রার্থীকে জয়ী করার সম্ভাবনার কথা জানালেও বিশ্লেষকরা বলছেন, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে চট্টগ্রামের ১৬ আসনের মধ্যে সাতকানিয়া ও বাঁশখালিÑ এই দুটি আসনে জামায়াতের প্রার্থীর জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে; বাকি ১৪টি আসনেই জয়ী হতে পারে বিএনপি এবং শরিক দলগুলো।
চলতি বছর ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে চট্টগ্রামের ১৬ আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। ত্রয়োদশ নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী ঘোষিত প্রার্থীরা হলেন: চট্টগ্রাম-১ (মীরসরাই) আসনে অ্যাডভোকেট সাইফুর রহমান, চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) অধ্যক্ষ নুরুল আমিন, চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ) আলাউদ্দিন শিকদার, চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকু-) আনোয়ারুল সিদ্দিকী, চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) ইঞ্জিনিয়ার সিরাজুল ইসলাম, চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) শাহজাহান মঞ্জুর, চট্টগ্রাম-৭ (রাঙ্গুনিয়া) অধ্যক্ষ আমিরুজ্জামান, চট্টগ্রাম-৮ (চান্দগাঁও-বোয়ালখালী) ডা. আবু নাসের, চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালি-বাকলিয়া) ডা. ফজলুল হক, চট্টগ্রাম-১০ (খুলশী-পাহাড়তলী-হালিশহর) অধ্যক্ষ শামসুজ্জামান হেলালী, চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) শফিউল আলম, চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) ইঞ্জিনিয়ার লোকমান, চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা-কর্ণফুলী) অধ্যাপক মাহমুদুল হাসান, চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ) ডা. শাহাদৎ হোসাইন, চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) শাহজাহান চৌধুরী এবং চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনে জহিরুল ইসলাম।
চট্টগ্রাম জামায়াতের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে মনে করেন দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। সূত্রের দাবি, চট্টগ্রামের ১৬টি আসনের মধ্যে ৭টি আসনে দলীয় প্রার্থীর অবস্থান নিশ্চিত করতে মাঠপর্যায়ে কাজ করছেন তারা। যদিও সেসব আসনে বিএনপির শক্তিশালী সম্ভাব্য প্রার্থী রয়েছেন। জামায়াতের স্থানীয় পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চট্টগ্রাম-১, চট্টগ্রাম-৩, চট্টগ্রাম-৪, চট্টগ্রাম-৮, চট্টগ্রাম-৯, চট্টগ্রাম-১০, চট্টগ্রাম-১২ ইঞ্জিনিয়ার লোকমান, চট্টগ্রাম-১৩, চট্টগ্রাম-১৫ ও চট্টগ্রাম-১৬ আসনগুলো নিয়ে আশাবাদী তারা।
চট্টগ্রামের ১৬টি সংসদীয় আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণার পর দল গোছানোর পাশাপাশি নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে জামায়াত। দলের গ্রিন সিগন্যালে মাঠে নেমেছেন তারা। নিজ নিজ নির্বাচনি এলাকায় বাড়িয়েছেন যোগাযোগ। জামায়াতের নেতারা বলছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে বিগত দিনে যে তিনটি সংসদ নির্বাচন হয়েছে, তাতে জনগণ ভোট দিতে পারেনি। আগামী নির্বাচন হবে অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে। অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর বিশ^াস রেখেই নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি।
চট্টগ্রাম মহানগরী জামায়াতের সাবেক আমির ও সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ শাহজাহান চৌধুরী জানান, চট্টগ্রাম-৮ আসনসহ চট্টগ্রামের ১৬ আসনে আমাদের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় চট্টগ্রামে জামায়াতের ভোটবিপ্লব হবে ইনশাআল্লাহ। তিনি আরও বলেন, ফ্যাসিবাদ আওয়ামী সরকারকে হটাতে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার সাথে জামায়াতের নেতাকর্মীদের ভূমিকা ছিল সবচেয়ে বেশি। তিনি আরও বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে নিরপেক্ষ থেকে বিচার ও সংস্কার নিশ্চিত করে নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে হবে। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে ত্রয়োদশ সংসদে নেতৃত্ব দিবে জামায়াত। যোগ করেন তিনি।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) আসনে জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী শফিউল আলম বলেন, আমাদের দলের নেতাকর্মীরা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত। ইতোমধ্যে সবাই কাজ করা শুরু করেছে। গণসংযোগ করছে। ভোটারের ঘরে ঘরে যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, আমি আমার এলাকায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর ছিলাম। এলাকার উন্নয়নে অনেক কাজ করেছি। তৃণমূলের সঙ্গে আমার যোগাযোগ ভালো। আশা করি, জাতীয় নির্বাচনেও ভালো ফল করতে পারব।
তথ্যসূত্র বলছে, চট্টগ্রাম-১ আসনের প্রার্থী অ্যাডভোকেট সাইফুর রহমান ছাত্রশিবিরের চট্টগ্রাম মহানগরের সাবেক সভাপতি, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সহ-সম্পাদক। চট্টগ্রাম-২ আসনের প্রার্থী অধ্যক্ষ নুরুল আমিন ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক ও মহানগর জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি। চট্টগ্রাম-৩ আসনের প্রার্থী আলাউদ্দিন শিকদার উত্তর জেলা জামায়াতের আমির। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা শিবিরের সাবেক সভাপতি। চট্টগ্রাম-৪ আসনের প্রার্থী আনোয়ারুল সিদ্দিকী উত্তর জেলা জামায়াতের সাংগঠনিক সম্পাদক ও আন্তর্জাতিক ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য। চট্টগ্রাম-৫ আসনে প্রার্থী হাটহাজারী উপজেলা জামায়াতের আমির ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা ইঞ্জিনিয়ার সিরাজুল ইসলাম। চট্টগ্রাম-৬ আসনে প্রার্থী হয়েছেন শাহজাহান মঞ্জু; তিনি রাউজান উপজেলা জামায়াতের আমির। চট্টগ্রাম-৭ আসনের প্রার্থী উত্তর জেলা জামায়াতের সাবেক আমির অধ্যক্ষ আমিরুজ্জামান। তিনি আন্তর্জাতিক ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্ট্রির সদস্য। চট্টগ্রাম-৮ আসনের প্রার্থী চিকিৎসক নেতা বিএমএ’র শীর্ষ নেতা ডা. আবু নাসের। চট্টগ্রাম-৯ আসনের প্রার্থী ডা. একেএম ফজলুল হক নগর জামায়াতের সাংগঠনিক সম্পাদক। তিনি চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন হসপিটালের ম্যানেজিং ডিরেক্টর। চট্টগ্রাম-১০ আসনে প্রার্থী অধ্যক্ষ শামসুজ্জামান হেলালী চসিকের সাবেক কাউন্সিলর। তিনি বর্তমানে নগর জামায়াতের সাংগঠনিক সম্পাদক। চট্টগ্রাম-১১ আসনের প্রার্থী সিটি করপোরেশনের ৩৭ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর শফিউল আলম। চট্টগ্রাম-১২ আসনের প্রার্থী এপিক গ্রুপের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার লোকমান। ইঞ্জিনিয়ার লোকমান কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশনের সাবেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। চট্টগ্রাম-১৩ আসনের প্রার্থী দক্ষিণ জেলা জামায়াতের সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক মাহমুদুল হাসান। দক্ষিণ জেলা জামায়াতের সাংগঠনিক সম্পাদক। চট্টগ্রাম-১৪ আসনের প্রার্থী চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ চন্দনাইশ সমিতি-চট্টগ্রামের সাবেক সভাপতি ডা. শাহাদৎ হোসাইন। চট্টগ্রাম-১৫ আসনের প্রার্থী মহানগর জামায়াতের সাবেক আমির সাবেক এমপি ও হুইপ শাহজাহান চৌধুরী। চট্টগ্রাম-১৬ আসনের প্রার্থী বাঁশখালী উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান মাওলানা জহিরুল ইসলাম।