ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই, ২০২৫

ভেঙে ফেলা ভবনটি সত্যজিৎ রায়ের বাড়ি নয়: জেলা প্রশাসক

নিজস্ব প্রতিবেদক, ময়মনসিংহ
প্রকাশিত: জুলাই ১৭, ২০২৫, ০১:২০ এএম
বিশিষ্টজনদের সঙ্গে জরুরি সভায় জেলা প্রশাসক মো. মুফিদুল আলম। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

ময়মনসিংহ মহানগরীর হরিকিশোর রায় রোডের জমিদার আমলের শতবর্ষী শিশু একাডেমির ভেঙে ফেলা ভবনটি বিশিষ্ট নাট্যকার ও চলচ্চিত্র নির্মাতা সত্যজিৎ রায়ের বা তার পূর্বপুরুষের বাড়ি নয়। কিন্তু একটি গোষ্ঠী দেশের সুনাম ক্ষুন্ন করার জন্য অপপ্রচার করছে বলে জানিয়েছেন ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক মো. মুফিদুল আলম।
 
বুধবার (১৬ জুলাই) বিকালে ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এ ঘটনায় উদ্ভুত পরিস্থিতিতে বিশিষ্টজনদের সঙ্গে জেলা প্রশাসনের এক জরুরি সভা শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেন তিনি।

জেলা প্রশাসক মো. মুফিদুল আলম বলেন, শিশু একাডেমির যে ভবনটি সত্যজিৎ রায়ের বাড়ি বলে দাবি করা হচ্ছে, মূলত তা সত্যজিৎ রায়ের বাড়ি নয়। প্রথমত সংশ্লিষ্ট সকল খতিয়ান এবং রেকর্ডপত্র যাচাই করেছি, সিএস, আরএসসহ সকল খতিয়ানে কোনভাবেই সত্যজিৎ রায় বা তার পরিবারের নাম নেই। আরএস রেকর্ডে এটি বাংলাদেশ সরকারের নামে লিপিবদ্ধ। 

তিনি বলেন, ২০০৮ সালে এটি বাংলাদেশ মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ শিশু একাডেমির নামে এটি বন্দোবস্ত করা হয়েছে এবং তাদের নামে জমির দলিল বন্দোবস্ত করা হয়েছে, এর খতিয়ান আছে। এরপর তারা যথাযথ প্রক্রিয়ায় মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে এই ভবনটি ভাঙ্গার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। সেক্ষেত্রে তারা কোন নিয়মের ব্যত্যয় ঘটাননি। 

জেলা প্রশাসক বলেন, এই ভবনটি সত্যজিৎ রায়ের বাড়ি ছিল কী না এবং তার পূর্বপুরুষের বাড়ি ছিল কী না? সে বিষয়ে আমরা নগরীর গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা কঠোরচিত্তে বলেছেন যে এটি কখনো সত্যজিৎ রায়ের বাড়ি ছিল না। ইচ্ছাকৃতভাবে একটি মিথ্যা তথ্য দিয়ে আমাদের দেশের ভাবমূতি ক্ষুন্ন করার জন্য এই তথ্যগুলো ছড়ানো হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে এটি সত্যজিৎ রায় বা তার পূর্বপুরুষদের বাড়ি না বা তারা কখনো এই বাড়িতে ছিলেন না। তারা যে বাড়িটিতে থাকতেন সেটি পূর্নলক্ষী নামক পাশের একটি বাড়ি। তারা (বিশিষ্টজনরা) সে বাড়িটি চিনেন। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ বা অন্য কেউ চাইলে তারা সেই বাড়িটি দেখিয়ে দিতে পারবেন। 
 
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব প্রফেসর বিমল কান্তি দে, স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত নাট্যকার ও কথা সাহিত্যিক ফরিদ আহাম্মেদ দুলাল, বিশিষ্ট শিক্ষক ও ঐতিহাসিক স্থাপত্যের ইতিহাস সংরক্ষক স্বপন ধর, বাংলাদেশ শিশু একাডেমির অতিরিক্ত সচিব শিউলী রহমান তিন্নীসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাবৃন্দ।    

এর আগে, মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) ময়মনসিংহ নগরীর হরিকিশোর রায় রোডের শিশু একাডেমির এই ভবনটি ভাঙ্গা হলে এটি ভারতীয় বিশিষ্ট নাট্যকার ও চলচ্চিত্র নির্মাতা সত্যজিৎ রায়ের বাড়ি বলে একাধিক শীর্ষ সারির সংবাদ মাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ময়মনসিংহ সিটি গ্রুপ নামক একটি পেজ থেকে এই খবরটি প্রচার করা হয়।  

 

প্রসঙ্গত, ঘটনাটি সংবাদ মাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পরার পর ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মূখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা সত্যজিৎ রায়ের পূর্বপুরুষদের স্মৃতিবিজরিত বাড়িটি বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ ভেঙ্গে ফেলছে। বাংলাদেশ সরকারকে এ সিদ্ধান্ত পুর্নবিবেচনার আহবান জানান তিনি। এ সংক্রান্ত একটি খবর ভারতীয় এনডিটিভিতে প্রচারের পর বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক তোলপাড়ের সৃষ্টি হয়।