ঢাকা শুক্রবার, ০৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ইংল্যান্ডের প্রথম মুসলিম ফুটবলার হচ্ছেন স্পেন্স

স্পোর্টস ডেস্ক
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৫, ২০২৫, ০৭:১৯ এএম
স্পেন্স

ইংল্যান্ডের প্রথম মুসলিম ফুটবলার হিসেবে ইতিহাস গড়ার দুয়ারে দাঁড়িয়ে আছেন জেড স্পেন্স। বিশ^কাপ বাছাইপর্বের ম্যাচ সামনে রেখে ইংল্যান্ড দলে ডাক পেয়েছেন এই ডিফেন্ডার। তবে কোচ টমাস টুখেলের সঙ্গে আগে কখনো সাক্ষাৎ হয়নি তার। দলে জায়গা পাওয়ার রোমাঞ্চের পাশাপাশি ইংল্যান্ডের প্রথম প্রকাশ্য মুসলিম ফুটবলার হিসেবে ইতিহাসের পাতায় নাম তুলতে যাচ্ছেন টটেনহ্যামে খেলা ২৫ বছর বয়সি স্পেন্স। এর আগে ২০২২ সালে ইংল্যান্ডের অনূর্ধ্ব-২১ দলে সুযোগ পেয়েছিলেন এই ফুটবলার। এবার জাতীয় দলের হয়ে অ্যান্ডোর ও সার্বিয়ার বিপক্ষে বিশ^কাপ বাছাইয়ে নামার অপেক্ষায় এই ডিফেন্ডার।

ইংল্যান্ডের প্রথম প্রকাশ্য মুসলিম ফুটবলার হতে পেরে অনেক বেশি রোমাঞ্চিত স্পেন্স। লন্ডনে বেড়ে ওঠা এই ফুটবলারের মা কেনিয়ান আর বাবা জ্যামাইকান। তার বড় বোন কার্লা-সিমোন স্পেন্স বেশ জনপ্রিয় অভিনেত্রী। স্পেন্স বলেন, ‘খবরটি দেখেছি আমি। এটা একটা আশীর্বাদ। এটা অসাধারণ ব্যাপার। আমি জানার পর খুবই অবাক হয়েছিÑ আমিই প্রথম! দারুণ ব্যাপার, ভাষা হারিয়ে ফেলেছি সত্যি বলতে।’ নতুন ইতিহাস গড়ার ম্যাচের আগে চাপ অনুভব হচ্ছে কি না? স্পেন্স বলেন, ‘এমনিতে নির্দিষ্ট কিছু নিয়ে আমি চাপ অনুভব করি না। স্রেফ মুখে এক টুকরো হাসি নিয়ে ফুটবল খেলি, খুশি থাকি। বাকিটুকু নিজস্ব গতিতেই চলে।’ ধর্মের প্রতি অনুরাগের ব্যাপারটি নিয়ে কোনো লুকোছাপা নেই স্পেন্সের। বরং এটা নিয়ে কথা বলতে ভালোবাসেন, সামাজিক মাধ্যমেও নিয়মিত তা তুলে ধরেন। স্রষ্টার প্রতি অগাধ আস্থার কথা জানালেন জাতীয় দলে ডাক পাওয়ার পরও। স্পেন্স বলেন, ‘প্রথম ব্যাপার হলো, আল্লাহই সর্বশক্তিমান। আমি অনেক প্রার্থনা করি, আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি।

জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময়ে, সবচেয়ে অন্ধকার সময়ে, সব সময় বিশ্বাস করেছি আল্লাহ আমার পাশে আছেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘যখন আমি জিতে চলেছি, খুব ভালো সময়ে আছি, তখনো আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকি, কারণ তিনি সব সময় আমার পাশে থাকেন। আমার বিশ^াস আমার কাছে অনেক বড় ব্যাপার।’ কঠিন সময় স্পেন্সের জীবনে অনেক এসেছে বটে। ফুটবল ক্যারিয়ারের বেশির ভাগটুকুই তো কেটেছে নানা ক্লাবে ধারে খেলে। ফুলহ্যামের একাডেমি থেকে উঠে এসে পেশাদার ফুটবলে তার বিচরণ শুরু ২০১৮ সালে মিডলসব্রার হয়ে। উত্তর ইয়র্কশায়ারের ক্লাবটির হয়ে তার অভিষেক হয় ওই বছর। তবে দলে জায়গা পাকা করতে পারেননি লম্বা সময়ে। ২০২১ সালে তাকে ধারে পাঠানো হয় নটিংহ্যাম ফরেস্টে। সেখানে দ্বিতীয় স্তরে দুর্দান্ত পারফর্ম করে বড় ভূমিকা রাখেন নটিংহ্যামের প্রিমিয়ার লিগে উঠে উন্নীত হওয়ায়। সেই মৌসুমের পারফরম্যান্সে বেশ কটি বড় ক্লাবের নজরে পড়েন তিনি। শেষ পর্যন্ত ২০২২ সালে ২ কোটি পাউন্ডে তাকে পাঁচ বছরের চুক্তিতে দলে নেয় টটেনহ্যাম হটস্পার। এত বড় ক্লাবে সুযোগ পেয়ে যখন তিনি উচ্ছ্বাসে ভাসছিলেন, আচমকাই ভূপাতিত হয়ে পড়েন কোচের মন্তব্যে। সেই সময়ের কোচ আন্তনিও কন্তে প্রকাশ্যেই বলে বসেন, ‘তাকে আমি দলে নিইনি। এটা ক্লাবের সিদ্ধান্ত, ক্লাবের বিনিয়োগ।’ পেছন ফিরে তাকিয়ে স্পেন্স বললেন, সেই সময়টা ছিল তার জীবনের কঠিনতম অধ্যায়। তবে তিনি ভেঙে পড়েননি তাতে।

স্পেন্স বলেন, ‘তখন খুবই ভালো খেলছিলাম আমি, নটিংহ্যাম ফরেস্টের হয়ে দারুণ খেলে (প্রিমিয়ারে) উন্নীত হলাম। খুশিতে উড়ছিলাম যে টটেনহ্যামে যোগ দিচ্ছি। এরপর এরকম একটি মন্তব্য শোনা ভালো কিছু ছিল না। এসবে আত্মবিশ^াস কিছুটা ভেঙে যায় বটে।’ তিনি আরও বলেন, ‘তবে আমি একজন যোদ্ধা। যা কিছুই করি, সবকিছুতে নিজের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করি।’ যেভাবে লড়াই করে এতটা পথ ছুটে এসেছেন স্পেন্স, নিজেকে তিনি এখন মনে করেন অনেকের জন্যই অনুপ্রেরণার। স্পেন্স বলেন, ‘আমি যদি এটা করতে পারি, তুমিও পারবে। শুধু মুসলিম হিসেবে নয়, যে কোনো বিশ্বাসের অনুসারী হিসেবে। স্রেফ এটা মাথায় রাখো যে, আমি করতে পারি।’