পল্টন হ্যান্ডবল স্টেডিয়ামে গত রবিবার শুরু হয়েছে ভিসতা ১৩তম জাতীয় সার্ভিসেস কুস্তি। এই প্রতিযোগিতায় ৬৮ কেজি ওজন শ্রেণিতে আনসারের কাজলকে হারিয়ে সোনা জিতেছেন বাংলাদেশ পুলিশের হালিমা। নেত্রকোনার তরুণী হতে চেয়েছিলেন পুলিশ। হালিমা তার স্বপ্ন পূরণের গল্প শোনালেন। তিনি বলেন, ‘যখন ক্লাস টুয়ে পড়ি, এক ম্যাডাম জিজ্ঞাসা করেন বড় হয়ে তুমি কী হতে চাও? আমি বলেছিলাম, পুলিশ হতে চাই। ঘটনাচক্রে আমার ভাই বিয়ে করেন একজন পুলিশকে। ভাবি আমার স্বপ্ন সফল করতে সহযোগিতা করেন। শেষ পর্যন্ত ২০১৮ সালে আমি পুলিশে চাকরি পাই।’ স্কুলে পড়ার সময় কুস্তি দূরে থাক, অন্য কোনো খেলায় অংশ নেননি হালিমা। অথচ পুলিশে যোগ দেওয়ার পর ব্যাচমেট হাবিবা আক্তারের উৎসাহে কুস্তিতে আসেন, ‘কীভাবে কুস্তি লড়তে হয় শুরুতে কিছুই জানতাম না।
আমার পুলিশের ব্যাচমেট হাবিবার আগ্রহেই কুস্তিতে আসি।’ হালিমা কুস্তিতে যোগ দেওয়ার পর এ পর্যন্ত তিনবার জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপের আয়োজন করেছে ফেডারেশন। এর মধ্যে শুধু প্রথমবার জিততে পারেননি হালিমা। বাকি দুবার সোনা জিতেছেন। হয়েছেন সেরা খেলোয়াড়। অথচ ক্যারিয়ারের শুরুতে কুস্তি খেলতে গিয়ে বিশাল ইনজুরিতে পড়েন তিনি। ভেঙে যায় হালিমার কাঁধের হাড়। সেই দুঃখের স্মৃতি মনে করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ গেমসের আগে কপাল খারাপ ছিল আমার। ফাইনালে কলার বোন (কাঁধের হাড়) ভেঙে যায়। তবে চার মাসের মাথায় সুস্থ হয়ে আরেকটি প্রতিযোগিতায় সেরা খেলোয়াড় হই। সোনাও জিতি।’ পারফরম্যান্সের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২১ সালে তুরস্কে অনুষ্ঠিত ইসলামিক সলিডারিটি গেমসে ডাক পান হালিমা। মেয়ে মানুষ কুস্তি লড়বেÑ এটা পরিবারের কেউ মানতে চায়নি। হালিমা বলেন, ‘শুরুতে পরিবারের সমর্থন ছিল না। এরপর কলার বোন ভাঙলে পরিবার থেকে খেলা ছাড়তে চাপ দিতে থাকে। কুস্তি লড়ি বলে গ্রামে ও সমাজেও কেউ ভালো চোখে দেখত না। বলত, মেয়েরা কেন কুস্তি লড়বে? কিন্তু আমার রক্তে মিশে গেছে কুস্তি।
কুস্তি লড়তে গিয়ে দাঁত ভেঙেছি।’ তবে প্রাইমারি স্কুল শিক্ষক বাবা আবদুল মালেক মাস্টারকে বুঝিয়ে নিয়মিত খেলায় অংশ নিচ্ছেন হালিমা। তিনি কুস্তির প্রথম প্যাঁচ শেখেন গুরু আশরাফ আলীর কাছে। বর্তমানে এসএ গেমসের ক্যাম্পে সাবেক খেলোয়াড় ও কোচ শিরিন আক্তারের অধীনে অনুশীলন করছেন। কুস্তি নিয়ে বলিউডে তৈরি হয়েছে বিখ্যাত সিনেমা সুলতান। আলাপের একপর্যায়ে ওঠে সেই প্রসঙ্গ। এ নিয়ে প্রশ্ন করতেই হেসে উত্তর দেন হালিমা, ‘শুরুতে সুলতান মুভির বিষয়ে কিছু জানতাম না।
তবে ভারতে ক্যাম্প করার সময় কুস্তির ওপর তৈরি সুলতান সিনেমাটা চারবার দেখেছি।’ সিনেমার শেষ দৃশ্যে চ্যাম্পিয়ন সালমান খান কোচকে আবেগে জড়িয়ে ধরেন। এক দিন সেভাবেই উদযাপন করার স্বপ্ন হালিমার, ‘এই সিনেমার সবচেয়ে আবেগের দৃশ্য ফাইনাল জেতার পর। তখন সালমান খান যেভাবে কোচকে জড়িয়ে ধরেন, ওটা আমার মনে ধরেছে। আন্তর্জাতিক গেমসে সোনা জিতে আমিও এভাবে অ্যাপ্লাই করার চেষ্টা করব।’ প্রতিভা, পরিশ্রম ও অদম্য ইচ্ছাশক্তির মাধ্যমে একদিন জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক কুস্তিগীর হয়ে ওঠে সিনেমার সুলতান। বাস্তবের হালিমাও যেন সেই পথে হেঁটে যাওয়ার স্বপ্ন দেখেন।