এবার দ্বিতীয়বারের মতো আইসিসি নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপে খেলেছে বাংলাদেশ। আট দলের বিশ্বকাপে পয়েন্ট টেবিলে সপ্তম হয়েছে নিগার সুলতানা জ্যোতির দল। একটি জয় ও অপর একটি ম্যাচে পয়েন্ট ভাগাভাগি করেছে তারা। ৩ পয়েন্ট অর্জন করে বিশ্বকাপ মিশন শেষ হলো তাদের। অবশ্য ৩ পয়েন্ট অর্জন করেছে পাকিস্তান নারী দলও। নেট রান রেটের হিসাবে পেছনে থাকায় তাদের অবস্থান পয়েন্ট টেবিলের তলানিতে (৮ নম্বরে)। ২০২২ সালের ওয়ানডে বিশ^কাপ আসরে প্রথমবার অংশ নিয়েছিল বাংলাদেশ। সেবারও সপ্তম হয়েছিল তারা।
নারী বিশ্বকাপে এবার অন্তত দুটি ম্যাচে (পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা) জয়ের লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশের। পাকিস্তানকে হারিয়ে বিশ্বকাপে দারুণ সূচনা করলেও পরের ম্যাচগুলোতে শুধুই হতাশার গল্প রচনা করেছে লাল-সবুজের জার্সিধারীরা। ফলে লক্ষ্য পূরণ হয়নি তাদের। প্রাপ্তির ক্ষেত্রেও থাকল আক্ষেপ। সর্বশেষ ভারতের বিপক্ষে গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশের মেয়েরা। তবে ম্যাচটির ফল হয়নি। বৃষ্টিতে ভেসে যায় দুই দলের ম্যাচটি। অবশ্য তাতে অর্জনের পাল্লা কিছুটা ভারী হয়েছে বাংলাদেশের। কেননা, এই ম্যাচে হারতে বসেছিল তারা! জয়ের জন্য ১২৭ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে বিনা উইকেটে স্কোর বোর্ডে ৫৭ করে ফেলে ভারতের মেয়েরা। শেষ পর্যন্ত আবহাওয়ার কাছে হার মেনে এক পয়েন্ট নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে তাদের। আর পয়েন্ট টেবিলের তলানি থেকে উঠেছে বাংলাদেশও।
বিশ্বকাপে বাংলাদেশের অর্জনের ভান্ডার আরও বেশি সমৃদ্ধ হতে পারত। যদি না রেফারির বিতর্কিত সিদ্ধান্ত ও ব্যাটিংয়ে ধস না নামত। শ্রীলঙ্কার মাঠে পাকিস্তানকে ৭ উইকেটে হারিয়ে বিশ্বকাপে দুর্দান্ত সূচনা করে বাংলাদেশ। পেসার মারুফা আক্তার অসাধারণ বোলিং পারফরম্যান্স দেখান। দুটি ইনসুইঙ্গারে পাকিস্তানের দুই উইকেট তুলে নেন মারুফা। এ কারণে বিশ্বকাপে তাকে ঘিরে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। এরপর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশ ইতিহাস গড়ার পথে ছিল।
গুয়াহাটিতে অনুষ্ঠিত ম্যাচে আম্পায়ারের বিতর্কিত সিদ্ধান্তের কারণে ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়েন জ্যোতিরা। ইংলিশ ব্যাটার হিদার নাইট দুবার ক্যাচ দিয়েও আম্পায়ারের সিদ্ধান্তে বেঁচে যান। পরে সেই নাইটই ব্যাট হাতে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেন। এরপর বাংলাদেশ আরও দুটি ম্যাচ জয়ের খুব কাছে গিয়ে হেরেছে। বিশাখাপট্টনমে দক্ষিণ আফ্রিকা ও নাবি মুম্বাইয়ে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচে সম্ভাবনা জাগিয়েও হতাশ হয় লাল-সবুজের জার্সিধারীরা। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে মূলত ম্যাচ হাতছাড়া হয়েছে ক্যাচ মিসের কারণে। স্কোর বোর্ডে ২৩২ রান করা বাংলাদেশ দক্ষিণ আফ্রিকাকে চাপে ফেলার পর গুরুত্বপূর্ণ সময়ে দুটি ক্যাচ মিস করে। এর মধ্যে শেষ ৮ বলে যখন ৯ রান দরকার, তখন হাতের ক্যাচ ফেলে দেন স্বর্ণা। তার আগে সুমাইয়াও ছাড়েন একটি ক্যাচ। আর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জয় ফসকেছে ব্যাটিং ব্যর্থতায়। বিশ^কাপে বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের একটি ভালো দিক হচ্ছে ফিফটির আধিক্য। বাংলাদেশ দলের ব্যাটাররা হাফ সেঞ্চুরি করেছেন সাতটি, যা টুর্নামেন্টে তৃতীয় সর্বোচ্চ হাফ সেঞ্চুরির রেকর্ড। বাংলাদেশের চেয়ে বেশি ফিফটির ইনিংস খেলেছেন দক্ষিণ আফ্রিকা (১০) ও ভারতের (৯টি) ব্যাটাররা।
বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়ার আগে বাংলাদেশ নারী দলের কোচ সারওয়ার ইমরান বলেছিলেন, ‘আমাদের দুটি ম্যাচে ভালো সুযোগ আছে, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা। এ ছাড়া অন্যান্য দলের সঙ্গেও। আমরা কাউকে বড় করে দেখছি না। প্রতিটি ম্যাচই জেতার জন্য খেলব।’ অধিনায়ক নিগার সুলতানাও ভালো কিছুর আশা শুনিয়েছিলেন। তবে তার কণ্ঠে ছিল আক্ষেপের সুরও। গত এপ্রিলে পাকিস্তানের মাটিতে বিশ^কাপ বাছাই খেলেছিল বাংলাদেশের মেয়েরা। এরপর বিশ^কাপে যাওয়ার আগপর্যন্ত আর কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচই খেলেনি তারা। এমনকি ২০২৪ সালের শুরু থেকে অস্ট্রেলিয়া বাদে আর কোনো বড় দলের বিপক্ষেই খেলেননি জ্যোতিরা। বড় টুর্নামেন্টের জন্য যে ধরনের প্রস্তুতি দরকার, সেটির ঘাটতি ছিল। তবে ২০২২ আসরে প্রথমবার অংশ নিয়ে একটি জয় ছিল বলে এবার সেটি বাড়িয়ে নেওয়ার প্রত্যাশাই ছিল সবার। কিন্তু সেই প্রত্যাশা পূরণ হলো না।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন