এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বের ম্যাচে আজ জাতীয় স্টেডিয়ামে রাত ৮টায় মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ ও ভারত। চলতি বছর এটিই বাংলাদেশের শেষ ম্যাচ। এই ম্যাচটি জয় দিয়েই রাঙিয়ে দিতে চায় বাংলাদেশ। গতকাল ম্যাচ-পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে এমন প্রত্যাশার কথা জানিয়ে বাংলাদেশ অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া বলেন, ‘কালকের (আজ) ম্যাচে অনেক ফ্রি-কিক হবে, হলুদ কার্ড হবে, গালাগালি হবে। তবে আমি এটা স্বাভাবিক ম্যাচ হিসেবে ধরব। তবে এই ম্যাচের তাৎপর্য আমি জানি।’ জামাল আরও বলেন, ‘এটা অনেক আবেগপূর্ণ ম্যাচ হবে, হাই ভোল্টেজ ম্যাচ। এই ম্যাচের পর জাতীয় দলের জন্য অনেক লম্বা গ্যাপ আছে। বছরটা যদি জয় দিয়ে শেষ করতে পারি, তা শুধু আমাদের জন্য নয়, সমর্থক ও আপনাদের জন্যও ইতিবাচক হবে। তাই আমার জন্য ম্যাচটি আবেগের, একই সঙ্গে মস্তিষ্ক ব্যবহার করে খেলতে হবে।’
ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ মানেই বাড়তি উন্মাদনা। সমর্থকদের পাশাপাশি খেলোয়াড়দের মধ্যেও সেই রোমাঞ্চ ছড়িয়েছে। জামাল মনে করেন, ভারতের বিপক্ষে উত্তাপ-উত্তেজনায় ঠাসা একটি ম্যাচই হবে। থাকবে কার্ডের ছড়াছড়ি, ফাউলের পর ফাউল, সঙ্গে গালিগালাজ হতে পারে! এশিয়ান কাপ বাছাই থেকেই বাংলাদেশ ও ভারতের বিদায় নিশ্চিত হয়েছে। দুই দলের ম্যাচটি নিয়মরক্ষার হলেও সেটিতে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। কেউই হারতে চাইবে না, জিততে চাইবে। গত ২২ বছর ধরে ভারতের বিপক্ষে জয়হীন বাংলাদেশ। গত মার্চে শিলংয়ে ভারতের বিপক্ষে গোলশূন্য ড্র করে লাল-সবুজের জার্সিধারীরা। বাংলাদেশ অধিনায়ক জামাল বলেন, ‘আমরা যে অবস্থায় আছি এটাই বাংলাদেশের সবচেয়ে শক্তিশালী স্কোয়াড। তাই অবশ্যই আমাদের একটা বড় সুযোগ আছে।’ শেষ মুহূর্তে গোল হজম করে বারবার হতাশায় পুড়ে বাংলাদেশ। এ প্রসঙ্গে জামাল বলেন, ‘ডিফেন্সে অবশ্যই আমাদের সমস্যা আছে। তবে ভারত যদি অনেক ওপরে উঠে খেলে, তাহলে আমরা সামনে অনেক স্পেস পাব। আক্রমণে যারা খেলবে ওরা অনেক গতিময় খেলোয়াড়। রাকিব সম্ভবত দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে দ্রুতগতির খেলোয়াড়। তাকে যদি ঠিকমতো ব্যবহার করতে পারি, তাহলে সন্দেশ ও রাহুলÑ যে-ই থাকুক না কেন, হি উইল কিল দ্য ডিফেন্স।’
বাংলাদেশকে সমীহ করেই নামছে ভারত: ঢাকায় এসে ম্যাচের উত্তাপটা বেশ ভালোভাবে টের পাচ্ছেন ভারতের গোলকিপার গুরপ্রীত সিং সান্ধু। দুই দেশের ম্যাচটিতে যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে, সেটি বুঝতে পারছেন তিনি। বাংলাদেশ ম্যাচের আগে সান্ধু বলেছেন, ‘এটি (এশিয়ান কাপের দৌড়ে না থাকা) ম্যাচের প্রতিদ্বন্দ্বিতা বা তীব্রতা কমিয়ে দেবে না। বাংলাদেশ দল এবং তাদের সমর্থকদের দারুণ এক ম্যাচ হতে যাচ্ছে। কারণ ভারতের বিপক্ষে খেলা। আমাদের মানসিক এবং শারীরিকভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে, কারণ বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলা সব সময় কঠিন। ম্যাচটি হয়তো দেখতে সুন্দর না-ও লাগতে পারে। অগোছালো দেখা যেতে পারে। দল হিসেবে আমাদের যেকোনো চ্যালেঞ্জের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।’ অতীতেও ঢাকায় এসে খেলার অভিজ্ঞতা হয়েছে ভারতীয় গোলকিপার সান্ধুর। ২০১০ সালে ঢাকায় দক্ষিণ এশিয়ান গেমসে ভারত অনূর্ধ্ব-২৩ দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। সেই সময়ের তুলনায় বাংলাদেশ ফুটবল এখন অনেক এগিয়েছে বলে মনে করেন সান্ধু। তিনি বলেন, ‘সেটা অনেক আগের কথা। বাংলাদেশ ফুটবলে অবকাঠামোগত উন্নয়ন করেছে এবং প্রচুর বিনিয়োগ করেছে। ফুটবলের প্রতি তাদের ভালোবাসা বেড়েছে, জাতীয় দলও আরও ভালো করছে।’ বাংলাদেশকে চ্যালেঞ্জিং প্রতিপক্ষ ভাবছেন সান্ধু। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা সব সময়ই শিক্ষণীয়। এখানে এসে খেলা সহজ নয়।
কারণ এখানকার ফুটবলে প্রতিযোগিতা হয়। প্রতিবেশী হওয়ায় তারা আমাদের বিপক্ষে ভালো করতে চায় এবং আমাদের কঠিন পরীক্ষায় ফেলতে চায়। জাতীয় দলের সঙ্গে কিংবা যখনই ক্লাব ফুটবলের জন্য এখানে এসেছি, আমার অভিজ্ঞতা অন্তত সেটাই বলে।’ ঢাকায় এসে অনিরাপদ বোধ করছে না ভারতীয় দল। সান্ধুর কথা, ‘এখানকার অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি সম্পর্কে আমরা অবগত ছিলাম। তবে অবশ্যই খুব আদর্শ নয়। তবে আমরা এখানে ফুটবল খেলতে এসেছি এবং এটাই আমাদের মাথায় আছে। এখানে আসার পর থেকে আমরা অনিরাপদ বোধ করিনি। এখন ভালোভাবেই কাটছে, সব কিছু খুব সুসংগঠিত। সামনে যা আছে এবং মাঠে কী করতে হবে সেটা নিয়ে মনোযোগ দিতে হবে আমাদের।’

