ঢাকা সোমবার, ০৮ ডিসেম্বর, ২০২৫

মায়ামিকে প্রথম এমএলএস কাপ এনে দিলেন মেসি

মাঠে ময়দানে ডেস্ক
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৮, ২০২৫, ০৭:১৪ এএম

লিওনেল মেসির জাদুকরি পারফরম্যান্সের সুবাদে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো এমএলএস কাপ জিতল ইন্টার মায়ামি। শনিবার চেজ স্টেডিয়ামে ফাইনালে মায়ামি ৩-১ গোলে ভ্যানকুভার হোয়াইটক্যাপসকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে তারা। গোল না করেও ফাইনালে নায়ক মেসি। মায়ামির ৩ গোলের উৎসই ছিলেন আর্জেন্টাইন এই ফুটবল মহাতারকা। এ নিয়ে ক্যারিয়ারের ৪৭তম ট্রফি জিতলেন মেসি। রেকর্ড গড়ে লিগের সেরা ফুটবলারও তিনিই। আর শিরোপা জিতেই ক্যারিয়ারের ইতি টানলেন জর্দি আলবা ও সের্হিও বুসকেতস।

আমেরিকার মাটিতেও মেসির জয়োধ্বনি হয়েছে। ফাইনাল ম্যাচে তখন সমতা। বারবার আক্রমণ করে ভয়ংকর হয়ে ওঠে ভ্যানকুভার। চেজ স্টেডিয়ামের দর্শক বুঝে নিলেন সময় হয়েছে তাদের ভূমিকার। ‘মেসি, মেসি, মেসি’ চিৎকারে তারা পাল্টে দিলেন আবহ। ভালোবাসার এমন দাবিতে কি আর মিইয়ে থাকতে পারেন ফুটবল মহারাজ! উজ্জীবিত মেসি একটু পরে চমৎকারভাবে বানিয়ে দিলেন গোল। এগিয়ে গেল মায়ামি। পরে একদম শেষ সময়ে আরেকটি গোলেও থাকল তার জাদুকরী স্পর্শ। মৌসুমজুড়ে অসাধারণ পারফর্ম করা তারকা লিগের শেষ ম্যাচটি রাঙালেন ২টি গোলে সহায়তা করে। ভ্যানকুভার হোয়াইটক্যাপসকে হারিয়ে প্রথমবার এমএলএস কাপ শিরোপার অনির্বচনীয় আনন্দে মাখামাখি হলো ইন্টার মায়ামি। ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠিত ক্লাবটি যে লক্ষ্য ও স্বপ্ন থেকে ২০২৩ সালে দলে নিয়ে আসে মেসিকে, তারকারাজিতে যোগ করে আরও অনেক নাম, এই মৌসুমের শুরুতে কোচিংয়ের দায়িত্ব দেয় মেসিদের সাবেক সতীর্থ হাভিয়ের মাসচেরানোকে, তাদের সব চাওয়া পূরণ হলো এই মৌসুমে। মেসির অর্জনে টইটম্বুর ক্যারিয়ারে যোগ হলো আরেকটি প্রাপ্তি। তার ক্যারিয়ারের ৪৭তম ট্রফি এটি, সিনিয়র ফুটবলে ৪৪তম। মায়ামিতে তার এটি তৃতীয় ট্রফি। ২০২৩ সালে লিগস কাপের শিরোপা জিতেছিল দলটি, গত মৌসুমে পয়েন্টের রেকর্ড গড়ে জিতেছিল সাপোর্টার্স শিল্ড। এবার সবচেয়ে বড় শিরোপার স্বাদও পেয়ে গেল মাত্র সাত বছর বয়সি ক্লাবটি। মেজর লিগ সকারের কাপ ফাইনালে বাংলাদেশ সময় রোববার সকালে ঘরের মাঠে ৮ মিনিটেই আত্মঘাতী গোলে এগিয়ে যায় মায়ামি। টমাস মুলারের নেতৃত্বে লড়িয়ে পারফরম্যান্স মেলে ধরে ৬০ মিনিটে সমতায় ফেরে ভ্যানকুভার। একপর্যায়ে কোণঠাসা করে ফেলে তারা মায়ামিকে। তবে শেষ পর্যন্ত ব্যবধান করে দেন মেসি। তার সহায়তায় ৭১ মিনিটে রদ্রিগো দে পলের গোলে আবার এগিয়ে যায় মায়ামি। শেষ সময়ে মেসির ছোঁয়া থেকেই ব্যবধান আরও বাড়ান আইয়েন্দে। আগের দুই ম্যাচে পাঁচ গোল করেছিলেন আর্জেন্টাইন এই উইঙ্গার। প্লে-অফে ৯ গোল করে তিনি গড়লেন রেকর্ড। গোল-অ্যাসিস্ট মিলিয়ে প্লে-অফে ১৫ গোলে অবদান রেখে রেকর্ড গড়েন মেসিও। নিয়মিত মৌসুমেও অপ্রতিরোধ্য ছুটে চলায় তিান গড়েন রেকর্ডের পর রেকর্ড। অনুমিতভাবেই ‘মোস্ট ভ্যালুয়েবল প্লেয়ার’ স্বীকৃতি পান তিনি। রেকর্ড গড়া হয়ে যায় এখানেও। এই লিগে টানা দুবার সেরা হওয়া প্রথম ফুটবলার তিনিই। নিয়মিত মৌসুমে ভ্যানকুভারের চেয়ে এগিয়ে থাকায় ফাইনাল ম্যাচটি ঘরের মাঠে খেলার সুযোগ পায় মায়ামি। গ্যালারি ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। ম্যাচের তৃতীয় মিনিটে আলবার ক্রস থেকে মেসির ছোঁয়ায় লেগে আসা বল ধরে শট নেন আইয়েন্দে, যা চলে যায় বারের ওপর দিয়ে। মিনিট পাঁচেক পর মেসির চমৎকার পাস থেকে দে পল বল বাড়ান আইয়েন্দের দিকে। ডান দিক দিয়ে দ্রুতগতিতে বক্সে ঢুকে বক্সের মাঝামাঝি বল বাড়ানোর চেষ্টা করেন আইয়েন্দে। কিন্তু ভ্যানকুভারের ডিফেন্ডার এদিয়ের ওক্যাম্পোর পায়ে লেগে বল ঢুকে যায় জালে। ২৫ মিনিটে মেসির দুর্বল ফ্রি কিক সহজেই ধরে ফেলেন ভ্যানকুভার গোলকিপার। প্রথমার্ধের বাকি সময়টায় দাপট ছিল মূলত ভ্যানকুভারের। গোলের কয়েকটি সুযোগও তৈরি করে তারা। দুই দফায় খুব কাছাকাছিও গিয়েছিল। মায়ামিকে রক্ষা করেন গোলকিপার রোকো রিওস নোভো। ৬০ মিনিটে আর রোকো রিওস নোভো পারেননি ঠিকঠাক বল ধরতে। ভ্যানকুভারের কানাডিয়ান মিডফিল্ডার আলি আহমেদের শটে তেমন জোর ছিল না।

কিন্তু রোকো রিওস নোভোর হাতে লেগে বল চলে যায় জালে। সমতার উল্লাসে মেতে ওঠে ভ্যানকুভার। দুই মিনিট পর এগিয়েও যেতে পারত দলটি। এমানুয়েল স্যাবির দারুণ শট ফিরে আসে পোস্টে লেগে। ফিরতি বলে আবার ছুটে গিয়ে বক্সের বাঁ কোনায় গোলকিপারের একদম মুখ থেকে শট নেন স্যাবি। কিন্তু এবার ফিরিয়ে দেন মায়ামি গোলকিপার। খেলার স্রোতের বিপরীতেই মায়ামি এগিয়ে যায় ৭১ মিনিটে। প্রতিপক্ষের একজনের কাছ থেকে বল কেড়ে নিয়ে মেসি দুজনের ভেতর দিয়ে চমৎকারভাবে বাড়ান দে পলের দিকে। আগুয়ান গোলকিপারের পাশ দিয়ে বল জালে পাঠান ধারে আসা আর্জেন্টাইন মিডফিল্ডার। এরপর আর ভ্যানকুভারকে সেভাবে জ¦লে উঠতে দেয়নি মায়ামি। বরং শেষ সময়ের গোল আরও রঙিন করে তোলে তাদের শিরোপা উৎসবকে। যোগ করা সময়ের ষষ্ঠ মিনিটে আলবার লম্বা ক্রস বুক দিয়ে নামিয়ে দুর্দান্তভাবে সামনে বাড়ান মেসি।

আইয়েন্দের কাজ ছিল গোলকিপারকে ফাঁকি দিয়ে বল জালে পাঠানো। একটু পরই বাজে শেষ বাঁশি। বল তখন বুসকেতসের পায়ে। ধারাভাষ্যকার চিৎকার করে বললেন, ‘তার টাচই এবারের এমএলএস কাপের ফাইনাল টাচ।’ ততক্ষণে গ্যালারি ফেটে পড়েছে উল্লাসে, মাঠে মায়ামির ফুটবলার ও স্টাফরা মেতে উঠেছেন বাঁধনহারা উদযাপনে। মেজর লিগ সকারের ৩০ বছরের ইতিহাসে শিরোপার স্বাদ পাওয়া ষোড়শ ক্লাব মায়ামি। গত ৯ মৌসুমে শিরোপা জিতল ৮টি ভিন্ন ক্লাব। এতেই ফুটে ওঠে, এই লিগের দলগুলো শক্তিতে কতটা কাছাকাছি। তবে মায়ামিকে ভিন্ন উচ্চতায় তুলে নিয়েছেন মেসি।