চাঁপাইনবাবগঞ্জ অঞ্চলের জনপ্রিয় লোকোসঙ্গীত গম্ভীরা। নেচেগেয়ে অভিনয়ের মাধ্যমে চলমান বিভিন্ন ইস্যুতে সমাজের
নানা অসঙ্গতির চিত্র গম্ভীরার মাধ্যমে তুলে ধরেন নানা ও নাতি। বাতলে দেন সমাধানের পথও। চারিদিকে যখন প্রতারণার ভয়াবহ জালে আচ্ছাদিত সাধারণ মানুষ অসহায় হয়ে পড়েছে ঠিক সেই সময় বিনোদনের মাধ্যমে জনগণের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি ও সমস্যার সমাধান করতে একজন মানবিক বিজ্ঞ
বিচারক সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট
মো. হুমায়ুন কবীর এর পরিকল্পনা ও
নির্দেশনায় নির্মাণ করা হয়েছে গম্ভীরা । গম্ভীরাটি নির্মাণ করেছেন প্রয়াস ফোক থিয়েটরের শিল্পীগোষ্ঠি। এ গম্ভীরাটি সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে এলাকায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। এমন যুগান্তকারী উদ্যোগের কারণে চারিদিকে প্রশংসিত হচ্ছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. হুমায়ুন কবীর।
মানবিক এ বিচারকের অনন্য উদ্যোগ থেকে জানা গেছে, প্রতারণা এখন নিত্যদিনের ঘটনায় পরিণত হয়েছে। লোভে পড়ে প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়ে প্রতিদিনই সর্বস্বান্ত হচ্ছেন হাজার হাজার নারী-পুরুষ। উচ্চ সুদের প্রলোভনে ‘মধুমতি' নামে একটি এনজিওর প্রতারণার গল্প এখন সর্ব মহলে আলোচিত। সাধারণ খেটেখাওয়া মানুষ আজ চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন। নিজের শেষ সম্বলটুকু এনজিও নামক ভুয়া প্রতিষ্ঠানে জমা রেখে পথের ভিখেরিতে
পরিণত হয়েছেন অনেকেই। প্রতারকদের অভিনব কৌশল ও লাভ জনক অফারে ধরাশায়ী হচ্ছেন শিক্ষিত-অশিক্ষিত লোকজন। সবশেষ হওয়ার পর টাকা ফেরতের আশায় আদালতে এসে মামলা করছেন এসব ভুক্তভোগীরা। বর্তমানে এনজিওর প্রতারণা নিয়ে আদালতে হাজার হাজার মামলা বিচারাধীন। প্রতারণা থেকে বাঁচতে সচেতনতা প্রয়োজন; সেই ভাবনা থেকেই গম্ভীরা নির্মাণের উদ্যোগ নেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. হুমায়ুন কবীর। এ বিজ্ঞ
বিচারক জানিয়েছন- মামলা কোন সমাধানের উপায় নয়, জনসচেতনতায় পারে মানুষকে সঠিক পথ দেখাতে। তাই জনগণকে সঠিক পথের সন্ধান দিতে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী লোকসঙ্গীত গম্ভীরার মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করতেই এ উদ্যোগ। জনগণকে সচেতন করতে বিচারকের এমন উদ্যোগ খুবই প্রশংসনীয় বলছেন আইনজীবীরা।
এ বিষয়ে কথা হয় চাঁপাইনবাবগঞ্জ আদালতের আইনজীবী ড. মো. তসিকুল ইসলাম, আসলাম-উদ-দৌলা, আব্দুস সালাম ও রাসেল আহমেদ রনির সঙ্গে। তাঁরা বলেন- তথাকথিত এনজিওতে টাকা রেখে চাঁপাইনবাবগঞ্জের অনেক মানুষ প্রতারিত হয়েছেন। নিঃস্ব হয়ে গেছেন অনেকেই। লোভ পড়ে জ্ঞান শূন্য হয়ে এবং সচেতনতার অভাবে মানুষ প্রতারিত হয়েছেন।
এ নিয়ে আদালতে প্রতিদিনই বাড়ছে মামলার সংখ্যা। আইনজীবীদের দাবি- এসব প্রতারকরা ধরা পড়লেও সাজা নিশ্চিত করা আরও কঠিন। টাকা ফেরত পাওয়া বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অসম্ভব। তাই সবাইকে টাকা লেনদেনে সতর্ক থাকতে হবে। এই গম্ভীরাটি বিনোদনের পাশাপাশি মানুষকে সচেতন করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বিচারকের এমন উদ্যোগ প্রশংসার দাবি রাখে।
এ বিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ আদালতের বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো.হুমায়ুন কবীর জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জের সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ আজ
চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন। নিজের শেষ সম্বলটুকু এনজিও নামক ভুয়া প্রতিষ্ঠানে জমা রেখে রাতারাতি ভিখেরিতে পরিণত হয়েছেন। কষ্টার্জিত টাকা ফেরতের আশায় আদালতে এসে মামলা করছেন। একটা দুইটা করতে করতে আদালতে এনজিও সংক্রান্ত মামলা এখন হাজার হাজার। ভুক্তভোগীদের কথা মাথায় রেখে ও সাধারণ জনগনকে সচেতন করতে চেষ্টা করেছি চাঁপাইনবাবগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী গম্ভীরা তৈরী করতে। মামলা কোন সমাধানের উপায় নয়, সচেতনতায় পারে মানুষকে নানাবিধ সমস্যা থেকে নিরাপদে রাখতে।
তিনি আরও বলেন- এই গম্ভীরা গানের একমাত্র উদ্দেশ্য মানুষকে সচেতন করা। বিনোদনের মাধ্যমে মানুষ প্রতারণার বিষয়ে সচেতনতা তৈরী করতে পারলেই আমাদের রাজশাহী সার্থকতা।