মঙ্গলবার, ০৬ মে, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


হাসানুর রহমান তানজির, খুলনা

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৭, ২০২৪, ০৮:০৩ পিএম

দাদা ম্যাচ ফ্যাক্টরির ধ্বংসাবশেষ পরিদর্শনে শিল্প মন্ত্রণালয়ের টিম

হাসানুর রহমান তানজির, খুলনা

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৭, ২০২৪, ০৮:০৩ পিএম

দাদা ম্যাচ ফ্যাক্টরির ধ্বংসাবশেষ পরিদর্শনে শিল্প মন্ত্রণালয়ের টিম

দাদা ম্যাচ ফ্যাক্টরি ঘুরে দেখছেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব নূরুন নাহার, বিসিআইসির উপ-মহাব্যবস্থাপক শামীম রানা ও ঢাকা ম্যাচ ইন্ডাস্ট্রিজ কোম্পানির জিএম মাসুদ খানসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা

বেসরকারি-সরকারি মালিকানাধীন খুলনার ঐতিহ্যবাহী দাদা ম্যাচ ওয়ার্কস (ফ্যাক্টরি) প্রায় ১৪ বছর ধরে বন্ধ। শিল্প মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণে থাকা এ কারখানাটি ধ্বংসাবশেষে পরিণত হয়েছে। এ নিয়ে দৈনিক রূপালী বাংলাদেশে সিরিজ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর ঘুম ভাঙে প্রশাসনের। নড়েচড়ে বসে সরকারি কর্তৃপক্ষ। এরই ধারাবাহিকতায় হাজার কোটি টাকা মূল্যের দাদা ম্যাচ কারখানাটি পরিদর্শন করেছে শিল্প মন্ত্রণালয়ের টিম।

বুধবার (২৭ নভেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে মন্ত্রণালয়ের উপসচিব নূরুন নাহারের নেতৃত্বাধীন টিমের সদস্যরা সরেজমিনে দাদা ম্যাচ ফ্যাক্টরিটি ঘুরে দেখেন। গত প্রায় চার বছর ধরে কারখানাটি নিরাপত্তাব্যবস্থাহীন অবস্থায় পরিত্যক্ষ থাকায় লুটপাট হয়ে যায় সেখানকার বেশিরভাগ মূল্যবান মালামাল।

পরিদর্শনকালে শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপসচিব নূরুন নাহার বলেন, আমরা দাদা ম্যাচ কারখানার বর্তমান অবস্থা দেখতে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি), খুলনা জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন মিলে সরেজমিন পরিদর্শন করলাম। সবাই বসে সিদ্ধান্ত নিয়ে একটা প্রতিবেদন জমা দিব মন্ত্রণালয়ে। এই জায়গায় এখন সময়োপযোগী কী করা যায় সে ব্যাপারে প্রতিবেদনে সুপারিশ করব। কী সিদ্ধান্ত হয় পরে জানতে পারবেন।

দাদা ম্যাচ কারখানা পরিদর্শনকালে অন্যান্যের মধ্যে মন্ত্রণালয় গঠিত টিমের সদস্য বিসিআইসির উপমহাব্যবস্থাপক মো. শামীম রানা, ঢাকা ম্যাচ ইন্ডাস্ট্রিজ কোম্পানির মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মো. মাসুদ খান, খুলনার মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার বি এম নুরুজ্জামান, জেলা প্রশাসনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার মো. ইসমাইল হোসেনসহ অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারী উপস্থিত ছিলেন। জানা গেছে, দুই-এক দিনের মধ্যেই পরিদর্শন টিম মন্ত্রণালয়ে তাদের প্রতিবেদন দাখিল করতে পারে।

উল্লেখ্য, দীর্ঘকাল ধরে বন্ধ থাকা ঢাকা ম্যাচ ফ্যাক্টরি ও খুলনার দাদা ম্যাচ ফ্যাক্টরি নিয়ে গত ৩০ ও ৩১ অক্টোবর এবং ৫ নভেম্বর দৈনিক রূপালী বাংলাদেশে সিরিজ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সেখানে ঐতিহ্যবাহী কারখানা দুটির নিরাপত্তাহীনতা ও বেহাল দশা তুলে ধরা হয়। ওই সময়ে জানতে চাইলে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জাকিয়া সুলতানা রূপালী বাংলাদেশকে বলেছিলেন, সিলগালা করার পর প্রথমে খুলনা জেলা প্রশাসকের (ডিসি) কাছে রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকায় পুলিশ পাহারা ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে ডিসি সারেন্ডার করেন, আর নিরাপত্তা দিতে অস্বীকৃতি জানান। এ কারণে দাদা ম্যাচ কারখানায় সমস্যা দেখা দেয়। তিনি আরও বলেন, ‘দাদা ম্যাচ ও ঢাকা ম্যাচ কারখানা দুটির বিষয়ে একটি টিম গঠন করা হয়েছে। তারা সরেজমিনে পরিদর্শন করে প্রতিবেদন জমা দেবেন। এরপরই বাস্তবসম্মত ও আইনানুগ সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’ এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে মন্ত্রণালয়ের দীর্ঘসূত্রতা, সিদ্ধান্তহীনতা ও গাফিলতির অভিযোগ সঠিক নয় বলেও দাবি করেন সচিব জাকিয়া সুলতানা।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে খুলনার জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম রূপালী বাংলাদেশকে জানিয়েছিলেন, ‘সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক আমরা ব্যবস্থা নেব। মাত্র দেড় মাস আগে খুলনায় যোগদান করেছি। আগের জেলা প্রশাসন সরকারি আইন মোতাবেকই কাজ করেছে।’

একই বিষয়ে ঢাকা ম্যাচ ইন্ডাস্ট্রিজ কোম্পানির মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মো. মাসুদ খান তখন  জানিয়েছিলেন, ‘শিল্প মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মোতাবেক ২০১১ সালের ২৩ মার্চ খুলনার জেলা প্রশাসককে কারখানাটির সমস্ত স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি ও সম্পদ ইনডেন্টরি করে কোম্পানির কাছ থেকে বুঝে নিয়ে সিলগালা করে কারখানাটির নিরাপত্তাকর্মীদের বের করে দেওয়া হয়। শুরুতে মূল ফটকে কয়েকজন পুলিশ সদস্য নিয়োজিত করলেও পরবর্তীতে পুলিশ সদস্যদের প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। ফলে কারখানাটি সম্পূর্ণ নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়ে, শুরু হয় লুটপাট’। তিনি বলেন, ‘যেহেতু সিলগালা অবস্থায় শতভাগ সরকারি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, সেহেতু সরকারের দায়িত্ব ছিল যথাযথ নিরাপত্তা বিধান করা। সরকারকে কারখানাটি নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার সময় নিরাপত্তার বিষয়টি ভাবা উচিত ছিল।

উল্লেখ্য, দাদা ম্যাচ কারখানাটি ঢাকা ম্যাচ ইন্ডাস্ট্রিজ কোম্পানি লিমিটেডের প্রতিষ্ঠান। ১৯৮৪ সালে বিরাষ্ট্রীয়করণ নীতির আওতায় এটি করা হয়। এই কোম্পানির ৭০ শতাংশের মালিকানা দেশের বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠী ভাইয়া গ্রুপের। আর বাকি মাত্র ৩০ শতাংশের মালিকানা শিল্প মন্ত্রণালয়ের। মন্ত্রণালয়ের মালিকানাধীন শেয়ারের প্রতিনিধিত্বে তার অধীন সংস্থা বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি)। ১৯৫৫-৫৬ সালে গেওয়া কাঠের ওপর নির্ভর করে খুলনার রূপসা নদীর তীরে ১৭.৩৫ একর জমির ওপর দাদা ম্যাচ ওয়ার্কস বা ফ্যাক্টরির যাত্রা শুরু হয়। এর মালিকানায় ছিল পাকিস্তানি দাদা গ্রুপ। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর জাতীয়করণ করা হয়। খুলনার দাদা ম্যাচ ফ্যাক্টরি ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত পরিচালনা করে সুইডিশ একটি কোম্পানি। পুরোনো মেশিনারিজসহ অব্যাহত লোকসানের ফলে ১৯৯৩ সালে সুইডিশ কোম্পানি তাদের ৭০ শতাংশ মালিকানা বিক্রি করে দেয়, যা সাফ কবলামূলে কিনে নেয় ভাইয়া গ্রুপ। সরকারি-বেসরকারি মালিকানায় ২০১০ সাল পর্যন্ত চলে দাদা ম্যাচ ফ্যাক্টরি। উপর্যুপরি লোকসান ও কথিত শ্রমিক নেতাদের ষড়যন্ত্রের কারণে ২০১০ সালে কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। পরে আধুনিকায়নের উদ্যোগ নিয়ে চলতি মূলধনের জন্য একাধিক আবেদন করেও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ ব্যর্থ হয়। এ ক্ষেত্রে সহযোগিতা না করে ২০১১ সালের মার্চ মাসে সিলগালা করে দেয় সরকারি কর্তৃপক্ষ শিল্প মন্ত্রণালয়। সেই সময় থেকে মালামাল সংরক্ষণের দায়িত্ব দেওয়া হয় খুলনা জেলা প্রশাসনকে।

এদিকে খুলনা ফ্যাক্টরিতে একটি আধুনিক ফয়েল প্যাকেজিং ফ্যাক্টরি (মোড়কজাত) করার প্রকল্প প্রস্তাব শিল্প মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে বেসরকারি শেয়ারহোল্ডার কোম্পানি। ২০২১ সালের ৮ সেপ্টেম্বর দেওয়া এক চিঠিতে বিসিআইসিতে সেটি দাখিল করা হয়। সেই চিঠিতে ২০১৭ সালের ৫ নভেম্বরে দেওয়া চিঠির প্রস্তাব মোতাবেক দ্রুত সিদ্ধান্ত দেওয়ার কথা বলা হয়। এতে বেসরকারি শেয়ারহোল্ডারদের মালিকানাধীন ৭০ শতাংশ শেয়ার সরকারকে গ্রহণ কিংবা সরকারি মালিকানাধীন ৩০ শতাংশ শেয়ার বেসরকারি শেয়ারহোল্ডারদের কাছে হস্তান্তরের মাধ্যমে বিনিয়োগ প্রত্যাহারের প্রস্তাব করা হয়। এরপরও কেটে গেছে তিন বছর। কিন্তু এ বিষয়ে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত কিংবা কারখানা চালুর বিষয়ে কোনো বাস্তবসম্মত ও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারেনি শিল্প মন্ত্রণালয়।

আরবি

Link copied!