জয়পুরহাটের কালাই উপজেলায় ভালনারেবল উইমেন বেনিফিট (ভিডব্লিউবি) কর্মসূচির আওতায় চাল বিতরণ নিয়ে অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয়রা জানান, অনেক চালেই ছত্রাক ধরেছে এবং দুর্গন্ধ বের হচ্ছে। এসব চাল খাওয়ার অনুপযোগী হলেও হতদরিদ্র মানুষের মধ্যে তা বিতরণ করা হচ্ছে।
মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) প্রতিজনকে ৩০ কেজি করে মোট ৯০ কেজি চাল দেওয়া হলেও বিতরণকৃত চালের মান নিয়ে ব্যাপক অভিযোগ উঠেছে।
এ বছর উদয়পুর ইউনিয়নের ৪০৯ জন নারী লটারির মাধ্যমে এই সুবিধার জন্য নির্বাচিত হয়েছেন। তাদের জন্য বরাদ্দ এসেছে ১ হাজার ২২৭ বস্তা, মোট ৩৬ হাজার ৮১০ কেজি চাল। কিন্তু বিতরণ কার্যক্রমে নিম্নমানের চাল দেওয়া এবং অসাধু চক্রের দৌরাত্ম্যে প্রকৃত উপকারভোগীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, অনেক উপকারভোগী হাতে পাওয়া বস্তা খুলে হতাশা প্রকাশ করছেন। তাদের অভিযোগ চালগুলো দুর্গন্ধযুক্ত, ছত্রাক ধরা এবং দলা বাঁধা।
মিজানুর রহমান নামে এক উপকারভোগীর স্বামী বলেন, ‘আমরা দুস্থ বলে কি মানুষ নই? যে চাল পশু-পাখিকেও খাওয়ানো যায় না, তা আমাদের দেওয়া হয়েছে!’
তার অভিযোগের সঙ্গে অন্তত ২০ জন উপকারভোগী একমত হন।
উদয়পুর ইউনিয়নের দুধাইল গ্রামের মিজানুর রহমান, শেখপুর গ্রামের বনজের আলী, জামুড়া-বাশুড়া গ্রামের রহিমা, তানিয়া, নুনুজ সানাইপুর গ্রামের রোজিনাসহ অনেকে জানান, চালগুলো দুর্গন্ধযুক্ত, ছত্রাক ধরা ও দলা বাঁধা। এ চালগুলো ছাগলও খাবে না।
স্থানীয়রা মনে করছেন, মান পরীক্ষার ব্যবস্থা ও কঠোর তদারকি না হলে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে।
উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা মাহফুজা খাতুন স্বীকার করেন, কিছু বস্তায় নিম্নমানের চাল পাওয়া গেছে।
তিনি বলেন, স্বচ্ছতার জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র যাচাই করে চাল দেওয়া হচ্ছে। তবে কিছু চাল খাওয়ার অনুপযোগী ছিল, সেগুলোর নমুনা সংগ্রহ করে খাদ্য গুদাম ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করা হবে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আমজাদ হোসেনের বলেন, এসব চাল খেলে স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হতে পারে। বরাদ্দের আগে মান পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা জরুরি।
উদয়পুর ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান কারিমা বিষয়টি স্বীকার করে জানান, অন্তত ১০০ বস্তা চাল অনুপযোগী ছিল।
এদিকে অভিযোগ উঠেছে, ইউনিয়ন পরিষদ প্রাঙ্গণে কিছু অসাধু ব্যক্তি অল্প দামে দুস্থ নারীদের কাছ থেকে চাল কিনে নিচ্ছেন।
ভ্যানগাড়ি ও ভটভটি ব্যবহার করে সংগ্রহ করা এসব চাল পরে বেশি দামে বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে। স্থানীয় রেজাউলসহ পাঁচজনের নাম এ কাজে জড়িত বলে জানা গেছে। এমনকি খাদ্য গুদামের বস্তা থেকে চাল বের করে অন্যত্র মজুত রাখার প্রমাণও মিলেছে।
কালাই উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আবু সালেহ মোহাম্মদ ইমরান জানান, তাদের সাথে চুক্তি ভিত্তিতে ভালো মানের চাল সরবরাহ করার জন্য পুষ্টি মিলাররা চাল নেন। উদয়পুরে চাল বিতরণের সময় কিছু চাল নষ্ট পেয়েছে। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কৃর্তপক্ষকে জানানো হয়েছে।
কালাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামিমা আক্তার জাহান বলেন, যে চালগুলো খারাপ পেয়েছে, সে চালগুলো ফেরত নেওয়ার কথা বলা হয়েছে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিসের সাথে। পরে ভালো চাল ভুক্তভোগী পরিবারদের দেওয়ার জন্য।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন