বৃহস্পতিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


নিজস্ব প্রতিবেদক, ময়মনসিংহ

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২৫, ০৭:০২ পিএম

ফায়ার ফাইটার নুরুল হুদাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন

নিজস্ব প্রতিবেদক, ময়মনসিংহ

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২৫, ০৭:০২ পিএম

ফায়ার ফাইটার নুরুল হুদাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

ফায়ার ফাইটার নুরুল হুদাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

গাজীপুরের টঙ্গীতে অগ্নিদগ্ধ হয়ে প্রাণ হারানো ফায়ার ফাইটার নুরুল হুদাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টায় নুরুল হুদার গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার সালটিয়া ইউনিয়নের ধামাইল গ্রামে নিজ বাড়িতে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ও গার্ড অব অনার শেষে জানাজা পড়ানো হয়।

জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে নুরুল হুদাকে দাফন করা হয়।

নুরুল হুদা টঙ্গীতে ফায়ার সার্ভিসে ফায়ার ফাইটার পদে কর্মরত ছিলেন। ২০০৭ সালের ২৯ মার্চ তিনি চাকরিতে যোগ দেন। নুরুল হুদা মা, বাবা, অন্তঃসত্তা স্ত্রীসহ এক মেয়ে ও এক ছেলে রেখে গেছেন। নুরুল হুদার বাবার নাম আবুল মুনসুর।

পরিবার সূত্রে জানা যায়, অনাগত সন্তানের মুখ দেখে যেতে পারলেন না ফায়ার ফাইটার নুরুল হুদা। দশদিন পর তার স্ত্রী আসমা খাতুন তৃতীয় সন্তান প্রসবের সম্ভাব্য দিন। কিন্তু এর আগেই গাজীপুরের টঙ্গীতে রাসায়নিকের গুদামের অগ্নিকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে আহত ফায়ার ফাইটার নুরুল হুদা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়।

স্থানীয়রা জানান, নুরুল হুদা খুব সহজ-সরল ও ভালো মানুষ ছিলেন। তিন বছর আগে বড় ভাই শামসুল হুদা বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যাযন। তার চাকরির আয়েই পরিবারের খরচ চলত। যে কেমিক্যাল কারখানায় আগুন লেগেছে, সেই কারখানা বিরুদ্ধে সরকার আইনানুগ ব্যবস্থা নিক। ক্ষতিপূরণ দেওয়া হোক এবং নুরুল হুদার স্ত্রীকে ফায়ার সার্ভিসে চাকরি দেওয়া হলে অসহায় সংসার বেঁচে যাবে।

নিহত নুরুল হুদার স্ত্রী আসমা আক্তার বলেন, ‘আমার নয় মাসের গর্ভের সন্তানকে দেখতে গেল না ওর বাবা। জন্মানোর আগেই পৃথিবী ছেড়ে চলে গেল। এখন তিন ছেলে-মেয়েকে নিয়ে কীভাবে আমার সংসার চলবে? কীভাবে তাদের পড়াশোনা করাব? একমাত্র আয়ের উৎসই ছিল আমার স্বামীর চাকরি। আমার শ্বশুর-শাশুড়িও বৃদ্ধ, তারা কিছু করতে পারে না। আমি এখন চোখে অন্ধকার দেখছি। কিছুই বুঝতে পারছি না।’

নুরুল হুদার বাবা আবুল মুনসুর বলেন, ‘আমার সংসারের একমাত্র আয়ের উৎসই ছিল ছেলে নুরুল হুদার চাকরি। তিন বছর আগে বড় ছেলে শামসুল হুদা বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যায়। এখন রইল মাত্র দুই মেয়ে। বয়স হয়েছে, এখন আর কাজ করতে পারি না—কীভাবে সংসার চলবে, নুরুল হুদার ছেলে-মেয়েদের কীভাবে লেখাপড়া করাব? আমার বউমা আসমা আক্তার এসএসসি পাস। সরকার ইচ্ছা করলে নুরুল হুদার জায়গায় তার স্ত্রীকে চাকরি দিতে পারে। আসমার চাকরি হলে সংসারটা বেঁচে যাবে।’

নুরুল হুদার মা শিরীন আক্তার বলেন, ‘আগে বড় ছেলেকে হারিয়েছি, তিন বছর পরে ছোট ছেলেকে আল্লাহ নিয়ে গেল। এখন দুই মেয়ে ছাড়া আর কেউ রইল না। নাতি-নাতনি, বউমা সবাইকে নিয়ে কীভাবে সংসার চলবে, ভাবতে পারছি না।’

নুরুল হুদার বড় বোন রোকসানা বেগম বলেন, ‘এই ভাইটা আমাদের বাবা-মায়ের শেষ সম্বল ছিল। বড় ভাই মরার পর ছোট ভাইটাকে ঘিরেই সব স্বপ্ন ছিল। এখন সেই ভাইটিও নেই। ভাইয়ের স্ত্রী পোয়াতি, আমি তাকে কীভাবে বলব ভাইয়ের অবস্থা?’

ময়মনসিংহ বিভাগীয় ফায়ার সার্ভিসের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক পূর্ণ চন্দ্র মুৎসুদ্দী বলেন, ‘গত ২২ সেপ্টেম্বর টঙ্গী কেমিক্যাল কারখানায় আমার সহকর্মী নুরুল হুদা দুর্ঘটনায় আহত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। নুরুল হুদা বীর মর্যাদা অর্জন করেছেন। তার পরিবারে মা-বাবা, স্ত্রী ও সন্তানের পাশে বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস থাকবে।’

আগুন নেভানোর সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন ফায়ার ফাইটার সাইফুল ইসলাম। তিনি আহত চার ফায়ার ফাইটারকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। উদ্ধার করতে গিয়ে তার হাতের তালুতেও আগুনের তাপ লেগে ফোসকা পড়েছে। তিনি বলেন, ‘আমি আগে গুদামের ভেতরে ভিডিও করতে যাই। ভিডিও করে বাইরে এসে স্যারদের বলি, ভেতরে আগুন ফুটছে। তখন স্যাররা ভেতরে দেখতে যান। যেতেই বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণের পর চারজনকে টেনে বের করি। দুজনের মুখ ছাড়া পুরো শরীর সঙ্গে সঙ্গে পুড়ে যায়। মাত্র এক মিনিট আগে বিস্ফোরণ হলে হয়তো কেউ দগ্ধ হতেন না।’

আহতদের মধ্যে দুজন ফায়ার ফাইটারের, শামীম আহমেদ ও নুরুল হুদার, শরীরের শতভাগ দগ্ধ হয়। একদিনের ব্যবধানে মারা যান দুজন। এখন বেঁচে রয়েছেন বাকি দুজন—৪২ শতাংশ দগ্ধ অফিসার খন্দকার জান্নাতুল নাঈম ও ৫ শতাংশ দগ্ধ ফায়ার ফাইটার জয় হাসান।

প্রসঙ্গত, নুরুল হুদা ২০০৭ সালের ২৯ মার্চ ফায়ার ফাইটার হিসেবে ফায়ার সার্ভিসে যোগদান করেন। গত সোমবার বিকেলে টঙ্গীর সাহারা মার্কেটের সেমিপাকা টিনশেড কেমিক্যাল কারখানার গুদামে অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধ হন নুরুল হুদাসহ আরও তিনজন। বুধবার দুপুর ২টা ৪০ মিনিটে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নুরুল হুদা মারা যান।

Link copied!