শনিবার, ১৮ অক্টোবর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


পুঠিয়া (রাজশাহী) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৭, ২০২৫, ১১:০৩ এএম

পুঠিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

রিপ্রেজেনটেটিভ আর দালালদের দৌরাত্ম্য অতিষ্ঠ রোগী ও স্বজনরা

পুঠিয়া (রাজশাহী) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৭, ২০২৫, ১১:০৩ এএম

ছবি- রূপালী বাংলাদেশ।

ছবি- রূপালী বাংলাদেশ।

মেডিকেল রিপ্রেজেনটেটিভের আধিপত্য আর ক্লিনিক ডায়াগনস্টিক সেন্টারের দালাল ও হাসপাতালটির সেবা খাতের অস্থায়ী চুক্তিতে নিয়োগ প্রাপ্ত কর্মচারীদের দৌরাত্বের মধ্যে দিয়ে চলছে রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। এই উভয়সঙ্কটে বিপর্যস্ত হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা নিতে আসা রোগী ও তার স্বজনরা। এতে দূর-দূরান্ত থেকে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা প্রতিদিন হয়রানির শিকার হচ্ছেন।

প্রাইভেট ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টারের দালালরা রোগীদের হাত ধরে তাদের ক্লিনিকে বিভিন্ন পরীক্ষা সহ নানা রকমের টেস্ট করানোর জন্য টানাটানির অভিযোগও করেছেন একাধিক ভুক্তভোগীরা।

অনুসন্ধানে উঠে এসেছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্তব্যরত কয়েকজন দালালদের নাম! এরা সরকারি বেতন ভোগ করেন অথচ কৌশলে রোগীদের সরলতার সুযোগে বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক এ বিভিন্ন পরীক্ষার জন্য রোগী পাঠিয়ে (শতকরা-৪০%) অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে।

অভিযুক্তরা হলেন- সেবা খাতে অস্থায়ী নিয়োগ প্রাপ্ত কর্মচারী মোছা. বিথি, বাদশাহ বাবু, ল্যাবে কর্মরত তানজিলা, নাইটগার্ড মুন, আয়া বেদেনা বেগম, জরিনা বেগম, টিকিট কাউন্টারের জাহাঙ্গীর, পরিবার পরিকল্পনা স্টোর কীপারের স্বামী বিদ্যালয়ের বাবলু।

সরেজমিন দেখা গেছে, সপ্তাহে তিনদিন দুপুর ২টার পর চিকিৎসকদের সঙ্গে ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিদের দেখা করার অনুমতি রয়েছে। নির্ধারিত এ সময়ের বাইরে অন্য সময় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বিক্রয় প্রতিনিধিরা কোনো চিকিৎসকের সঙ্গে দেখা করতে পারবেন না। এমনকি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সীমানার মধ্যেও কোনো ঔষধ বিক্রয় প্রতিনিধি ও প্রাইভেট ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টারের দালালরা বা প্রতিনিধিরা অবস্থান করতে পারবেন না। কিন্তু নিয়ম মানছেন না কেউই।

স্থানীয় জনগণ ও রোগীদের অভিযোগ, ৫০ শয্যাবিশিষ্ট এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেটির বর্তমান অবস্থা লেজে-গোবরে পরিণত হয়েছে। ঔষধ কোম্পানির প্রতিনিধি, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের দালাল এবং হাসপাতালে কর্মরত থেকে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের দালালদের কারণে অতিষ্ঠ চিকিৎসা প্রত্যাশীরা। আবার দালালদের খপ্পরে পড়ে অনেকেই হচ্ছেন প্রতারণার শিকার। রোগীদের প্রেসক্রিপশন কেড়ে নিয়ে জোরপূর্বক দালালরা তাদের নিজ প্রতিষ্ঠানে টেষ্ট-পরীক্ষা করতে বাধ্য করেন।

হাসপাতালটিতে বিগত দিনে ইমারজেন্সি কক্ষের পাশে ‘দালাল মুক্ত পুঠিয়া মেডিকেল চাই’ স্লোগান-স্লোগানে আন্দোলন করতে দেখা গিয়েছিল শামীম ডাইভারের নেতৃত্বে কয়েকজন প্রতিবাদী যুবককে। সে সময় শামীম ডাইভারকে আক্রমণ করেন দালালরা। মারধরের শিকার হয়ে শামীম আহত হোন। এরপর পুলিশ এসে ঘটনাটি নিয়ন্ত্রণ করেন। তারপরেও হাসপাতালটি দালাল মুক্ত হয়নি।

কর্তৃপক্ষের নজরদারি, প্রশাসনের গাফিলতি ও স্থানীয় হেভিওয়েট বে-সরকারি হাসপাতাল ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কারণে এখনও দালালদের হাতেই জিম্মি হাসপাতালটি। এছাড়াও ইমারজেন্সির প্রবেশপথে প্রতিনিয়তই দেখা যায় সন্ত্রাসী কায়দায় দালালরা শাসন করছেন হাসপাতালটি। এ যেন দেখার কেউ নেই!

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন হাসপাতাল কর্মকর্তা দেওয়া তথ্য অনুযায়ী জানা গেছে, হাসপাতালের সামনে প্রায় দেড়ডজন প্যাথলজি সেন্টার ও ১০ অবৈধ ক্লিনিক রয়েছে। প্রতিটি ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টারের দালালরা এখানে কাজ করেন। যে ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রোগী পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবে সেখান থেকে ডাক্তাররা কমিশন ভোগ করেন। প্রতিমাসের প্রথম সপ্তাহে ডাক্তারদের এ কমিশন পরিষদ করা হয়। এতে সে ডাক্তার মাসে অন্তত ৩০ থেকে ৭০ হাজার টাকা পর্যন্ত কমিশন পেয়ে থাকেন।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তথ্য অনুযায়ী, উপজেলায় মোট ২৩টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ১৩টি ক্লিনিক আছে। এদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, প্রায় প্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন বয়সী একাধিক দালাল নিয়োগ দিয়ে রেখেছেন। তবে নিয়োগ প্রাপ্তরা দালালরা অধিকাংশই মহিলা। তাদের প্রতি মাসে ছয়-সাত হাজার টাকা বেতন দেওয়া হয়। এছাড়াও পরীক্ষার বিল বাবত অর্থের ৪০ শতাংশ কমিশন পান দালাল।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে জরুরি বিভাগের একজন উপ সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার বলেন, দালালদের অত্যাচারে অনেক সময় রোগীরা বিরক্ত হয়ে উঠেন। স্থানীয় দালালদের প্রভাবের কারণে আমরা কোনো প্রতিবাদ করতে পারি না।

বিষয়টি নিয়ে হাসপাতালে আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডাঃ মো. জনাব আলী-মুস্তাফিজ কথা হলে তিনি জানান, কর্তৃপক্ষের অবস্থান টের পেলে দালালরা দ্রুত হাসপাতাল ত্যাগ করেন অথবা সুযোগ বুঝে আবারো অলিতে-গলিতে অবস্থান নেই।

পুঠিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ সূচনা মনোহারা এ বিষয়ে বলেন, আমি এখানে নতুন তবে দালালদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। দ্রুত পুঠিয়া হাসপাতাল দালাল মুক্ত করব। সরকারি হাসপাতালের স্টাফরা যদি দালালির সঙ্গে জড়িত থাকে তবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লিয়াকত সালমান জানান, দালালদের বিষয়টি আমার জানা নেই। আমি পুঠিয়ায় নতুন হলেও দালালদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান এ কর্মকর্তা।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!