সোমবার, ৩০ জুন, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


স্বপ্না চক্রবর্তী

প্রকাশিত: জুন ৩০, ২০২৫, ০১:০৫ এএম

আঁচড়ও লাগেনি আজিজের গায়ে

স্বপ্না চক্রবর্তী

প্রকাশিত: জুন ৩০, ২০২৫, ০১:০৫ এএম

ছবি- রূপালী বাংলাদেশ গ্রাফিক্স

ছবি- রূপালী বাংলাদেশ গ্রাফিক্স

২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত টানা ১৫ বছরের শাসনামলে সাবেক আওয়ামী লীগ সরকার সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি করেছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে। এই দুর্নীতির নেতৃত্বে ছিলেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রচ্ছন্ন সমর্থনে এ সময়ে বিদ্যুৎ খাতের মাফিয়ায় পরিণত হন সামিট পাওয়ারের কর্ণধার আজিজ খান। ক্ষমতার ছত্রছায়ায় রেন্টাল, কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে শুরু করে এলএনজি আমদানি, কূপ খননসহ সব কাজে একচ্ছত্র আধিপত্য ও স্বেচ্ছাচারিতা চালিয়েছেন আজিজ খান। নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন ‘জ্বালানি মাফিয়া’ হিসেবে।

এ সময় পাচার করেছেন দেশের কোটি কোটি টাকা। নাম লিখিয়েছেন সিঙ্গাপুরের শীর্ষ ধনীর তালিকায়। সাবেক প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুকে নিয়ে তৈরি করা সিন্ডিকেটে নিজেদের পকেট ভারি করতেই তারা একজোট হয়ে দেশীয় কূপ খননের বদলে গ্যাস খাতকে করে তুলেছেন আমদানিনির্ভর।

এমনকি খননকৃত কূপে গ্যাস পাওয়ার খবরও রেখেছেন গোপন। ইস্টার্ন রিফাইনারি-২ নির্মাণের নামে আরও হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের পাঁয়তারাও করছিলেন তারা। তবে আওয়ামী লীগের পতন হলেও এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে আজিজ। দেশে এখনো বীরদর্পে চালাচ্ছেন ব্যবসা। অন্তর্বর্তী সরকারেরও তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার যেন তাগিদ নেই। 

বিদ্যুৎ বিভাগের বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত ১০ বছরে চাহিদার তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা তৈরি করে বিগত সরকার। যার মধ্যে প্রায় ৫০ শতাংশই বেসরকারি খাতের বিদ্যুৎকেন্দ্র। এসব কেন্দ্র নির্মাণে মোটা অঙ্কের ঋণের ব্যবস্থাও করে সাবেক সরকার।

এমনকি বেসরকারি এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের জ্বালানি সরবরাহেরও দায়িত্ব নেয় জ্বালানি বিভাগ। কিন্তু ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ বড় অঙ্কের টাকা দিতে হতো তাদের। শুধু তাই নয়, এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে যে ঋণ নেওয়া হয়েছে তার গ্যারান্টার থাকত কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এমন সব জনবিরোধী আইন করে সামিটসহ সাবেক সরকারের অধীনস্ত কর্তা ব্যক্তিদের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে দেওয়া হতো বিশেষ সুবিধা।

অভিযোগ রয়েছে, সামিট গ্রুপের মালিক আজিজ খান তার বড় ভাই সাবেক বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী ফারুক খানকে সামনে রেখে এবং নসরুল হামিদ বিপুকে সঙ্গে নিয়ে ১.১২ বিলিয়ন ডলারের মালিক হয়ে সিঙ্গাপুরের ৪১তম শীর্ষ ধনীর তালিকায় নাম লেখান। যার পুরো টাকাই বাংলাদেশের জ্বালানি খাত থেকে নিয়েছেন তিনি। অথচ এই টাকা তিনি বাংলাদেশ থেকে কোনো বৈধ উপায়ে নিয়েছেন বলে তথ্য নেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে। 

জানা গেছে, এ পর্যন্ত দেশের ২০টি প্রতিষ্ঠানের ২৪টি ভেঞ্চারকে সর্বসাকুল্যে ৬৯.৫ মিলিয়ন বা প্রায় সাত কোটি ডলার বিদেশে বিনিয়োগের অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই টাকার মধ্যে এ পর্যন্ত ৪৫.৪৫ মিলিয়ন ডলার বা সাড়ে চার কোটি ডলার বৈধভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে জানিয়ে বিনিয়োগ করা হয়েছে।

এর বাইরে আর কাউকে এর চেয়ে বড় অঙ্কের বিনিয়োগ করার অনুমতি দেওয়া হয়নি। অথচ এই ২০টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আজিজ খানের বা সামিট গ্রুপের নাম নেই। অর্থাৎ আজিজ খান বাংলাদেশ থেকে যত অর্থ বিদেশে নিয়ে গেছেন তার পুরোটাই অবৈধ। 

আজিজ খান শুধু যে সিঙ্গাপুরেরই শীর্ষ ধনী তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ব্যবসা-বাণিজ্যবিষয়ক সাময়িকী ফোর্বসের ২০২৪ সালে প্রকাশিত নিরীক্ষা ও পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিশ্বের শীর্ষ ধনীদের সারিতেও রয়েছেন আজিজ খান। সাময়িকীটির করা ৭৮টি দেশের দুই হাজার ৭৮১ জনের তালিকায় দুই হাজার ৫৪৫ নম্বরে রয়েছেন আজিজ খান। যার মোট সম্পদের পরিমাণ দেখানো হয়েছে ১.১২ বিলিয়ন ডলার।

আয়ের খাত হিসেবে জ্বালানি খাতের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ফোর্বসের তথ্য অনুযায়ী, ৬৮ বছর বয়সি আজিজ খান বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত হয়েও সিঙ্গাপুরের স্থায়ী বাসিন্দা হয়েছেন। ছেড়েছেন বাংলাদেশের নাগরিকত্ব। ২০২৪ সালে আজিজ খান ছিলেন সিঙ্গাপুরের ৪১তম ধনী।

আগের বছরের শীর্ষ ধনীদের তালিকায় ছিলেন ৪২ নম্বরে। অর্থ পাচারসংক্রান্ত দুর্নীতি নিয়ে ২০১৬ সালে পানামা পেপারসেও সামিট গ্রুপের আজিজ খানের নাম শীর্ষে উঠে আসে। এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অনুসন্ধান শুরু করে। তবে ক্ষমতার প্রভাব আর আইনি জটিলতায় এখনো শেষ হয়নি অনুসন্ধান।

সামিটের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ 

টানা ১৫ বছর বিদ্যুৎ খাতে প্রচলিত ছিল, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) এমনকি বিদ্যুৎ বিভাগের পরিকল্পনাও বদলে যেত সামিট গ্রুপের চাপে। দেশের স্বার্থ বিবেচনায় নয়, বিদ্যুৎকেন্দ্র হয়েছে স্রেফ শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ আজিজ খানের চাওয়ায়। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের নথিপত্র থেকে পাওয়া গেছে যার প্রমাণ। এসব ঘটনায় যেমন রাষ্ট্রের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে, তেমনি অপরিকল্পিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের।

পিডিবি সূত্রে জানা গেছে, সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি শান্তাহার ৫২ মেগাওয়াট এবং সৈয়দপুর ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র অনুমোদন দেয় ২০১১ সালের ১ জুন। তেলভিক্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র দুটি যথাসময়ে নির্মাণে ব্যর্থ হলে কয়েক দফায় তাগাদাপত্র দেওয়া হয় সামিট গ্রুপকে। শেষ পর্যন্ত অগ্রগতি না হওয়ায় আইন অনুযায়ী সামিটের ১২ লাখ ডলার জামানত বাজেয়াপ্ত করার সিদ্ধান্ত নেয় পিডিবি।

সে অনুযায়ী, জামানত বাজেয়াপ্ত করার নোটিশও দেওয়া হয়েছিল পিডিবির পক্ষ থেকে। কথা ছিল চিঠির পর সামিটের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়ে যাবে। কিন্তু প্রভাবশালী আজিজ খানের হুমকি-ধমকিতে সবকিছু বদলে যায়। তৎকালীন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী এনামুল হকের নির্দেশে নোটিশ প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয় পিডিবি।

উল্টো সময় বর্ধিত করে শান্তাহার ও সৈয়দপুরের পরিবর্তে নারায়ণগঞ্জের মদনগঞ্জ ও বরিশালে কেন্দ্র স্থাপনের সুপারিশ করা হয় সামিটের চাওয়া অনুযায়ী। যা বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের মাস্টারপ্লানের সরাসরি সাংঘর্ষিক ছিল।

বিদ্যুৎকেন্দ্র দুটি উত্তরাঞ্চলে নির্মাণ উদ্যোগের প্রধান লক্ষ্য ছিল উত্তরাঞ্চলের সান্ধ্যকালীন লোডশেডিং দূর করা। ওই সময়ে (২০১২ সাল) আশুগঞ্জ ও সিলেট অঞ্চলে উৎপাদিত বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হতো। দীর্ঘ সঞ্চালন লাইনের কারণে একদিকে যেমন সিস্টেম লস হতো তেমনি ভোল্টেজ নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন ছিল।

এতে করে ট্রান্সফরমার পুড়ে যাওয়া, বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি নষ্ট হওয়া ছিল নিত্যদিনের ঘটনা। নিরবচ্ছিন্ন ও মানসম্পন্ন বিদ্যুৎ নিশ্চিত করতে বিদ্যুৎকেন্দ্র দুটি যুক্ত করা হয়েছিল মাস্টার প্লানে।

তবে শুধু সামিটের অতি মুনাফালোভি মানসিকতার কারণে ভন্ডুল হয় সব পরিকল্পনা। তৎকালীন আইপিপি সেল-৩ এর পরিচালক জাকির হোসেনকে বাধ্য করা হয় স্থানান্তরের অনুমোদন দিতে। অসহায় পিডিবি তখন নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করতে বাধ্য হয়।

তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র দুটির জন্য জ্বালানি পরিবহনের খরচের পয়সা লুট করতে ওই জালিয়াতির আশ্রয় নেন বিদ্যুৎ খাতের মাফিয়াখ্যাত এই আজিজ খান। সৈয়দপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রে তেল সরবরাহ করতে হলে চট্টগ্রাম থেকে নৌপথে বাঘাবাড়ি, সেখান থেকে রেল অথবা সড়কপথে জ্বালানি সরবরাহ করার কথা। যার খরচ তাদের চুক্তির মধ্যেই ধরা ছিল।

সেই পরিবহন খরচ কমানোর নাম করেই কেন্দ্র দুটি বরিশাল ও মেঘনাঘাটে নিয়ে যাওয়া হয়। অথচ স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত হলেও সামিটকে আগের হিসাবেই পরিবহন খরচ বরাদ্দ দেওয়া হয় বলে পিডিবি সূত্র নিশ্চিত করেছে। ১৫ বছর মেয়াদি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর জন্য সামিট পাওয়ার লিমিটেড ও কনসোর্টিয়াম অব সামিট ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড মার্কেন্টাইল করপোরেশনের সঙ্গে চুক্তি করে পিডিবি।

শুধু ওই দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্রই নয়, যোগ্যতা না থাকলেও বৃহৎ ৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র বিবিয়ানা-১, ২ ও ৩ সামিটের হাতে তুলে দেয় সাবেক আওয়ামী লীগ সরকার। কাছাকাছি সময়ে দেওয়া হয় মেঘনাঘাট ৩৫০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্ল্যান্টও। বিবিয়ানায় অর্থায়ন করতে ব্যর্থ হলেও নিয়মবর্হিভূতভাবে দফায় দফায় সময় বাড়ায় আওয়ামী লীগ সরকার।

বিবিয়ানা-১ বিদ্যুৎকেন্দ্রটি আইপিপি (ইন্ডিপেন্ডেন্ট পাওয়ার প্ল্যান্ট) হওয়ায় এখানে সরকারের অর্থায়নের কোনো দায় ছিল না। নির্ধারিত সময়ে কাজ শুরু করতে না পারায় চুক্তি বাতিল ও সামিটের ৩০ লাখ (তিন মিলিয়ন) ডলার জামানত বাজেয়াপ্ত হওয়ার কথা। কিন্তু বিদ্যুৎ বিভাগ সামিটের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়ারই সাহস পায়নি। শুধু বিদ্যুৎকেন্দ্রের স্থানান্তর নয়, মদনগঞ্জের ওই বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বিপিসিকেও জিম্মি করে সামিট গ্রুপ।

আইন অনুযায়ী, সব ধরনের জ্বালানি তেল আমদানির একক এখতিয়ার বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কমিশনের (বিপিসি)। সেই বিপিসিকেও ভয়ভীতি দেখিয়ে জ্বালানি তেল আমদানির অনুমোদন বাগিয়ে নেন আজিজ খান। ২০১৩ সালের জুলাইয়ে সামিট গ্রুপকে বছরে ১ লাখ টন ফার্নেস অয়েল আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয় সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে। তখন আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় বিপিসি আপত্তি তুললেও পাত্তাই পায়নি তারা।

বিপিসিকে দমাতে সামনে থেকে দিকনির্দেশনা দেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক ই-ইলাহী চৌধুরী ও বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী এনামুল হক। জনশ্রুতি রয়েছে, আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় বিপিসি চেয়ারম্যানকে প্রকাশ্য হুমকি দিয়েছিলেন প্রতিমন্ত্রী। পরে বাধ্য হয়ে সামিট গ্রুপকে ফার্নেস অয়েল আমদানির অনুমতির ছাড়পত্র দেয় বিপিসি। যা পরবর্তীতে নসরুল হামিদ বিপুর সময়ও অব্যাহত ছিল।

 অভিযোগ রয়েছে, নসরুল হামিদের সহযোগিতাতেই সামিট গ্রুপের দেশের বাইরে কোম্পানি খুলে টাকা নিয়ে গেছে। অনেক সময় ওভার ইনভয়েস ও আন্ডার ইনভয়েসের মাধ্যমে টাকা পাচারের অভিযোগও রয়েছে সামিট গ্রুপের বিরুদ্ধে। বিদ্যুতের পাশাপাশি জ্বালানি খাতকেও জিম্মি করে ব্যবসা করেছেন তিনি।

মহেশখালীতে তাদের একটি এফএসআরইউ রয়েছে, মংলায় আরও একটি এফএসআরইউ দেওয়া হচ্ছে। ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল নিয়েও নানারকম মুখরোচক আলোচনা রয়েছে বাজারে।

এখনো চলমান সামিটের যত বিদ্যুৎকেন্দ্র

সামিট গ্রুপের মালিকানাধীনে রয়েছে ১৮ বিদ্যুৎকেন্দ্র। এরমধ্যে ৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের তথ্যে দেখা গেছে, ১৩২৩ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ওই ৭ বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিপরীতে প্রতিমাসে ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হচ্ছে ১২৫ কোটি ৫৬ লাখ টাকার ওপরে। ২০২১ সালের ২১ জুলাই থেকে পরের বছরের ২২ মার্চ পর্যন্ত ৯ মাসে ৭ বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্যাপাসিটি চার্জ দেওয়া হয়েছে ১ হাজার ১৬১ কোটি ৩৯ লাখ টাকা।

বলা হচ্ছে, সামিট, কনফিডেন্স ও ইউনাইটেড গ্রুপের মতো কিছু কোম্পানির হাতের পুতুল হিসাবে কাজ করেছে বিদ্যুৎ বিভাগ। প্রয়োজন না থাকলেও তাদের চাওয়া পূরণ করতে দফায় দফায় মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে রেন্টাল, কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের। এমনকি মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়ার পর রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রকে আইপিপি বানিয়ে বসিয়ে বসিয়ে ক্যাপাসিটি চার্জ দেওয়া হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন

বিদ্যুৎ খাতে সামিট গ্রুপের এই একচেটিয়া অবস্থানকে ক্ষমতার অপব্যবহার উল্লেখ করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, একচেটিয়াভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার করে সামিটের অর্থ পাচারের বিষয়টি দৃশ্যমান। সামিটের ক্ষমতার অপব্যবহারের আড়ালে আর্থিক অনিয়ম ঢাকা পড়ে না। তৎকালীন সরকারের এতে সমর্থন থাকলেও অন্তর্বর্তী সরকার এখনো এটি কেন মেনে নিচ্ছে সেটিই মাথায় আসছে না। আশা করি, যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে সামিটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

একই কথা বলেছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শামসুল আলম। রূপালী বাংলাদেশকে তিনি বলেন, পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে গত বছরের ৭ অক্টোবর সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান আজিজ খানসহ পরিবারের ১১ সদস্যের ব্যাংক হিসাব জব্দ করে আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।

এর মধ্যে মোহাম্মদ আজিজ খান, মোহাম্মদ ফয়সাল করিম খান, আঞ্জুমান আজিজ খান, আয়শা আজিজ খান, আদিবা আজিজ খান, আজিজা আজিজ খান, জাফর উদ্দিন খান, মোহাম্মদ লতিফ খান, মোহাম্মদ ফরিদ খান, সালমান খান ও মোহাম্মদ ফারুক খানের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়।

এর বেশি তাদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। নসরুল হামিদ বিপুর বিরুদ্ধে রাজনৈতিকভাবে বিভিন্ন মামলা হলেও এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে সামিটের আজিজ খান। আশা করব অন্তর্বর্তী সরকার সামিটের একচেটিয়া ব্যবসা নীতি ভেঙে দেবে।

তদন্ত রিপোর্ট পেলে ব্যবস্থা নেবে বিদ্যুৎ বিভাগ

বিদ্যুৎ খাতকে নিজের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণে রেখে হাজার কোটি টাকা পাচার করেও আজিজ খান এখনো কীভাবে দেশে ব্যবসা করছে জানতে চাইলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, যেসব চুক্তি ছিল সেগুলো তো চলবে। চুক্তি শেষ হলেই সেগুলো শেষ হবে।

বিশেষ আইনের আওতায় থাকা যেসব কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র তাদের রয়েছে সেগুলোর ব্যাপারে আমাদের তদন্ত কমিটি কাজ করছে। শুধু সামিট পাওয়ার না, আদানির বিরুদ্ধে ওঠা বিভিন্ন সমালোচনা নিয়েও তদন্ত হচ্ছে। অভিযোগের সত্যতা, প্রমাণ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা তদন্ত কমিটির রিপোর্টের অপেক্ষা করছি। 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!