দেশজুড়ে দিন দিন ভয়াবহ হয়ে উঠছে মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু। প্রতিদিনই বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা। চলতি বছরের মে মাসের তুলনায় জুন মাসে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে তিনগুণের বেশি। এমনকি বছরের প্রথম ৫ মাসে যতজন ডেঙ্গু রোগী পাওয়া গেছে, তার থেকে বেশি রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন চলতি জুন মাসে। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, রোগীর সংখ্যা এভাবে বাড়তে থাকলে জুলাই-আগস্ট মাসে ‘ডেঙ্গু মহামারি’ আকার ধারণ করতে পারে।
সারা দেশ থেকে প্রাপ্ত ডেঙ্গু রোগীদের তথ্য নিয়ে নিয়মিত পরিসংখ্যান তৈরি করছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। পরিসংখ্যান বলছে, রোববার (২৯ জুন) পর্যন্ত এ বছর সারা দেশে ৯ হাজার ৮৬৭ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত মে মাসে সারা দেশে হাসপাতালে ১৭৭৩ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছিলেন। তবে সেটি এ মাসে ব্যাপক হারে বাড়তে থাকে। চলতি মাসের ২৯ দিনেই হাসপাতালে রোগী ভর্তি হয়েছেন ৫৫২২ জন। অর্থাৎ, তিনগুণের বেশি রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
তা ছাড়া এ বছরের জানুয়ারি মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১১৫১ জন রোগী। এরপর ফেব্রুয়ারিতে ৩৭৪, মার্চে ৩৩৬ ও এপ্রিলে ৭০১ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়। ফলে মে মাসসহ বিগত ৫ মাসে রোগী ভর্তি হয়েছেন ৪ হাজার ৩৩৫ জন। অর্থাৎ, বছরের প্রথম ৫ মাসে যতজন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন তার থেকে বেশি ভর্তি হয়েছেন জুন মাসে।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি জুন মাসের যত জন মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন, এর সিংহভাগই বরিশাল বিভাগের। বিশেষ করে বরগুনায় ডেঙ্গুর প্রকোপ অনেক বেশি।
শনিবার (২৮ জুন) সকাল ৮টা থেকে রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত (একদিনে) সারা দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ৩৮৩ জন রোগী। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৩৬ জন আক্রান্ত বরিশাল বিভাগে। এর মধ্যে বরগুনাতেই ডেঙ্গু শনাক্ত ৭৬ জন।
জুনের এখন পর্যন্ত বরিশাল বিভাগে ৪৪৪৩ জন আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, তাদের মধ্যে বরগুনা জেলার রয়েছে ২৬৬৯ জন রোগী।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, বিগত বছরগুলোর তুলনায় চলতি বছরে ডেঙ্গু আক্রান্ত সংখ্যা আশঙ্কাজনক। পাশাপাশি সব জেলাতেই ডেঙ্গু রোগী পাওয়া গেছে। ফলে আশঙ্কা, আগামী মাসগুলোতে ডেঙ্গু বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। এক্ষেত্রে ‘মহামারি’ আকারও ধারণ করতে পারে।
কিটতত্ত্ববিদের মতে, ডেঙ্গু আক্রন্তের মৌসুম মূলত আগস্ট থেকে অক্টোবর। ওই সময় এডিস মশা বংশবিস্তারে সহায়ক আবহাওয়া তথা বৃষ্টিপাত ঘটে। তবে এবার আরও আগে থেকেই ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব দেখা দিতে পারে।
এক্ষেত্রে আগামী জুলাই-আগস্টেই ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে ডেঙ্গু। তাই ডেঙ্গুর ভয়াবহতা রোধে এখনই এডিস মশার বিস্তার নিয়ন্ত্রণ করার প্রয়োজন বলেও মনে করেন তারা।
আপনার মতামত লিখুন :