বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জে প্রবাসীর স্ত্রীকে নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার অভিযোগে পাতারহাট ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার এক শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। অভিযুক্ত শিক্ষক জুনিয়র মৌলভি হাসনাইন মৃধা একই মাদ্রাসার শিক্ষক এবং এক ছাত্রের মা অর্থাৎ ছাত্রের পরিবারের সদস্যকে নিয়ে পালিয়ে যান বলে অভিযোগ উঠেছে।
সোমবার (৪ আগস্ট) সকালে বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকাজুড়ে সমালোচনা শুরু হয়। অভিযুক্ত শিক্ষকের বরখাস্তের বিষয়টি মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুস শাকুর নিশ্চিত করেছেন।
অভিযুক্ত শিক্ষক উপজেলার সদর ইউনিয়নের রুকুন্দি গ্রামের আব্দুল হামিদ মৃধার ছেলে।
স্থানীয়রা জানান, হাসনাইন মৃধা (২৫) প্রবাসীর স্ত্রীর টাকা ও স্বর্ণালঙ্কারের লোভে তাকে প্রেমের ফাঁদে ফেলেন। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী স্বামী জিয়া উদ্দিন মেহেন্দিগঞ্জ থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন এবং আদালতেও অভিযোগ দায়ের করেছেন।
জিয়া উদ্দিন বলেন, ‘ওই শিক্ষক আমার ষষ্ঠ শ্রেণিপড়ুয়া ছেলে জিহাদকে প্রাইভেট পড়ানোর সুযোগে আমার স্ত্রীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়ান। তিনি তাবিজ-কবজের ব্যবসাও করেন। কুফরি করে আমার স্ত্রীকে নিয়ে গেছেন। এখন তিনি কোথায় আছেন, কেমন আছেন- তা জানি না। আমার দুই ছেলেসন্তান রেখে তিনি চলে গেছেন। বড় ছেলে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়ছে, ছোট ছেলে মাদ্রাসায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘স্ত্রী-সন্তানের ভবিষ্যতের জন্য আমি ১৮ বছর বিদেশে শ্রমিকের কাজ করেছি। সে আমার পাঁচ ভরি স্বর্ণালঙ্কার এবং নগদ সাত লাখ টাকা নিয়ে গেছে। আমার বিশ্বাস, টাকা ও স্বর্ণ আত্মসাতের উদ্দেশ্যেই আমার স্ত্রীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলা হয়েছে।’
জিয়া উদ্দিনের ছোট ভাইয়ের স্ত্রী শাপলা বেগম বলেন, ‘ওই শিক্ষক কবিরাজি জানেন। কুফরি করে আমার বড় জাকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে নিয়ে গেছেন। আগেও তিনি একাধিক প্রবাসীর স্ত্রীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়েছেন। বিশ্বাস করে আমার ভাশুর তার নামে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে টাকা পাঠিয়েছিলেন। স্বর্ণ দিয়ে পুতুলের মতো সাজিয়ে রেখেছিলেন। কিন্তু সেই বিশ্বাস ভেঙে দিয়ে তিনি সবকিছু নিয়ে উধাও হয়েছেন। একবারও ভাবলেন না স্বামী ও সন্তানদের কথা।’
অভিযুক্ত মৌলভি হাসনাইন মৃধার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তার পরিবারের সদস্যরাও বাড়িতে তালা ঝুলিয়ে আত্মগোপনে রয়েছেন।
মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুস শাকুর বলেন, ‘গত ১ জুন ২০২৫ থেকে হাসনাইন মৃধা স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন। কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এখন তিনি আমাদের প্রতিষ্ঠানের কেউ নন। তবে প্রবাসীর স্ত্রীকে নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে কেউ আমাকে লিখিত অভিযোগ দেয়নি।’
এ ঘটনায় মেহেন্দিগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) বিল্লাল হোসাইন বলেন, ‘এ বিষয়ে সরাসরি অভিযোগ করা হয়নি। তবে প্রবাসীর বড় ছেলে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন, তার মা বাড়ি থেকে বের হয়ে গেছেন এবং তাকে পাওয়া যাচ্ছে না।’
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রিয়াজুর রহমান বলেন, ‘ঘটনার তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় শিক্ষক হাসনাইন মৃধাকে বরখাস্ত করা হয়েছে।’
আপনার মতামত লিখুন :