ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলের আকাশ তখনো ঘন আঁধারে ঢাকা। চারপাশ নীরব, কেবল মাঝেমধ্যে কুকুরের ডাক ভেসে আসছিল। এই নীরবতা আচমকা ভেঙে যায় চিৎকার আর ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার শব্দে। টর্চের আলোয় ঝলসে ওঠে লাঠি, দা ও টেঁটার ঝিলিক পুরো গ্রাম রাতারাতি রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।
শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) দুপুরে হাওলাপাড়া গ্রামের যুবক তাইম তার কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে পাশের ছোট দেওয়ানপাড়া গ্রামের একটি পুকুরে গোসল করতে গিয়েছিলেন। সেখানে হঠাৎ হাজির হন ছোট দেওয়ানপাড়ার শাকিল, শিপন ও তাদের সঙ্গীরা। শুরু হয় তর্কাতর্কি, যা হাতাহাতিতে গড়ে ওঠে। তাইম ও তার বন্ধুরা মার খেয়ে ফিরে আসে নিজ গ্রামে।
বিকেল বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দুই গ্রামে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। কেউ বলছে, “ওরা আমাদের ছেলেদের মেরেছে,” আবার কেউ বলে, “আমরা ছাড় দেব না।” রাতের মধ্যে প্রস্তুতি শুরু হয়-কেউ টেঁটা ধার করছে, কেউ লাঠি যোগাড় করছে, কেউ আবার টর্চে নতুন ব্যাটারি লাগাচ্ছে।
রাত ১০টার দিকে, চারপাশের আলো নিভে গেলে, টর্চের আলোয় দুই দিক থেকে এগিয়ে আসে মানুষ। মুহূর্তের মধ্যেই সংঘর্ষ শুরু হয় চিৎকার, দৌড়, ইটপাটকেল ও গালাগালিতে পরিপূর্ণ পুরো এলাকা। নারীরা দরজা-জানালা বন্ধ করে আশ্রয় নেয়।
প্রায় এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলে সংঘর্ষ, যার ফলে উভয় পক্ষের অন্তত ৩০ জন আহত হন। আহতদের মধ্যে কেউ মাথায়, কেউ হাতে, কেউবা শরীরে গভীর ক্ষত নিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। এরপর খবর পৌঁছায় থানায়।
সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোশারফ হোসেন জানান, ‘খবর পাওয়ার পর দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক। পুনরায় সংঘর্ষ এড়াতে এলাকায় পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’