কক্সবাজার শহরের কলাতলী হোটেল-মোটেল জোনের ২ একর ৩০ শতক সরকারী খাস জমি দখল করে গড়ে তোলা শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেছে জেলা প্রশাসন, কক্সবাজার উন্নয় কর্তৃপক্ষ(কউক) ও কক্সবাজার পৌরসভা।
বুধবার (৪ জুন) সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত একটানা তিনঘন্টা এ অভিযান চালানো হয়। দখলমুক্ত করা এই জমির মূল্য প্রায় ৩০০ কোটি টাকা।
অভিযানে অংশ নেন, কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিলুফা ইয়াসমিন চৌধুরী, কউকের সচিব সানজিদা বেগম ও সদরের সহকারী কমিশনার (ভুমি) শারমিন সুলতানা।
এ সময় বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য অভিযানে অংশ নেন। প্রায় ৩ ঘণ্টাব্যাপী দুটি বুলডোজার দিয়ে ১১০ টি দোকান গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। এ ছাড়া চারপাশে দেওয়া টিনের ঘেরাও উচ্ছেদ করা হয়।
জানা যায়, পর্যটন রাজধানী কক্সবাজার শহরের প্রাণকেন্দ্র সুগন্ধা পয়েন্টের ২ দশমিক ৩৯ একর সরকারি জায়গা দখলের পাঁয়তারা করে দখলবাজ চক্র। সেই জায়গার মূল্য আনুমানিক ৩০০ কোটি টাকার কাছাকাছি। সরকারি রেকর্ড অনুযায়ী উক্ত জায়গা সরকারের ১ নং খাস খতিয়ানের জায়গা।
আরও জানা যায়, সুগন্ধার সেই সরকারি জমি হাতিয়ে নেওয়ার মূল কৌশলের অন্যতম ছিল ‘সচ্চিদানন্দ সেন গুপ্ত’ নামে এক ব্যক্তি। তিনি আওয়ামী লীগের ওবায়দুল হাসানের সাথে জায়গাটির বায়না চুক্তি করে। এর পর থেকে নকল কাগজপত্র দেখিয়ে অবৈধভাবে স্থাপনা নির্মাণ করে এবং দোকান বুঝিয়ে দেওয়ার কথা বলে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কয়েকশত কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়।
সচ্চিদানন্দ সেন গুপ্ত সরকারি এই ২.৩০ শতক জমিকে ‘অর্পিত সম্পত্তি’ হিসেবে দাবি করেন। একই সঙ্গে শহরের ৫ তারকা হোটেল ‘স্বপ্নীল সিন্ধু’, মৎস্য গবেষণা কেন্দ্র, ইউনিয়ন হাসপাতালসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ জায়গারও মালিকানা দাবি করেন তিনি। অভিযুক্ত ব্যক্তি সাংবাদিকদের উক্ত জায়গা অর্পিত সম্পত্তি বলে দাবি করলে উক্ত জায়গা ২০১৮ সালে সরকারি সেটিকে ১ নং খাস খতিয়ান হিসেবে গ্যাজেটভুক্ত করে।
এ ছাড়া সচ্চিদান একাধিকবার কউকের কাছে স্থাপনা নির্মাণে অনুমোদনের জন্যে আবেদন করলে পরে কউক তদন্ত করে দেখেন উক্ত জায়গায় তার কোন অস্থিস্ত্ব নেই বলে জানান। এ ছাড়া কউক , জেলা প্রশাসনকে সচ্চিদানন্দ এর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে লিখিত আদেশ দেয়।
কক্সবাজার সদরের সহকারী কমিশনার(ভুমি) শারমিন সুলতানা বলেন, ‘এক ব্যক্তি সরকারি জমি নিজের দাবি করে ভুয়া কাগজ বানিয়ে জমিটি দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করেছিল। এ নিয়ে উচ্চ আদালতেও মামলা হয়েছিল। আদালতে জমিটি জেলা প্রশাসনের পক্ষে আদেশ হওয়ার পর অবৈধ দখল উচ্ছেদ করা হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে এই জায়গা সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকবে এবং উক্ত জায়গার রক্ষণাবেক্ষণে একমাত্র সরকারই দায়িত্ব পালন করবে। কেও সেখানে অবৈধ স্থাপনা তৈরি বা দখল নিতে চেষ্টা করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিবে প্রশাসন।’
কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সচিব সানজিদা বেগম বলেন, ‘কউকের অনুমোদন না নিয়ে জেলা প্রশাসনের জমিতে অবৈধভাবে স্থাপনা গড়ে তোলা হয়েছে। সম্প্রতি জেলা প্রশাসনের তত্বাবধানে থাকা ৩০০ কোটি টাকা মূল্যের এই খাসজমি কক্সবাজার জেলা মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগের সহসভাপতি ওবাইদুল হোসেনের নেতৃত্বে একটি দখলদার চক্র জাল কাগজ বানিয়ে দখল করে নেয়।
চার পাশে উঁচু বেড়া দিয়ে সেখানে দোকানঘর নির্মাণ করেছিল। উচ্ছেদ করা জমিটি জেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়েছে।