যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তার সাবেক উপদেষ্টা ও বিশ্বের শীর্ষ ধনী ইলন মাস্কের মধ্যে একটি সরকারি বিলকে কেন্দ্র করে তীব্র উত্তেজনা শুরু হয়েছে।
ট্রাম্প মাস্কের সাম্প্রতিক কার্যকলাপের প্রতি গভীর হতাশা ব্যক্ত করেছেন এবং তাদের ভবিষ্যৎ সম্পর্ক নিয়ে অনিশ্চয়তা প্রকাশ করেছেন।
বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটনের হোয়াইট হাউজের ওভাল অফিসে জার্মানির চ্যান্সেলর ফ্রেডরিখ মের্জের সঙ্গে বৈঠকের আগে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে ট্রাম্প মাস্কের বিষয়ে বলেন, ‘দেখুন ইলনের সঙ্গে আমার চমৎকার সম্পর্ক ছিল, কিন্তু আমি জানি না ভবিষ্যতে তা থাকবে কি না।’
তিনি আরও যোগ করেন, ‘আমি তার ওপর খুবই হতাশ। কারণ যে বিলটি নিয়ে ইলন আলোচনা-সমালোচনা করছেন, এখানে বসে থাকা যে কোনো ব্যক্তির চেয়ে তিনি এই বিলের কার্যকারিতা সম্পর্কে বেশি অবগত।
এতে তার কোনো সমস্যা হওয়ার কথা ছিল না। কী কারণে সমস্যা হলো আমি বুঝতে পারছি না।’
ট্রাম্প-মাস্ক সম্পর্কের টানাপোড়েন
ট্রাম্প এবং মাস্কের ঘনিষ্ঠতা শুরু হয়েছিল ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে। তখন ট্রাম্পের বিভিন্ন প্রচারণা সভায় মাস্ককে নিয়মিত দেখা যেতো। নির্বাচনের আগেই মাস্ক ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে ট্রাম্প ক্ষমতায় এলে নতুন প্রশাসনে তাকে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া হবে।
নির্বাচনে জয়ের পর ট্রাম্প সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেন। সরকারি কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধি ও সরকারি ব্যয় সংকোচন সংক্রান্ত নতুন একটি দপ্তর, ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিশিয়েন্সি (ডজ), খোলা হয় এবং এর প্রধান করা হয় মাস্ককে।
ডজের প্রধান নির্বাহী হিসেবে মাস্ক কয়েক মাস ধরে সরকারি অর্থ অপচয় রোধের নামে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, দপ্তর ও বিভাগের হাজার হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত করেন।
এছাড়াও, প্রায় সব ধরনের বৈদেশিক সহায়তা প্রদান স্থগিত করা হয় এবং যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থাতেও সরকারি ভর্তুকি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
মাস্কের এই পদক্ষেপগুলো স্বাভাবিকভাবেই ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা কমিয়ে দেয়। যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে চাকরিচ্যুত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। বৈদেশিক ও অভ্যন্তরীণ সহায়তা প্রদান স্থগিত করায় দেশীয়ভাবেও ট্রাম্প প্রশাসনের সমালোচনা হয়।
মাস্কের নিয়োগ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট কংগ্রেসের এমপিদের একাংশ এবং ট্রাম্পের রাজনৈতিক দল রিপাবলিকান পার্টির নেতা-কর্মীদের একাংশ অসন্তুষ্ট ছিলেন। উল্লেখ্য, কংগ্রেস এখনও ডজকে সরকারি বিভাগ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি। এসব কারণে প্রেসিডেন্ট ও তার প্রশাসনের সঙ্গে মাস্কের দূরত্ব বাড়ছিল।
সম্প্রতি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের একটি কর হ্রাস সংক্রান্ত ‘জনকল্যাণমূলক’ বিল স্বাক্ষরকে ঘিরে ট্রাম্প ও মাস্কের মধ্যে নতুন করে তিক্ততা সৃষ্টি হয়। গত মাসে এই বিলে অনুমোদন দেওয়ার পর ট্রাম্প এটিকে ‘ওয়ান বিগ বিউটিফুল বিল অ্যাক্ট’ বলে অভিহিত করেন। এর পরপরই ট্রাম্পের সঙ্গে মাস্কের মতবিরোধ প্রকাশ্যে আসে।
মাস্ক অভিযোগ করেন, তিনি এবং তার সহকারীরা ট্রাম্প প্রশাসনের ভেতরে থেকে এত দিন ‘অপ্রয়োজনীয় ব্যয়’ কমাতে যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন, সেই সবই ওই একটি বিলের কারণে ব্যর্থ হয়ে যাবে।
এমনকি মাস্ক তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ অভিযোগ করেন যে বিলটি তাকে দেখানোর আগেই ট্রাম্প মার্কিন কংগ্রেসে পাশ করানোর জন্য পাঠিয়ে দিয়েছেন।
এই বিল আটকাতে গতকাল বৃহস্পতিবার মাস্ক তার মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ জনগণকে মাঠে নামার আহ্বানও জানিয়েছেন।
ওভাল অফিসে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে মাস্কের এই এক্স বার্তা নিয়ে ট্রাম্পের প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘তিনি আমার সম্পর্কে সবচেয়ে সুন্দর কথা বলেছেন। আর ব্যক্তিগতভাবে আমার সম্পর্কে খারাপ কিছু বলেননি।’
ট্রাম্প আরও বলেন, ‘আর আমার মনে হয় তিনি ব্যক্তিগত কারণে এ বিলের বিরোধিতা করছেন। কারণ পর্যায়ক্রমে কর সংস্কারের এ বিলের প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়বে টেসলার উপর।’
সূত্র : এএফপি