ঢাকা রবিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

দুই যুগ ধরে হাতের ছোঁয়া ছাড়াই নলকূপে ঝরছে পানি

কুমিল্লা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২৫, ০৭:৪১ পিএম
হাতের ছোঁয়া ছাড়াই নলকূপে ঝরছে পানি । ছবি- সংগৃহীত

কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার ভারতীয় সীমান্তবর্তী ছোট গ্রাম ভাবেরমুড়া। শতবর্ষী পাক দরবার শরিফ মাজারকে ঘিরে এ গ্রাম প্রতিদিন ভক্ত ও দর্শনার্থীদের ভিড়ে মুখর। তবে গ্রামটির সবচেয়ে বড় আকর্ষণ এখন আর শুধু মাজার নয়, বরং মাজারসংলগ্ন একটি নলকূপ-যেটি হাত না লাগিয়েই টলমল করে ঝরছে পানি, দিন-রাত অবিরাম।

প্রায় দুই যুগ আগে ভয়াবহ পানিসঙ্কটে পড়েছিল ভাবেরমুড়া। তখন পাক দরবার শরিফের পাশে বসানো হয় নলকূপটি। আশ্চর্যের বিষয়, বসানোর প্রথম দিন থেকেই একটানা পানি ঝরতে শুরু করে এবং আজও তা বন্ধ হয়নি। হাতল চাপার প্রয়োজন হয় না, কোনো চাপ প্রয়োগ ছাড়াই স্বাভাবিকভাবে গড়িয়ে পড়ছে স্বচ্ছ ও বিশুদ্ধ পানি।

এখন এই নলকূপ শুধু ভাবেরমুড়ার মানুষের নয়, আশপাশের পাঁচ-ছয়টি গ্রামের পানির প্রধান উৎসে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন শত শত মানুষ এখানে এসে পানি সংগ্রহ করেন। ভারতের ত্রিপুরা থেকেও অনেকে এই পানি নিতে আসেন। কেউ খাবার পানির জন্য, কেউ অজু বা ধর্মীয় কাজে ব্যবহার করেন। অনেকে বিশ্বাসের টানে এই পানি পান করেন রোগমুক্তির আশায়।

দরবার শরিফের খাদেম জানান,‘ভক্তরা মনে করেন এই পানি আরোগ্য দান করে। আমরা একে আল্লাহর বিশেষ রহমত হিসেবে দেখি। প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ এখানে আসেন, কেউ প্রার্থনা করেন, কেউ আবার এই অলৌকিক দৃশ্য দেখতে আসেন।’

শুধু গৃহস্থালি নয়, এই পানি খালের মাধ্যমে পৌঁছে যাচ্ছে কৃষিজমিতেও। খরা মৌসুমে যখন আশপাশের এলাকা পানির জন্য হাহাকার করে, ভাবেরমুড়ার কৃষকেরা নিশ্চিন্তে ফসল ফলাচ্ছেন এই নলকূপের পানিতেই। ফলে গ্রামটির কৃষি উৎপাদন অন্য এলাকার তুলনায় স্থিতিশীল।

গ্রামবাসী মনে করেন, এই নলকূপ শুধু তাদের জীবনরক্ষার উৎস নয়; এটি বিশ্বাস, ভক্তি ও আধ্যাত্মিকতার প্রতীক হয়ে উঠেছে। সীমান্তের ছোট্ট এই গ্রামটি এখন পরিচিত তার অলৌকিক নলকূপের জন্যই।