গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কোনাবাড়িতে মেঘলাল কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি হেনা আক্তারের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। তিনি নিজের মন মতো অফিস করেন।
সপ্তাহে সোমবার ও বৃহস্পতিবার এ দুইদিন ক্লিনিকে আসেন তিনি। তাও আবার নির্ধারিত সময়ের বাইরে। সেবা নিতে আসা রোগীদের সঙ্গেও করেন অসোভন আচরণ।
গল বুধবার দুপুর ১২টার সময় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কোনাবাড়ি এলাকায় মেঘলাল কমিউনিটি ক্লিনিকের দরজায় তালা ঝুলছে। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে দুপুর ৩টা পর্যন্ত সেবা উন্মুক্ত থাকবে কমিউনিটি ক্লিনিকে। এ ছাড়া সপ্তাহের একদিন অর্থাৎ শুক্রবার বন্ধ থাকবে।
কিন্তু মেঘলাল কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি হেনা আক্তার নিজের একক সিদ্ধান্তে সপ্তাহে দুদিন অর্থাৎ সোম ও বৃহস্পতিবার ক্লিনিকে আসেন, নির্ধারিত সময়ের আগে ক্লিনিক বন্ধ করে চলে যান বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
তাদের অভিযোগ, দীর্ঘ সাত বছর যাবত অদৃশ্য ক্ষমতার দাপটে একই স্থানে অফিস করছেন তিনি। সেবা নিতে আসা রোগীদের সঙ্গে করেন অশোভন আচরণ।
পরের দিন বৃহস্পতিবারের চিত্র একটু ভিন্ন, আগের দিন ক্লিনিকে সাংবাদিক এসেছে শুনে সকাল সকাল ক্লিনিকে চলে আসেন হেনা আক্তার।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক সেবাগ্রহীতা বলেন, এই ক্লিনিকে এত অনিয়ম তা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। বেশিরভাগ সময় এসে ঘুরে যেতে হয়, কোনো কর্মকর্তা না থাকার কারণে। এ ছাড়াও ওষুধ নিতে আসলে ঠিক মতো পাওয়া যায় না।
কমিউনিটি ক্লিনিকে কাজ করেন রশিদের মা। তিনি রোগী আসলে বসার ব্যবস্থা করাসহ অন্যান্য কাজ করেন। তিনি বলেন, ‘৬ মাসে আগে সপ্তাহে দুই দিন খোলা ছিল। আর কিছু বলতে পারমু না বাবা।’
মিতালি ক্লাব এলাকা থেকে সেবা নিতে যেতেন গর্ভবতী নারী নুপুর আক্তার। তিনি বলেন, আমি গর্ভবতী থাকা অবস্থায় ক্লিনিকে যেতাম। কিন্তু বেশিরভাগ সময় বন্ধ পেতাম। পরে হেনা মেডাম বলেন,আপনি অসুস্থ এভাবে এসে ঘুরে যান। আপনি প্রতি সোমবার ও বৃহস্পতিবার আসবেন। তার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ এর শেষ নেই।
আরেক ভুক্তভোগী শাহানাজ স্বপ্না জানান, ‘এই ক্লিনিকে এত অনিয়ম আর কোথাও আছে কিনা সেটা আমার জানা নেই। এখানে গেলে ঠিক মতো ঔষধ দিচ্ছে না, দিলেও দাম দ্বিগুণ করে নিচ্ছে। এ ছাড়াও তার মুখের ভাষা খুব খারাপ।
সরকারি নিয়ম উপেক্ষা করে কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ রাখার বিষয়ে জানতে চাইলে হেনা আক্তার বলেন, মাঝে মধ্যে এমনটা হয়। দূর থেকে আসি, অনেক সময় দেরি হয়। ছোট একটি বাচ্চা আছে বুঝেনতো।
তবে সপ্তাহে দুই দিন ক্লিনিকে আসার কথা অস্বীকার করে তিনি বলেন, অনেক অসময় অসুস্থ বিশেষ কারণে আসা হয় না। তখন হয়তোবা অনেকে এসে ঘুরে যান। তবে তাদের অভিযোগ সত্য নয়।
এদিকে স্থানীয়দের অভিযোগ অদৃশ্য ক্ষমতার জোরে হেনা আক্তার গত সাত বছর ধরে কোনাবাড়ির মেঘলাল কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি হিসেবে আছেন। প্রান্তিক পর্যায়ে মানুষের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করা হয়, তবে সিএইচসিপি হেনা আক্তারের দায়িত্বশীল কিছু লোকের দায়িত্বহীন কাজের জন্য কমিউনিটি ক্লিনিকের সেবার মান নষ্ট হচ্ছে বলে মনে করেন সচেতন মহল।
এ বিষয়ে গাজীপুর সদর উপজেলার স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাক্তার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, আপনাদের মাধ্যমে জানতে পারলাম হেনা আক্তার ঠিক মতো অফিস করে না। এর আগে কখনো এমন অভিযোগ কেউ করেনি। আমরা যারা ভিজিটে যাই তার হাজিরা খাতা চেক করবো। সে নিয়মিত অফিস করে কিনা। সরকারি কাজে ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ নাই। যদি ঘটনা সত্যি হয় তাহলে তার বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আপনার মতামত লিখুন :