ঢাকা সোমবার, ০১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ঝালকাঠিতে প্রতিবন্ধী যুবকের উদ্যোগে গ্রন্থাগার, জাগছে আশার আলো

মো. শাহীন আলম, ঝালকাঠি
প্রকাশিত: আগস্ট ৩১, ২০২৫, ০৯:৫৬ এএম
কবি সুফিয়া কামাল গ্রন্থাগারে বই পড়ছেন পাঠকরা। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

ঝালকাঠি শহরের বাকলাই সড়কের একসময়ের শান্তিপূর্ণ আবাসিক এলাকায় সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মাদকের ছায়া ঘন হয়ে উঠেছে। কিশোর–যুবকদের মধ্যে নেশার প্রবণতা বেড়ে যাওয়ায় চুরি–ছিনতাইয়ের মতো অপরাধও বাড়ছে।

এ নিয়ে অভিভাবক ও সচেতন মহল চরম উদ্বেগে। এমন সময়ে প্রতিবন্ধী এক যুবকের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত গ্রন্থাগার এলাকাবাসীর মধ্যে আশার আলো জাগিয়েছে।

এই ভিন্নধর্মী উদ্যোগের নাম ‘কবি সুফিয়া কামাল গ্রন্থাগার’। প্রতিষ্ঠাতা মো. মাহমুদুল হক পেশায় কম্পিউটার অপারেটর এবং শারীরিক প্রতিবন্ধী হলেও শৈশব থেকেই তার নেশা বই পড়া। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ও কাজী নজরুল ইসলাম তার প্রিয় সাহিত্যিক, আর ‘দেবদাস’ তার সবচেয়ে প্রিয় উপন্যাস। বইয়ের প্রতি এই টানই তাকে অনুপ্রাণিত করে সমাজে পরিবর্তনের হাতিয়ার হিসেবে একটি পাঠাগার প্রতিষ্ঠায়।

২০১০ সালে স্বপ্ন দেখা শুরু, নানা প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে ২০১৫ সালে নিজ বাড়ির ছাদে গ্রন্থাগারটির যাত্রা শুরু করেন মাহমুদুল। দুই বছর পর ২০১৭ সালে সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে নিবন্ধন পান। বর্তমানে প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গ্রন্থাগার খোলা থাকে। প্রায় ১২০০ বইয়ের সংগ্রহ রয়েছে এখানে, যা এসেছে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও দানশীল মানুষের সহায়তায়। আশেপাশের তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও স্থানীয় বাসিন্দারা নিয়মিত এখানে বই পড়েন ও দৈনিক পত্রিকা পড়েন।

শুক্রবার ও শনিবার পাঠাগার জমে ওঠে পাঠকের মিলনমেলায়। তবে কক্ষের আকার ছোট হওয়ায় জায়গা সংকুলান হয় না, আবার বৃষ্টির দিনে ছাদের ফোঁটায় ভোগান্তি পোহাতে হয়। পর্যাপ্ত বসার জায়গা ও আসবাবও নেই।

শিক্ষার্থী নাইম হোসেন প্রান্ত বলেন, ‘প্রতিদিনই এখানে আসি। পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি উপন্যাস পড়ে সময় কাটাই। পড়াশোনাতেও উপকার হয়।’

নিয়মিত পাঠক মো. মজিবুল হক বলেন, ‘আগে বই পড়ার আলাদা জায়গা ছিল না। এখন এখানে গল্প-উপন্যাস থেকে শুরু করে পত্রিকাও পড়তে পারি। মোবাইল আসক্তি থেকে মুক্তি মিলেছে।’

গ্রন্থাগারের প্রতিষ্ঠাতা মাহমুদুল হক বলেন, ‘আমি প্রতিবন্ধী মানুষ, অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। কিন্তু বইয়ের প্রতি প্রেম থেকেই পাঠাগার প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখি। এখনো অনেক বই ও আসবাব প্রয়োজন। ভালো পরিবেশ পেলে আরও বেশি মানুষ এখানে আসবে।’

ঝালকাঠি সরকারি মহিলা কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক ইমরান হোসেন রবিন বলেন, ‘লাইব্রেরি শিক্ষার্থীদের চরিত্র গঠনে ভূমিকা রাখে। বইয়ের প্রতি আগ্রহ বাড়লে তারা খারাপ আসক্তি থেকে দূরে থাকবে। সাধারণ মানুষও উপকৃত হবে।’

ছোট পরিসরে শুরু হলেও আজ ‘কবি সুফিয়া কামাল গ্রন্থাগার’ ঝালকাঠির বাকলাই এলাকায় মাদকমুক্ত সমাজ গড়ার আলোকবর্তিকা হয়ে উঠেছে। একজন প্রতিবন্ধী তরুণের অদম্য উদ্যম প্রমাণ করেছে— বইয়ের আলোই পারে অন্ধকার দূর করতে।