বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের নানা দাবিতে এক ধরনের চাপে অন্তর্বর্তী সরকার। আর এমন প্রেক্ষাপটে হঠাৎ-ই সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ‘পদত্যাগের ভাবনার’ কথা সামনে আসে। তার ভাবনার বিষয়টি নিয়ে এখন চলছে নানামুখী আলোচনা। বিশ্লেষকরা বলছেন, তার পদত্যাগ করা হবে ‘আবেগী সিদ্ধান্ত’।
তবে এ মুহূর্তে তার জাতির জন্য ‘দুর্যোগ’ আকার ধারণ করবে বলেও মনে করেন তারা। কারণ তিনি দায়িত্ব নিয়েছেন। আর দায়িত্বশীল জায়গা থেকে তার পদত্যাগ উচিত হবে না বলেও বিশেষকদের অভিমত।
রাশেদ আহমেদ চৌধুরী। সাবেক একজন রাষ্ট্রদূত। একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষকও।
‘যখন বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি দরকার স্থিতিশীলতা, এই সময় ওনার (ড. মুহাম্মদ ইউনূস) মতো একজন যদি চলে যায়, তা ঠিক হবে না’, বলেন রাশেদ আহমেদ চৌধুরী।
ড. ইউনূসের পদত্যাগে সুযোগ নেবে জুলাইবিরোধীরা
এই বিশ্লেষক এ-ও বলেন, ‘তাহলে জুলাই আগস্টের যে পরিবর্তনটা- যারা সেটা গ্রহণ করতে পারেনি, তারা এটাকে (ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পদত্যাগ) সুযোগ হিসেবে নেবে।’
নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও উইং কমান্ডার (অব.) সালাহউদ্দিন চৌধুরীর মতামতও প্রায় একই রকম।
এ মুহূর্তে অধ্যাপক ইউনূসের পদত্যাগ জাতির জন্য একটি ‘দুর্যোগ’ হিসেবেও আখ্যায়িত করেছেন তিনি।
‘এই মুহূর্তে পদত্যাগ করা মানে, ইট ইউল ব্রিং দ্য ডিজাস্টার ফর দ্য হোল নেশন’, বলেন সালাহউদ্দিন চৌধুরী।
ইউনূসের নেতৃত্বে জাতি ‘সমুদ্রের মাঝপথে’
ড. ইউনূসের পদত্যাগের আগ্রহকে ‘অভিমান’ হিসেবেও অভিহিত করেছেন সাবেক এই রাষ্ট্রদূত।
‘ওনার (ড. মুহাম্মদ ইউনূস) এতটা অভিমান বোধহয় ঠিক হবে না। কারণ তিনি দায়িত্ব নিয়েছেন।’
‘অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বে জাতি সমুদ্রের মাঝপথে আছে। এমন স্থানে ফেলে রেখে চলে যাওয়া ঠিক হবে না’ বলেও মনে করেন এই বিশ্লেষক।
‘দ্য ক্যাপ্টেন অব এ শিপ নাও। সমুদ্রের মাঝপথে আমরা। এখানে রেখে যাওয়া দায়িত্বশীল আচরণ হবে না।’
ইউনূসের উচিত হবে সবার সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন
এই বিশ্লেষকরা বলছেন, পদত্যাগ না করে ড. ইউনূসের উচিত হবে এখন প্রতিবেশী রাষ্ট্র, রাজনৈতিক দল ও সেনাবাহিনী-সবার সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন করা। একই সঙ্গে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের একটি রোডম্যাপ দেওয়া।
গত বৃহস্পতিবার (২২ মে) প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ করতে পারেন বলে গুঞ্জন ওঠে।
ওই সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দেখা করেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
পরে নাহিদ ইসলাম একটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকেও বলেন, তারা সকাল থেকেই প্রধান উপদেষ্টার ‘পদত্যাগের’ কথা শুনেছেন।
এ কারণেই তার সঙ্গে দেখা করেন তিনি। ‘স্যার বলছেন আমি যদি কাজ করতে না পারি... যে জায়গা থেকে তোমরা আমাকে আনছিলা একটা গণ-অভ্যুত্থানের পর। দেশের পরিবর্তন, সংস্কার.....। কিন্তু যেই পরিস্থিতি যেভাবে আন্দোলন বা যেভাবে আমাকে জিম্মি করা হচ্ছে’, বলেন নাহিদ ইসলাম।
এ সময় প্রধান উপদেষ্টাকে পদত্যাগের মতো সিদ্ধান্ত না নিতে আহ্বান জানিয়েছেন বলেও জানান নাহিদ ইসলাম। ‘আমাদের গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা এবং জাতীয় নিরাপত্তা ও দেশের ভবিষ্যৎ সবকিছু মিলিয়ে উনি যাতে শক্ত থাকেন এবং সবগুলা দলকে নিয়ে যাতে ঐক্যের জায়গায় থাকেন। সবাই তার সঙ্গে আশা করি কো-অপারেট করবেন।’, প্রধান উপদেষ্টাকে নাহিদ।
আপনার মতামত লিখুন :