কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় দেশের সবচেয়ে বড় ঈদ জামাতকে লক্ষ্য করে সংঘটিত জঙ্গি হামলার আজ ৯ বছর পূর্ণ হলো। ২০১৬ সালের ৭ জুলাই, ঈদুল ফিতরের সকালে শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানের অদূরে মুফতি মোহাম্মদ আলী জামে মসজিদের পাশে পুলিশের নিরাপত্তা চৌকিতে হামলা চালায় জঙ্গিরা।
সকাল সাড়ে ৮টার দিকে শুরু হওয়া ওই হামলায় চাপাতি ও কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় পুলিশের কনস্টেবল জহিরুল ইসলাম ও আনছারুল হককে। পরে ঘটনাস্থলের পাশেই রান্নার কাজে ব্যস্ত গৃহবধূ ঝর্ণা রাণী ভৌমিক গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। পুলিশ সদস্যদের পাল্টা গুলিতে জঙ্গি আবির রহমান নিহত হয় এবং শফিউল ইসলাম নামের এক জঙ্গিকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় গ্রেপ্তার করা হয়।
তবে পরদিন রাতেই ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে কিশোরগঞ্জে আনার পথে নান্দাইলের বড়াইগ্রামে ওঁৎ পেতে থাকা সন্ত্রাসীরা শফিউলকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় র্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয় সে। ওই হামলায় পুলিশের আরও ৮ সদস্য আহত হন।
হামলার ঘটনায় পাকুন্দিয়া থানার তৎকালীন ওসি মো. সামসুদ্দিন বাদী হয়ে ২৪ জনকে আসামি করে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করেন। মামলার তদন্তে উঠে আসে, অভিযুক্তদের মধ্যে ১৯ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে বিভিন্ন সময় বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন।
২০১৮ সালের ১২ সেপ্টেম্বর পাঁচ জীবিত আসামির বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করে পুলিশ। বর্তমানে মামলাটি বিচারাধীন।
বর্তমানে বিচারাধীন পাঁচ আসামি হলেন- কিশোরগঞ্জের জাহিদুল হক তানিম (২৭), গাইবান্ধার জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব গান্ধী (৩৪), কুষ্টিয়ার সোহেল মাহফুজ (৩৫), চাঁপাইনবাবগঞ্জের ‘বড় মিজান’ (৬২) ও গাইবান্ধার আনোয়ার হোসেন (৪৮)। এর মধ্যে তিনজনকে চলতি মাসের ৫ আগস্টের পর জামিন দিয়েছেন আদালত।
নিহত গৃহবধূ ঝর্ণা রাণীর ছেলে বাসুদেব ভৌমিক বলেন, ‘প্রতিবছর এই দিনে মায়ের কথা খুব মনে পড়ে। এখনো আমার ছোট ভাই রাতে আতকে ওঠে। বাবার ইচ্ছা ছিল মৃত্যুর আগে বিচার দেখে যাওয়া, তা আর সম্ভব হলো না। দ্রুত বিচার শেষ হোক এটাই আমাদের একমাত্র দাবি।’
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী (পিপি) মো. জালাল উদ্দিন জানান, ‘মামলার ১০১ সাক্ষীর মধ্যে ৭৮ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। বর্তমানে ম্যাজিস্ট্রেট, চিকিৎসক ও তদন্ত কর্মকর্তাদের সাক্ষ্য গ্রহণের প্রস্তুতি চলছে। আগামী ১৮ আগস্ট মামলার পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘চার্জশিটভুক্ত আসামিদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি ও উপস্থাপিত সাক্ষ্য-প্রমাণে অভিযোগ প্রমাণের জন্য যথেষ্ট উপাদান রয়েছে। আমরা সর্বোচ্চ শাস্তির জন্য মামলাটি পরিচালনা করছি। তবে সাক্ষীদের সময়মতো আদালতে হাজির করা না যাওয়ায় বিচারকাজ দীর্ঘায়িত হচ্ছে।’