ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই, ২০২৫

জ্ঞান ফিরতেই দেখলাম, চারদিকে অচেনা পুরুষ-চাঞ্চল্যকর বর্ণনায় মাহিরা

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: জুলাই ৪, ২০২৫, ১০:৩৬ এএম
শিক্ষার্থী মাহিরা বিনতে মারুফ। ছবি- সংগৃহীত

এইচএসসি পরীক্ষা দিতে বেরিয়ে রাজধানী থেকে নিখোঁজ হওয়া শিক্ষার্থী মাহিরা বিনতে মারুফকে ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছিল। রোববার (৩০ জুন) ভোরে মিরপুর কলেজ কেন্দ্রে যাওয়ার পথে তিনি নিখোঁজ হন। পরে নাটকীয়ভাবে একটি নির্মাণাধীন ভবন থেকে পালিয়ে আসেন তিনি। তার বর্ণনায় উঠে এসেছে রীতিমতো সিনেমার মতো অপহরণ চেষ্টার গল্প।

সকাল সাড়ে ৭টায় কুড়িল বসুন্ধরা গেট এলাকা থেকে একটি ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলে চড়ে মাহিরা মিরপুরে পরীক্ষাকেন্দ্রে রওনা দেন। কিন্তু মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বর এলাকায় তীব্র যানজটে পড়েন। এরপর রাস্তায় কিছুটা হেঁটে গিয়ে বাসে ওঠেন তিনি। বাসে ওঠার পর পাশের সিটে বসেন এক মধ্যবয়সী নারী। কিছু সময় পর ওই নারীর সঙ্গে বাসের জানালা দিয়ে বাইরে থেকে কিছু একটা আদান-প্রদান হয়, যা মুহূর্তেই মাহিরার নাকের কাছে ধরে দেওয়া হয়। এরপর তিনি ধীরে ধীরে অচেতন হয়ে পড়েন।

জ্ঞান ফেরার পর নিজেকে আবিষ্কার করেন টিন দিয়ে ঘেরা একটি নির্মাণাধীন ভবনের একটি কক্ষে। তার আশপাশে ছিলেন একজন নারী ও চার থেকে পাঁচজন পুরুষ। তাদের মধ্যে একজন ছিলেন ওই নারী যিনি বাসে তার পাশে বসেছিলেন। একজন পুরুষকেও চিনতে পেরেছেন মাহিরা, যিনি বাসে সামনে বসা ছিলেন। বাকি পুরুষদের দেখতে বিদেশি মনে হয়েছে তার।

অপহরণকারীরা নিজেদের মধ্যে বাংলায় ও অন্য এক ধরনের ভাষায় আলোচনা করছিল।

মাহিরার বক্তব্য অনুযায়ী, তাকে কোথায় নিয়ে যাবে, কীভাবে পোশাক বদলিয়ে বের করবে, এ নিয়ে আলাপ করছিল তারা।

মাহিরা বলেন, আমার পোশাক পরিবর্তন করিয়ে চুল কাটার পরিকল্পনা করছিল তারা যেন আমাকে কেউ চিনতে না পারে।

এই সময় চেঞ্জ করার অজুহাতে একা একটি ঘরে থাকার সুযোগ পান মাহিরা। পাশের কক্ষে বাকিদের মধ্যে কথাকাটাকাটির এক ফাঁকে তিনি নিচে নেমে ভবন থেকে পালিয়ে যান। প্রায় ৪০ থেকে ৫০ মিনিট হাঁটাহাঁটি ও দৌড়ে তিনি একপর্যায়ে ঢাকা-মানিকগঞ্জ মহাসড়কে পৌঁছান। এরপর অনেকেই সাহায্য করতে রাজি না হলেও একজন বাইকার তাকে সাভারের নিউমার্কেট এলাকার কাছে নামিয়ে দেন।

একটি টং দোকানের সহায়তায় বাবার সঙ্গে যোগাযোগ করেন মাহিরা। পরে পরিবারের সদস্যদের সহযোগিতায় পুলিশ ও র‍্যাব এসে তাকে উদ্ধার করে।

পরিবারের সদস্যরা জানায়, মাহিরা ও পরিবারের অন্য সদস্যরা বেশ ট্রমায় আছেন। মাহিরা তার বড় বোন মারিয়া ছাড়া অন্য কারও সঙ্গে কথা বলছেন না। তবে একটি পরীক্ষা দিতে না পারলেও পরের সব পরীক্ষা দিচ্ছেন। পরীক্ষা দেওয়ার জন্য মানসিক সাপোর্ট জোগাচ্ছেন তার পরিবারের সদস্যরা।

বড় বোন মারিয়া বলেন, মাহিরাসহ আমাদের পরিবারের সবাই বেশ ট্রমার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। ও মানসিকভাবে এখনো স্থিতিশীল নয়। আমরা ওর বাকি পরীক্ষার ব্যাপারে ভাবছি।

এই বিষয়ে কোনো আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে কি না-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মাহিরা একটু স্থিতিশীল হলে ওর স্টেটমেন্টের ভিত্তিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে।

মাহিরার মা ভাটারা থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন।

থানার ওসি রকিবুল হাসান বলেন, শিক্ষার্থী উদ্ধার হয়েছে এবং পরিবারের জিম্মায় দেওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি। পরিবার অভিযোগ করলে আমরা ব্যবস্থা নেব।

তিনি আরও বলেন, ঘটনাটি প্রেমঘটিত না অপহরণ-এখনই নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না। তদন্তের পর বিস্তারিত জানা যাবে।