কুমিল্লার মুরাদনগরের আলোচিত ধর্ষণকাণ্ডের মূল রহস্য ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ এই ঘটনার নেপথ্যে রয়েছে বলে জানা গেছে।
রামচন্দ্রপুর দক্ষিণ ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলী সুমনের নেতৃত্বে নারীকে ওইদিন বিবস্ত্র করে নির্যাতন ও ভিডিও ধারণ করা হয়। স্থানীয় লোকজন, প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানতে পেরেছে দেশের একটি গণমাধ্যম।
প্রতিবেদনে তারা উল্লেখ করেছে, মুরাদনগর উপজেলার রামচন্দ্রপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের বাহেরচর গ্রামের ওই নারীর স্বামী দুবাই প্রবাসী। তার সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্ক ছিল ফজর আলীর। টাকারও লেনদেন ছিল তাদের মধ্যে।
এই সূত্র ধরে গত বৃহস্পতিবার রাতে ওই নারীর ঘরে প্রবেশ করেন ফজর আলী। তাকে ধরতে ছাত্রলীগ নেতা সুমনের নেতৃত্বে কয়েকজন ফাঁদ পাতে। পরে পরিকল্পনামাফিক নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন ও ভিডিও করে তা ছড়িয়ে দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে রামচন্দ্রপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গোলাম কিবরিয়া খোকনের সঙ্গেও কথা বলে গণমাধ্যমটি। সেখানে তিনি বলেন, এটা শুধু একটা পরকীয়ার ঘটনা। ফজর আলীর সঙ্গে ওই নারীর দীর্ঘদিন ধরে প্রেমের সম্পর্ক ছিল।
তিনি বলেন, ‘বৃহস্পতিবার ফজর আলী ওই বাড়ির দিকে রওনা করলে ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি সুমনের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী তাকে হাতেনাতে ধরার জন্য ফাঁদ পাতে। এ সময় ফজর আলী ওই নারীর ঘরে প্রবেশ করলে ছাত্রলীগ সভাপতি সুমনসহ তার সঙ্গীরা তাদের হাতেনাতে আটক করে।’
‘প্রথমে ফজর আলীকে বেধড়ক পিটিয়ে তার হাত-পা ভেঙে দেওয়া হয়। পরে ওই নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন এবং ভিডিও ধারণ করা হয়। এরপর সেই ভিডিও পরিকল্পিতভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়’ যোগ করেন চেয়ারম্যান গোলাম কিবরিয়া খোকন।
ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের মতো একই কথা বলেন স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল করিমও। তিনি এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত সবার কঠিন বিচার দাবি করেন।
স্থানীয় বাহেরচর এলাকার বাসিন্দা আবুল কালাম ওই গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ছাত্রলীগ নেতা সুমনের নেতৃত্বে একদল বখাটে দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় নানা অপকর্ম করে আসছে। তারা রাতের অন্ধকারে গ্রামের অলিগলিতে ঘুরে ঘুরে শুধু এসব খুঁজে বেড়ায়। কার ঘরে কে প্রবেশ করছে এবং কে পরকীয়ায় লিপ্ত হচ্ছে এসব ধরার জন্যই তারা ফাঁদ পেতে থাকে। এগুলোকে ফিটিং কেস বলা হয়। এসব করে তারা মানুষকে জিম্মি করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।’
এ বিষয়ে মুরাদনগর থানার ওসি জাহিদুর রহমান বলেন, গ্রেপ্তার পাঁচজনের মধ্যে সুমন রামচন্দ্রপুর দক্ষিণ ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি। সুমন বাহেরচর গ্রামের আব্দুল হান্নানের ছেলে। আমরা তার রাজনৈতিক পরিচয় এবং স্থানীয়ভাবে তার কর্মকাণ্ড যাচাই-বাছাই করেছি। মূলত ছাত্রলীগ সভাপতি সুমনের নেতৃত্বে ওই নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন এবং ভিডিও ধারণ করা হয়। আমরা গ্রেপ্তারদের জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত রেখেছি। ঘটনার নেপথ্যের কারণগুলো খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি। স্থানীয়রা বলছেন, পরকীয়া কিন্তু বিষয়টি নিয়ে আরও অনেক তদন্ত করা দরকার। তদন্তের পরই সবকিছু বেরিয়ে আসবে।
কুমিল্লার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নাজির আহমেদ খান বলেন, ঘটনা যেটাই হোক না কেন যারা জড়িত রয়েছে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।