কিশোরগঞ্জে জাতীয় যুবশক্তির সদ্য ঘোষিত আহ্বায়ক কমিটিকে ঘিরে শুরু হয়েছে তীব্র বিতর্ক ও তোলপাড়। অভিযোগ উঠেছে, অর্থের বিনিময়ে আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের পুনর্বাসন করা হচ্ছে এ সংগঠনে। এর ফলে একদিকে বিভক্ত হয়ে পড়েছে সংগঠন, অন্যদিকে নতুন নেতৃত্বের বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
নবগঠিত কমিটির শীর্ষ দুই পদে থাকা আহ্বায়ক মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান ও মুখ্য সংগঠক আলিমুল হক আলিমের বিরুদ্ধে সরাসরি অভিযোগ উঠেছে, তারা অতীতে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। শুধু তা-ই নয়, নতুন কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা বাণিজ্যের মতো কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকারও অভিযোগ তোলা হয়েছে।
সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে জেলা শহরে নিজ বাসায় সংবাদ সম্মেলন করেন নবগঠিত কমিটির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ইয়াজ ইবনে জসিম।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানের আহত ও শহীদদের আত্মত্যাগের সাথে বেইমানি করে টাকার বিনিময়ে এই কমিটি গঠন করা হয়েছে। আমাকে যুগ্ম আহ্বায়ক রাখা হলেও পুরো কমিটিই বিতর্কিত। আমাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়নি, অথচ বাইরে থেকে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের কর্মীদের এনে বড় পদে বসানো হয়েছে। মুখ্য সংগঠক আলিমুল হক দীর্ঘদিন সেচ্ছাসেবক দলের সক্রিয় কর্মী হিসেবে কাজ করেছেন। টাকার বিনিময়ে এবং কিছু প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় হঠাৎ করে এই কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে।’
তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ‘অবিলম্বে এই কমিটি স্থগিত না করা হলে আমরা কঠোর আন্দোলনের ডাক দিতে বাধ্য হব।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আইনুল ইসলাম ঝলক, জাতীয় যুবশক্তি কিশোরগঞ্জ জেলা শাখার দপ্তর সম্পাদক এস. এম. রাজিব, ওয়ারিয়র্স অফ জুলাই সদস্য মামুন মিয়া, যুগ্ম সদস্য সচিব শুভসহ কয়েকজন জুলাই যোদ্ধা।
আইনুল ইসলাম ঝলক বলেন, ‘এই কমিটিতে আওয়ামী লীগের বড় বড় নামধারী ও আত্মীয়-স্বজনদের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো হয়েছে। কমপক্ষে ৭-৮ জন আওয়ামী লীগপন্থি এতে অন্তর্ভুক্ত। এমনকি আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা প্রকাশ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন যে আহ্বায়ক মাহফুজুর রহমান সাবেক ছাত্রলীগ নেতা। এভাবে যুবশক্তিকে ব্যবহার করে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের চেষ্টা চলছে।’
এদিকে বিকেল ৪টার দিকে শহরের শেরাটন হোটেলের অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয় নবগঠিত জাতীয় যুবশক্তি কিশোরগঞ্জ জেলা শাখা কমিটির পরিচিতি সভা। সাংবাদিকরা অভিযোগের বিষয়ে প্রশ্ন করলে আহ্বায়ক মাহফুজুর রহমান ছাত্রলীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার বিষয়টি স্বীকার করেন। তবে তিনি দাবি করেন, ‘২০০৭ সাল থেকেই আমি রাজনীতি থেকে দূরে আছি। বটতলা বাজার কমিটির পদে থাকার কারণে সাবেক সাংসদ রেজওয়ান আহমেদ তৌফিকের সঙ্গে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যেতে হয়েছে। সেটাকেই এখন ভুলভাবে প্রচার করা হচ্ছে।’
একই সুরে মুখ্য সংগঠক আলিমুল হক জানান, ‘তিনি দীর্ঘদিন ধরে মহিনন্দ ইউনিয়নের বিভিন্ন বাজারের ইজারাদার। এ কারণে বহু অনুষ্ঠানে রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে তার ছবি তুলতে হয়েছে। আর সেই ছবিগুলো দিয়েই এখন অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।’
জাতীয় যুবশক্তি কিশোরগঞ্জ জেলা শাখার আহ্বায়ক মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমানের সভাপতিত্বে ও সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মো. মানিক মিয়া এবং সিনিয়র সদস্য সচিব কাউসার মিয়ার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শহীদ মো. রুবেল আব্দুল্লাহর পিতা মো. আজহারুল ইসলাম। এ ছাড়া জাতীয় যুবশক্তির জেলার নেতৃবৃন্দও অংশ নেন।
অনুষ্ঠানে নবগঠিত জেলা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ নেতৃবৃন্দকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়। বক্তারা জানান, তরুণ প্রজন্মকে সঙ্গে নিয়ে জাতীয় যুবশক্তি সমাজ গঠনে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে চায়।
তবে এর আগেই গত রাতে কিশোরগঞ্জ প্রেস নামে স্থানীয় একটি গণমাধ্যমে মুখ্য সংগঠকের আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ততার খবর প্রকাশ হলে বিষয়টি দ্রুত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। নেটিজেনদের তীব্র সমালোচনায় কমিটি নিয়ে বিতর্ক আরও উসকে ওঠে। এরপরই ইয়াজ ইবনে জসিম ফেসবুকে ঘোষণা দেন দ্রুত কমিটি স্থগিত না করলে নেবেন পদত্যাগের মতো সিদ্ধান্ত।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন