লক্ষ্মীপুর জেলা পরিষদ ভবনের প্রধান গেট ও নিরাপত্তা দেওয়াল নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৩০ লাখ টাকা। সম্প্রতি গেটটি উদ্বোধন করা হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কোনো টেন্ডার ছাড়াই জেলা পরিষদের সহকারী প্রকৌশলী নাজিমুল হক সরকার নিজেই ঠিকাদার হয়ে কাজটি বাস্তবায়ন করেছেন।
পরে অন্যজনের একটি ঠিকাদারি লাইসেন্স ব্যবহার করে বিল উত্তোলন করেন তিনি। এছাড়া পরিষদের পুকুরের দক্ষিণ পাশে আরসিসি ঢালাইয়ের কাজও করেন তিনি। তবে কত টাকার কাজ হয়েছে বা কোন প্রতিষ্ঠান কাজ করেছে এসব তথ্য জানাতে রাজি নন তিনি।
এদিকে রোববার (২৬ অক্টোবর) দুপুরে সংবাদ সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহে জেলা পরিষদ কার্যালয়ে গেলে সাইফুল ইসলাম নামে সাংবাদিককে গেটেই আটকে দেওয়া হয়। সহকারী প্রকৌশলীর নির্দেশে তাকে প্রবেশে বাধা দেওয়া হয়।
সাংবাদিক সাইফুল ইসলাম বলেন, বাধা পেয়ে আমি মোবাইলফোনে প্রকৌশলী নাজিমুল হককে ফোন দেই। তিনি বলেন, সেনাবাহিনী যদি প্রবেশে অনুমতি না দেয়, তাহলে ঢুকতে পারবেন না। কিন্তু গেটে থাকা সেনাসদস্যরা আমাকে জানান, তাদের পক্ষ থেকে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। ভিতর থেকেই সাংবাদিকদের প্রবেশে বাধা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
জেলা পরিষদ সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালের ২২ আগস্ট নাজিমুল হক উপ-সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে যোগ দেন। তখন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মো. শাহজাহান। তার আশীর্বাদে অল্প সময়েই নাজিমুল হক ভারপ্রাপ্ত সহকারী প্রকৌশলীর দায়িত্ব পান।
এরপর থেকে উপ-সহকারী ও সহকারী প্রকৌশলীর উভয় দায়িত্ব তিনি নিজেই পালন করেন। এমনকি উপ-সহকারী প্রকৌশলী ও সহকারী প্রকৌশলীর স্বাক্ষর তিনি একাই দিতে থাকেন। এভাবে কেটে যায় পাঁচ বছর। তবে জেলা পরিষদের তথ্য বাতায়নে দেখা যায়, তিনি ২০২৪ সালের ১ ডিসেম্বর থেকে সহকারী প্রকৌশলীর দায়িত্বে আছেন এ নিয়েও রয়েছে ধোঁয়াশা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তিনজন ঠিকাদার জানান, সহকারী প্রকৌশলী নাজিমুল হকসহ আরও কয়েকজন কর্মকর্তা অন্য ঠিকাদারদের লাইসেন্স ব্যবহার করে প্রকল্পের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। তাদের মধ্যে নাজিমুল হকের প্রভাব সবচেয়ে বেশি। সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী তার কাছে জিম্মি। তিনিই প্রকৌশলী, তিনিই ঠিকাদার এই অবস্থায় সাধারণ ঠিকাদাররা অসহায় হয়ে পড়েছেন। বর্তমানে জেলা পরিষদে প্রায় দুই শতাধিক ঠিকাদারের লাইসেন্স রয়েছে। বছরের পর বছর লাইসেন্স নবায়ন করলেও অনিয়মের কারণে তারা কাজ পান না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ঠিকাদার ও এক কর্মকর্তা জানান, গেটের কাজের কোনো টেন্ডার হয়নি। সহকারী প্রকৌশলী নিজেই কাজ করিয়েছেন। বিল উত্তোলনের জন্য ঠিকাদার বিল্লাল হোসেন বাবলুর লাইসেন্স ব্যবহার করেছেন। গত ২১ অক্টোবর জেলা পরিষদের প্রশাসক ও জেলা প্রশাসক রাজীব কুমার সরকার এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আশরাফুন নাহার গেটটি উদ্বোধন করেন।
জেলা পরিষদ কার্যালয়ে গিয়ে বিষয়টি জানতে চাইলে সহকারী প্রকৌশলী নাজিমুল হক সরকার বলেন, গেট নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৩০ লাখ টাকা। এখানে সেনাবাহিনীর ক্যাম্প থাকায় টেন্ডার আহ্বান করা হয়নি। অল্প সময়ের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করতে হয়েছে। মা-বাবার দোয়া নামে এক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এই কাজ করেছে।
তবে প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারীর নাম জানতে চাইলে তিনি তা জানাননি এবং বলেন, এ বিষয়ে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলুন।
লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক ও জেলা পরিষদের প্রশাসক রাজীব কুমার সরকার বলেন, গেটের কাজ কে বা কারা করেছে, তা কাগজপত্র দেখে বলতে হবে। সহকারী প্রকৌশলী নিজে কাজ করেছেন কিংবা অন্য ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের নামে বিল তুলেছেন কি না, সে বিষয়ে এখনই কিছু বলতে পারছি না। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে হবে।


সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন