ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে অরক্ষিত সেপটিক ট্যাংকে পড়ে কানিজ ফাতেমা (৪) নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) আনুমানিক বেলা ১টার দিকে উপজেলার উচাখিলা ইউনিয়নের মরিচারচর পূর্বপাড়া গ্রামের কাওসার মিয়ার নবনির্মিত বাড়ির সেপটিক ট্যাংকে পড়ে এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনাটি ঘটে।
নিহত ফাতেমা একই গ্রামের কামাল হোসেনের মেয়ে। তিন সন্তানের মধ্যে ফাতেমা ছিল দ্বিতীয়।
নিহতের পরিবার সূত্রে জানা যায়, ওইদিন দুপুরে বাড়ির আঙিনায় খেলার সময় পাশের প্রতিবেশী কাওসারের নবনির্মিত বাড়ির অরক্ষিত সেপটিক ট্যাংকে পড়ে যায় শিশুটি।
মা শাহনাজ বেগম বলেন, ‘আমার মেয়ে ফাতেমা বাড়ির সামনে খেলছিল। পাশে কাওসার ঘর নির্মাণের কাজ করছিল। দুপুরে মেয়েকে গোসল করাতে ডাকছিল তার বাবা। বাড়ির সামনে গিয়ে দেখি, মেয়ে নেই, আর কাওসারও নিখোঁজ। অনেক খোঁজা-খুঁজির পর কাওসারের নির্মাণাধীন বাড়ির সেপটিক ট্যাংকে গিয়ে দেখি, মেয়েটা ভেসে আছে। আমাদের সন্দেহ- কাওসারই আমার মেয়েকে মেরে ট্যাংকে ফেলে দিয়েছে। আমি এর দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই, যেন আর কোনো মায়ের বুক এভাবে খালি না হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘কাওসারের ঘরের ছাদে প্রায়ই আমার ছেলে-মেয়েরা খেলার ছলে উঠে যেত। এতে কাওসার রেগে যেত। আমরা তাকে একাধিকবার সিঁড়িতে গেট লাগাতে এবং অরক্ষিত সেপটিক ট্যাংকে ঢাকনা দিতে বলেছি। কিন্তু সে বলেছিল, ‘একটা মরলে পরে ঢাকনা দিব’। আজ তাই হয়েছে।’
বাবা কামাল হোসেন বলেন, ‘এই অরক্ষিত সেপটিক ট্যাংকেই আমার মেয়ের মৃত্যু হয়েছে। নিজের কষ্টার্জিত অর্থে ছেলে-মেয়েদের লালন-পালন করছি। মেয়েটা খেলনা চেয়েছিল, গতকালই তাকে খেলনা কিনে দিয়েছিলাম। কিন্তু সে সেগুলো দিয়ে ভালো করে খেলতেই পারলো না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা একাধিকবার কাওসারকে বিষয়টি জানিয়েছিলাম, কিন্তু সে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। আমি এই পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করছি।’
ঘটনার পর থেকেই কাওসার মিয়া পলাতক রয়েছেন। তার বাড়িতে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি এবং তাদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনগুলো বন্ধ পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে ঈশ্বরগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার রাম প্রসাদ পাল বলেন, ‘সেপটিক ট্যাংকে শিশু পড়ে যাওয়ার খবর পেয়ে আমাদের একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে যায়। ট্যাংকের ভেতর থেকে শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করে বডিব্যাগে ভরে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।’
ঈশ্বরগঞ্জ থানার ওসি মো. ওবায়দুর রহমান বলেন, ‘শিশু মৃত্যুর খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করেছি। সুরতহাল সম্পন্ন করে ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। প্রয়োজনীয় অন্যান্য আইনগত প্রক্রিয়াও চলমান রয়েছে।’