নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলার এক রাজনৈতিক নেতাকে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে 'জেলার শ্রেষ্ঠ ইমাম' সম্মাননা প্রদান করায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। অথচ স্থানীয়রা বলছেন, যাকে ইমাম হিসেবে পুরস্কৃত করা হয়েছে, তিনি আদৌ কোনো মসজিদের ইমাম নন। এ নিয়ে জেলাজুড়ে ইমামদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ এবং ফাউন্ডেশনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
শ্রেষ্ঠ ইমাম হিসেবে পুরস্কারপ্রাপ্ত ব্যক্তি হলেন জসিম উদ্দিন। তিনি বারহাট্টা উপজেলার বিক্রমশ্রী গ্রামের বাসিন্দা। বর্তমানে ইসলামিক ফাউন্ডেশন পরিচালিত কোরআন শিক্ষা কেন্দ্রের উপজেলা শাখার মডেল কেয়ারটেকার পদে কর্মরত আছেন। এছাড়া তিনি স্থানীয় হেফাজতে ইসলামের সাধারণ সম্পাদক এবং মোটরশ্রমিক ইউনিয়নের যুগ্ম সম্পাদক পদেও রয়েছেন।
গত ২৯ জুন ঢাকার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের আয়োজনে জাতীয় ইমাম সম্মেলনে তাকে 'নেত্রকোনা জেলার শ্রেষ্ঠ ইমাম' হিসেবে সনদ ও চেক দিয়ে সম্মাননা দেওয়া হয়। প্রধান অতিথি ছিলেন ধর্মবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন।
এই সম্মাননার খবর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তেই শুরু হয় বিতর্ক।
স্থানীয়রা দাবি করেন, জসিম উদ্দিন কোনো দিন ইমামতি করেননি। যে মসজিদের ইমাম হিসেবে তাকে দেখানো হয়েছে, সেই বিক্রমশ্রী জামে মসজিদে ২০১৪ সাল থেকে ইমামতি করছেন রফিকুল ইসলাম।
রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে ইমামতি করে যাচ্ছি, অথচ তালিকায় আমাদের নামই নেই। যারা প্রকৃত ইমাম নয়, তাদের এমনভাবে পুরস্কৃত করা প্রকৃত ইমামদের প্রতি চরম অবমাননা।’
জানতে চাইলে জসিম উদ্দিন বলেন, ‘আমি বিভিন্ন সময় বেশ কয়েকটি মসজিদে ইমামতি করেছি। জেলা সদর ও ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের মসজিদেও দায়িত্ব পালন করেছি। ফাউন্ডেশনের ১৫টির বেশি প্রশিক্ষণ নিয়েছি।’
তবে এলাকাবাসী বলছেন, তাকে ইমাম হিসেবে কখনো দেখেননি।
বারহাট্টা হাফিজিয়া মাদ্রাসার মোহতামিম ও সাবেক ইমাম আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘গত ১৫ বছরেও জসিম উদ্দিন কোনো মসজিদে ইমামতি করেননি। ফাউন্ডেশনের মতো প্রতিষ্ঠানের এমন কারচুপি দুঃখজনক।’
জেলা ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বর্তমান উপপরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘এই নির্বাচনের কাজটি আগের উপপরিচালক শফিকুর রহমান সরকার করেছেন। তিনি দুর্নীতির অভিযোগে বরখাস্ত হয়েছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘উপজেলা কমিটি প্রাথমিকভাবে ২০ জনের তালিকা দেয়। সেখান থেকে যাচাই-বাছাই করে একজনকে জেলার শ্রেষ্ঠ ইমাম হিসেবে নির্বাচিত করা হয়।’
এ ঘটনায় জেলায় সহস্রাধিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত পেশাদার ইমামের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। অনেকে মনে করছেন, যাচাই-বাছাই না করে এমন পুরস্কার প্রদান করা হলে প্রকৃত ইমামরা উৎসাহ হারাবেন এবং প্রতিষ্ঠানটির প্রতি জনআস্থা কমবে।
আপনার মতামত লিখুন :