উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও টানা বৃষ্টিপাতে উত্তরের তিস্তা নদীর পানি আবারও ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। নীলফামারীর ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ৭ সেন্টিমিটার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছে, ফলে নদীতীরবর্তী গ্রামগুলোতে দেখা দিয়েছে আকস্মিক বন্যার আশঙ্কা।
বুধবার (১৩ আগস্ট) সকাল ৬টায় ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানির স্তর রেকর্ড করা হয়েছে ৫২.২২ মিটার, যা বিপৎসীমা (৫২.১৫ মিটার) অতিক্রম করেছে।
ডালিয়া ডিভিশনের উপ-সহকারী প্রকৌশলী (পানি শাখা) তহিদুল ইসলাম জানান, ‘ভারতের উজানে ভারী বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলের কারণে নদীর পানি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘নিম্নাঞ্চল ও চরগ্রামগুলো এরই মধ্যে প্লাবিত হয়েছে। ধারণা করছি, সন্ধ্যার মধ্যেই পানি আরও বাড়তে পারে।’
বন্যার পানি নিয়ন্ত্রণে তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি স্লুইসগেট পুরোপুরি খুলে দেওয়া হয়েছে।
পাউবো জানিয়েছে, ‘সতর্কাবস্থায় থেকে সার্বক্ষণিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
তিস্তার পানি বৃদ্ধিতে ডিমলা উপজেলার পূর্ব ছাতনাই, খগাখাড়িবাড়ী, টেপাখড়িবাড়ী, খালিশা চাপানী, ঝুনাগাছ চাপানী, গয়াবাড়ী এবং জলঢাকার গোলমুন্ডা, ডাউয়াবাড়ী, শৌলমারী ও কৈমারী ইউনিয়নের বহু নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের ভাষ্যমতে, ‘এইসব এলাকার প্রায় পাঁচ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে চর এলাকার গ্রামগুলো।’
পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান বলেন, ‘সবচেয়ে বড় চর গ্রাম ঝাড়সিংশ্বরসহ বেশ কিছু গ্রামে বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে। ফসলি জমি তলিয়ে গেছে, গবাদিপশুর নিরাপত্তা নিয়ে দুশ্চিন্তা বাড়ছে। পরিস্থিতি দিন দিন ভয়াবহ হয়ে উঠছে।’
তিস্তার পানি বৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে লালমনিরহাটের হাতিবান্ধা ও কালিগঞ্জ উপজেলাতেও। নদীবেষ্টিত চর ও গ্রামগুলোতে হাঁটু সমান পানি ঢুকে পড়েছে। অনেকে তাদের গবাদিপশু ও ঘরের মালামাল নিয়ে উঁচু জায়গায় আশ্রয় নিচ্ছেন।
ডালিয়া ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী অমিতাভ চৌধুরী জানান, ‘গতকাল পর্যন্ত তিস্তার পানি বিপৎসীমার নিচে ছিল। তবে আজ সকাল থেকে তা ৭ সেন্টিমিটার ওপরে রয়েছে। পরিস্থিতি খারাপের দিকে যেতে পারে, তাই আমরা স্লুইসগেট খোলা রেখেছি এবং সতর্ক অবস্থানে আছি।’