ঢাকা বুধবার, ২২ অক্টোবর, ২০২৫

জুলাই শহীদের মেয়ে লামিয়া ধর্ষণ : তিন আসামির কারাদণ্ড

পটুয়াখালী প্রতিনিধি
প্রকাশিত: অক্টোবর ২২, ২০২৫, ০২:৩৫ পিএম
আদালতে আসামিরা । ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

জুলাই শহীদ কন্যা লামিয়া ধর্ষণ মামলায় ৩ জ‌নের ১০ বছর, পর্নোগ্রা‌ফি আই‌নে ২ জ‌নের ৩ বছর ক‌রে বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। জুলাই আন্দোলনে নিহত শহীদের কন্যা লামিয়া ধর্ষণ মামলার রায়ে অ‌ভিযুক্ত তিন আসামি সা‌কিব, সিফাত ও ইমরান‌কে ১০ বছ‌রের বিনাশ্রম কারাদ‌ণ্ডে দ‌ণ্ডিত করা হ‌য়ে‌ছে।‌ একই মামলা‌য় পর্নোগ্রা‌ফি ধারায় সা‌কিব ও সিফাত‌কে আ‌রও ৩ বছর ক‌রে বিনাশ্রম কারাদ‌ণ্ডে দ‌ণ্ডিত করা হ‌য়ে‌ছে।

বুধবার (২২ অক্টোবর) বেলা ১১টায় পটুয়াখালী জেলা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিজ্ঞ বিচারক নিলুফার শিরিন এ রায় ঘোষণা করেন।

দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হ‌লেন- সা‌কিব, সিফাত ও ইমরান। এ‌দের প্রত্যেকের বয়স স‌তের বছর। রায় ঘোষণার পর আসামিদের যশোর কিশোর সংশোধনাগারে পাঠানো হ‌য়ে‌ছে।

আদালত ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, লামিয়ার বাবা জসিম উদ্দিন ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় ছাত্র আন্দোলনের সময় গুলিবিদ্ধ হন। পরে ২৯ জুলাই মোহাম্মদপুর বক্ষব্যাধি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। প‌রের দিন পটুয়াখালীর দুমকী উপজেলার আলগি গ্রামের পারিবা‌রিক কবরস্থা‌নে দাফন করা হয়। নিহত জ‌সিম ওই এলাকার বাসিন্দা ও ঢাকায় বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের গাড়িচালক ছিলেন।

এ ঘটনার প্রায় আট মাস পর চল‌তি বছ‌রের ১৮ মার্চ সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে বাবার কবর জিয়ারত শেষে নানাবাড়িতে ফেরার পথে জ‌সি‌মের কন‌্যা লামিয়াকে উপজেলার পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের আলগি গ্রামের জলিল মুন্সীর বাড়ির পাশে নির্জন বাগানে তুলে নিয়ে দলবদ্ধভাবে ধর্ষণ করা হয়।

ধর্ষণের সময় আসামিরা তার নগ্ন ভিডিও ধারণ করে তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে চুপ থাকতে বলে।

পরদিন ১৯ মার্চ লামিয়া নিজেই দুমকী থানায় একটি মামলা করেন। মামলায় আসামি করা হয় একই গ্রামের সাকিব মুন্সী (১৭), সিফাত মুন্সী (১৭) ও ইমরান মুন্সী (১৭) না‌মের তিন কি‌শোর‌কে।

পরব‌র্তীতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুমকী থানার উপপরিদর্শক (তদন্ত) মো. রফিকুল ইসলাম প্রথমে সা‌কিব ও সিফাত‌কে গ্রেপ্তার করে যশোর কিশোর সংশোধনাগারে পাঠায়।

এ‌দি‌কে গত ২৬ এপ্রিল রাজধানীর শেখেরটেক এলাকার ভাড়া বাসা থেকে লামিয়াকে গলায় ফাঁস দেওয়া অবস্থায় উদ্ধার করে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট ও পারিবারিক সূত্র জানায়, মানসিক চাপ ও হতাশায় লামিয়া আত্মহত্যা করেন। পরদিন রাতে বাবার কবরের পাশে লা‌মিয়া‌কে দাফন করা হয়।

পরে পু‌লিশি তদন্তে ইমরানের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে অভিযোগপত্রে তার নাম যুক্ত করে গত ৬ মে ওই তিনজনের বিরুদ্ধেই আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা।

এরপর ১৬ জন সাক্ষীর সাক্ষ‌্যগ্রহণ শে‌ষে গত ১৯ অ‌ক্টোবর দুপুরে মামলার উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে বিচারক রায় ঘোষণার আজ‌কের তারিখ নির্ধারণ করেন।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী পিপি মো. আব্দুল্লাহ আল নোমান জানান, সাক্ষ্য ও প্রমাণের ভিত্তিতে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আদালত সর্বোচ্চ সাজা প্রদান করেছেন। ন্যায়বিচারের স্বার্থে দৃষ্টান্তমূলক এ শাস্তি নজির স্থাপন করবে।

লামিয়ার দাদা আ. সোবাহান বলেন, এই রায়ে আমরা সন্তুষ্ট না। এই ধর্ষণ মামলার আসামিদের যদি ফাঁসি হতো আগামীতে কেউ আর এ ধরনের অপরাধ করার সাহস পেত না।

লামিয়ার মা রুমা বেগম বলেন, যে রায় হইছে তাতে আমি সন্তুষ্ট না। আমি চেয়েছি মৃত্যুদণ্ড, আমি চেয়েছি ফাঁসি।