ঢাকা সোমবার, ২১ জুলাই, ২০২৫

টাকা জমিয়ে হেলিকপ্টারে চড়ে রাজকীয় বিয়ে করলেন ইমাম

রাজবাড়ী প্রতিনিধি
প্রকাশিত: জুলাই ২০, ২০২৫, ১১:১৬ পিএম
ছবি- সংগৃহীত

রাজকীয় আয়োজনে হেলিকপ্টারে চড়ে বিয়ে করে এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছেন রাজবাড়ীর সদর উপজেলার হাফেজ মো. রুহুল আমিন।

রোববার (২০ জুলাই) দুপুরে সদর উপজেলার বরাট ইউনিয়নের ভবদিয়া গ্রামে এই ব্যতিক্রমধর্মী বিয়ের আয়োজন হয়।

বিয়ের দিন বর হেলিকপ্টারে চড়ে নিজের গ্রামের আবুল হোসেন ক্লাব মাঠ থেকে ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলায় পাত্রীর বাড়িতে যান এবং সেখান থেকে নববধূকে নিয়ে একই মাঠে ফিরে আসেন।

হেলিকপ্টার অবতরণের খবর ছড়িয়ে পড়তেই আশপাশের কয়েকটি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ ভিড় করেন মাঠে। বিকেলেও নবদম্পতিকে এক নজর দেখতে উৎসুক জনতার ঢল নামে।

বর হাফেজ মো. রুহুল আমিন ভবদিয়া গ্রামের ১ নম্বর ওয়ার্ডের মো. মোশাররফ হোসেন হেলালীর ছেলে। তিনি স্থানীয় দাদশী মাজার জামে মসজিদের ইমাম এবং তাদের পারিবারিক একটি মাদ্রাসার শিক্ষক।

শৈশবের স্বপ্ন বাস্তবায়ন

রুহুল আমিন জানান, ছোটবেলা থেকেই তার ইচ্ছা ছিল হেলিকপ্টারে চড়ে বিয়ে করার।

তিনি বলেন, ‘আমি ঢাকার নবাবগঞ্জ থেকে হাফেজি পড়া শেষ করি। তখন বাবা আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, আমি কী চাই? আমি বলেছিলাম, হেলিকপ্টারে চড়ে বিয়ে করতে চাই। বাবা তখন বলেছিলেন, আল্লাহ তোমার আশা পূরণ করবেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি মাসে ৮/১০ হাজার টাকা ইমামতির বেতন পাই। সেখান থেকে প্রতি মাসে কিছু টাকা জমিয়েছি। এরপর বাবার সহায়তায় সেই স্বপ্ন পূরণ হলো। আমার স্ত্রীও একজন হাফেজা।’

বাবার প্রতিশ্রুতি রক্ষা

রুহুল আমিনের বাবা মো. মোশাররফ হোসেন হেলালী বলেন, ‘আমার ছেলে যখন ১০ বছর বয়সে হাফেজ হয়, তখন আমি তাকে জিজ্ঞাসা করি, তুমি কী চাও? আমি ভাবছিলাম সে হয়তো বাইসাইকেল চাইবে। কিন্তু সে বললো, বিয়ের সময় হেলিকপ্টারে চড়ে বিয়ে করতে চায়। আমি তখন তাকে কথা দিয়েছিলাম। এখন তার সেই স্বপ্ন পূরণ করতে পেরে আমি খুব খুশি।’

তিনি আরও জানান, ‘ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার একটি মেয়েকে পছন্দ হলে ছেলেকে জানানো হয়। তখন রুহুল আমিন মনে করিয়ে দেয়, ‘বাবা, তুমি তো কথা দিয়েছিলে হেলিকপ্টারে চড়ে বিয়ে করাবা।’ এরপর বাবার জমানো টাকা ও ছেলের সঞ্চয়ে মিলিয়ে হেলিকপ্টার ভাড়া করে বিয়ের আয়োজন সম্পন্ন করা হয়।’

গ্রামবাসীর উচ্ছ্বাস

বরাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী শামসুদ্দিন বলেন, ‘এমন রাজকীয় বিয়ের আয়োজন এই গ্রামে আগে কখনো হয়নি। সাধারণ মানুষের মধ্যে দারুণ উৎসাহ-উদ্দীপনা ছিল। পুরো গ্রাম যেন উৎসবের মাঠে পরিণত হয়েছিল।’