রাজবাড়ী শহরের বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) কার্যালয় যেন এখন আর সরকারি অফিস নয় বরং দালাল আর ঘুষখোরদের রাজত্ব। দালাল ছাড়া কোনো কাজ হয় না এই কথা এখন রাজবাড়ীর মানুষের মুখে মুখে। অর্থ না দিলে ফাইল নড়ে না, টাকা দিলেও কাজ হয় কি না তা ভাগ্যের ওপর নির্ভর।
সেই অনিয়মের জাল এবার মারধরের পর্যায়ে গড়িয়েছে। টাকা ফেরত চাইতেই সেবাগ্রহিতাকে পেটালেন অফিসের প্রভাবশালী সিল কন্ট্রাক্টর ও তার দোসররা। টাকা দিলেন, কাজ হয়নি শেষে মার খেলেন।
গতকাল, রাজবাড়ী বিআরটিএ অফিসে প্রবেশ করেন গোয়ালন্দ মোড় এলাকার বাসিন্দা মো. সুমন শেখ। এক বছর আগে তিনি কাগজের জন্য আক্রামুজ্জামান নামে এক সিল কন্ট্রাক্টরকে সাড়ে আট হাজার টাকা দিয়েছিলেন। কাজ না হওয়ায় তিনি সেদিন অফিসে এসে টাকা ফেরত চান। তাতেই চটে যান আক্রামুজ্জামান।
সুমন শেখ বলেন, সে আমার গালে থাপ্পর মারে। পরে তার সঙ্গে থাকা আরও কয়েকজন আমাকে এলোপাতাড়ি পেটায়। টাকা দিয়েও কাজ না হওয়ায় ফেরত চাওয়া অপরাধ হলো বুঝি। আমি এর ন্যায়বিচার চাই।
ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে রাজবাড়ী বিআরটিএ অফিস এখন যেন টাকার টিকিট ছাড়া প্রবেশ নিষিদ্ধ জায়গা। স্থানীয় এক সেবাগ্রহীতা বিল্লাল হোসেন বলেন, আমার ভারী লাইসেন্স হালকা করতে আক্রামুজ্জামান ৮ হাজার টাকা চায়। আমি ৬ হাজার দেই, কিন্তু দুই বছরেও কাজ হয়নি, এখন ফোন ধরেও না।
আরও অভিযোগ, দালালের বাইরে কেউ লাইসেন্স করতে গেলে পরীক্ষায় ইচ্ছাকৃতভাবে ফেল করানো হয়। একজন আবেদনকারী জানান, তিনবার ফেল করানোর পর এক দালালকে ১৯ হাজার টাকা দিয়েছি। এখন দেড় বছর ঘুরছি না কাজ হয়, না টাকা ফেরত দেয়।
এ চক্রের বিরুদ্ধে গত ৭ মে অভিযান চালিয়েছিল দুর্নীতি দমন কমিশন(দুদক)। ফরিদপুর আঞ্চলিক কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. মোস্তাফিজ নেতৃত্বে অভিযানে সিল কন্ট্রাক্টর আক্রামুজ্জামানসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কাছ থেকে ৭২ হাজার ৪২০ টাকা উদ্ধার করা হয়।
দুদকের নির্দেশে মামলা হলেও জামিনে বেরিয়ে এসে তারা আবার আগের মতোই সক্রিয় হয়ে পড়ে বলে অভিযোগ রয়েছে স্থানীয়দের। অভিযোগ আছে, সরকারি চাকরি না করেও আক্রামুজ্জামান এখন কোটি টাকার মালিক।
রাজবাড়ী শহরের ২ নম্বর বেড়াডাঙ্গায় দুইতলা বাড়ি, জাপানি প্রাইভেটকার, আর সজ্জনকান্দায় ১ কোটি ২৬ লাখ টাকায় কেনা ভবন, সবই নাকি এই সিল কন্ট্রাক্টরের।
বিআরটিএ বলছে, তিনি আমাদের লোক নন। রাজবাড়ী বিআরটিএ সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিন) মো: নাসির উদ্দিন বলেন, আক্রামুজ্জামান বিআরটিএর কেউ নন, তিনি একজন বহিরাগত। সেবাগ্রহিতাকে মারধরের বিষয়ে এডিএম স্যার আমাকে জানিয়েছেন। আমি বর্তমানে বাইরে আছি, পরে বিস্তারিত জানাব।
প্রতিদিন শত শত মানুষ রাজবাড়ী বিআরটিএ অফিসে যান সেবা নিতে, কিন্তু ফিরে আসেন ক্ষোভ আর নিরাশা নিয়ে। অফিসের ভেতরে দালালদের দৌরাত্ম্য, বাইরে তাদের আধিপত্য সবই প্রকাশ্য। তবুও যেন প্রশাসনের চোখে ধুলো পড়ে আছে।
সেবাগ্রহিতাদের দাবি, যতদিন না এই দালাল সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে, রাজবাড়ী বিআরটিএ অফিস থেকে সেবা নয়, কেবল হয়রানিই পাবেন সাধারণ মানুষ।