ঢাকা বুধবার, ০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫

পুরান বউ নতুন শাড়িতে দেওয়ার দিন শেষ: চরমোনাই পীর

রংপুর ব্যুরো
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৩, ২০২৫, ০৫:৪৯ পিএম
বক্তব্য দেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম বলেছেন, জুলাই আন্দোলন একটি দলকে ক্ষমতায় আনার জন্য হয়নি। একটি দল মনে করে তারা ক্ষমতায় চলে গেছে। আর এমনটা ভেবে সারা দেশে লুটপাট, সন্ত্রাসী রাজত্ব কায়েম করেছে।

তিনি আরও বলেন, ক্ষমতাপ্রেমিকরা বারবার ক্ষমতায় গেছে। কিন্তু কী উপহার দিয়েছে? তারা শুধু নতুনভাবে পুরান বউ নতুন শাড়িতে উপহার দিয়েছে। তাই নতুন শাড়িতে পুরান বউ উপহার দিয়ে আর ধোঁকা দিতে পারবেন না। ধোঁকা দেওয়ার দিন শেষ। বাংলাদেশ হবে ইসলামের বাংলাদেশ। এ দেশ রক্ষার জন্য আমরা রাজপথে উপস্থিত হয়েছি।

বুধবার (৩ ডিসেম্বর) বিকেলে নগরীর কালেক্টরেট ঈদগাহ মাঠে আন্দোলনরত আট দলের উদ্যোগে রংপুর বিভাগীয় সমাবেশের প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম।

তিনি বলেন, ‘হাজার হাজার ছাত্র-জনতা জীবন দিয়েছে শুধু ক্ষমতা বদলের জন্য নয়; বরং যারা বিদেশীদের তাবেদারি-প্রভুত্ব কায়েম করেছিল, তাদের উৎখাতের মাধ্যমে স্বাধীনভাবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার জন্য তারা জীবন দিয়েছিল। আজকে সেই বিষয়টি যদি বুঝতে তাদের সমস্যা হয়, তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই—আপনারা মনে করছিলেন ওয়ান-টুর মধ্যে ক্ষমতায় যাবেন। সেই দিন ভুলে যান।’

চরমোনাই পীর বলেন, ‘যারা দেশকে ভালোবাসে, যারা মানবতাপ্রেমিক তারা আজ রাজপথে নেমে এসেছে। দেশের মানুষ অপেক্ষায় আছে, কবে নির্বাচনের বাক্স আসবে। ইসলামের পক্ষে ও মানবতার পক্ষের জনগণ ভোটবাক্স ভরে দেওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘৫৩ বছর স্বাধীনতার পরে আজকে আমরা সুযোগ পেয়েছি। এই সুযোগকে কাজে লাগাতে না পারলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম নতুন করে ইতিহাস লিখবে। তখন দুঃখজনক ইতিহাস লিখবে। আমরা জুলাই অভ্যুত্থানে দেশকে ফ্যাসিস্টদের বিদায়ের পর স্বপ্ন দেখেছিলাম—দেশ সংস্কারের মাধ্যমে দেশের দুর্নীতি রোধ হবে। কিন্তু দেশের সংস্কার ও ফ্যাসিস্টদের বিচারের ব্যবস্থা না করেই এক শ্রেণির ক্ষমতালোভীরা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য শুধু পাগল নয়, ডাবল পাগল হয়েছে।’

চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, আবু সাঈদ যেভাবে দুই হাত প্রসারিত করে দেশকে ফ্যাসিস্টদের হাত থেকে রক্ষা করেছেন, তা ওই চাঁদাবাজদের ক্ষমতায় বসানোর জন্য নয়, দেশের টাকা বাইরে পাচারের জন্য নয়। তাই ক্ষমতালোভীদের বলতে চাই, ক্ষমতা ও দাপট দেখিয়ে এবং কালোটাকার মাধ্যমে ক্ষমতায় যাওয়ার দিন ভুলে যান। সেই দিন আর নেই। জনগণ এবার তাদের ‘না’ বলে দেশ থেকে উৎখাত করবে, ইনশাআল্লাহ।

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন, নির্বাচনের আগে গণভোট আয়োজনসহ পাঁচ দফা দাবিতে রংপুরে জামায়াতে ইসলামীসহ সমমনা আট দলের অনুষ্ঠিত বিভাগীয় সমাবেশ শুরু হয় পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে।

পরে স্থানীয় নেতৃবৃন্দের বক্তব্যের পর জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ও সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মুজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন অপর নায়েবে আমির এটিএম আজহারুল ইসলাম, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা ইউসুফ আশরাফ, খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমির আহমদ আলী কাসেমী, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা আব্দুল মাজেদ আতহারী, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের নায়েবে আমির মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির সহ-সভাপতি ও মুখপাত্র রাশেদ প্রধান এবং বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টির চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আনোয়ারুল ইসলাম।

রংপুর কালেক্টরেট মাঠে লাখো জনতার উপস্থিতিতে শুরু হয় ৮ দলীয় জোটের এই সমাবেশ। রংপুর বিভাগের আটটি জেলা থেকে সকাল থেকেই আসতে শুরু করেন নেতাকর্মীরা। সমাবেশ শুরুর আগেই কানায় কানায় পূর্ণ হয় এই মাঠটি।

জামায়াতে ইসলামীসহ সমমনা আট দলের নেতৃবৃন্দ বলেন, একটি দলকে বিশেষ নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে—এটা কিসের ইঙ্গিত? এটি নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নষ্ট করবে। তারা বলেন, গণভোটের তারিখ ঘোষণা করতে হবে, তারপর জাতীয় নির্বাচন দিতে হবে। বাংলাদেশের মূল সমস্যা দুর্নীতি। দুর্নীতির পাহাড় গড়েছে। লক্ষ কোটি টাকার সম্পদ পাচার করা হয়েছে। বিচারহীনতা, আইনের শাসন নেই। তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে।

প্রধান অতিথি বলেন, কোনো মহল ভোটে কারচুপি বা ডাকাতির চেষ্টা করলে তাকে দাঁতভাঙা জবাব দেওয়া হবে। জুলাই আন্দোলন একটি দলকে সুবিধা দেওয়ার জন্য হয়নি। ওই দলটি মনে করে তারা ক্ষমতায় চলে গেছে।

এর আগে কালেক্টরেট ঈদগাহ মাঠে সমাবেশের শুরুতে রংপুর মহানগর ছাত্র শিবিরের সভাপতি নুরুল হুদা, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের রংপুর মহানগর সেক্রেটারি আমিরুজ্জামান পিয়াল, জামায়াতে ইসলামীর রংপুর মহানগর আমির এটিএম আজম খান, জামায়াতে ইসলামীর রংপুর জেলার আমির অধ্যাপক গোলাম রব্বানীসহ স্থানীয় নেতারা বক্তব্য দেন।