বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


টাঙ্গাইল প্রতিনিধি

প্রকাশিত: জুলাই ৩, ২০২৫, ০৩:২৮ পিএম

‘মাসুদ আমার মৃত্যুর জন্য দায়ী’

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি

প্রকাশিত: জুলাই ৩, ২০২৫, ০৩:২৮ পিএম

লাকি। ছবি-  রূপালী বাংলাদেশ

লাকি। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

এগারো পৃষ্ঠার সুইসাইড নোট লিখে করেছেন বিষপান। এরপর তিন দিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থেকে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছেন লাকি (২৮)।

লাকি টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার কেওটাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ছিলেন। তার বাড়ি উপজেলার কুড়ালিয়া ইউনিয়নের হলদিয়া গ্রামে। তিনি কৃষক আব্দুল লতিফের বড় মেয়ে।

লাকি গত ২৪ জুন রাতে কীটনাশক পান করেন। এরপর ২৭ জুন শুক্রবার দুপুরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীনে মারা যান।

এর মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মধুপুরের গোপীনাথপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ইবনে মাসুদ রানার উদ্দেশ্যে লাকির লেখা সুইসাইড নোট ভাইরাল হয়।

ইবনে মাসুদ রানা মধুপুর উপজেলার সাথী হল মোড়ের শামছুল হক ওরফে সোনা মিয়ার ছেলে। মাসুদ মধুপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।

বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, লাকির সঙ্গে মাসুদের প্রেমের সম্পর্ক হয় টাঙ্গাইলে পিটিআই ট্রেনিং করার সময়। তারপর মাসুদ-লাকির প্রেমের সম্পর্ক শারীরিক সম্পর্কে গড়ায়। পরবর্তীতে লাকি বিয়ের জন্য চাপ দিলে মাসুদ তাকে বিয়ে করতে অস্বীকার করেন। সম্প্রতি মাসুদ তাকে পুরোপুরি এড়িয়ে যেতে শুরু করলে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন লাকি।

কেওটাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাসিনা খাতুন জানান, লাকি ২০২৩ সালের ২২ জানুয়ারি বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। তার এমন মৃত্যুতে আমরা ব্যথিত। মৃত্যুর পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার ডায়রির লেখা দেখার পর আমরা হতবাক হয়েছি। এই দুর্ঘটনার আগে আমরা কেউ বিষয়টি জানতে পারিনি। আমরা জানতাম ইবনে মাসুদ স্যারের সঙ্গে লাকি দাপ্তরিক কাজে যোগাযোগ করেন। তিনি আইটিতে অভিজ্ঞ থাকায় আমাদের বিদ্যালয়ের কাজগুলো তাকে দিয়েই করানো হতো। মাঝে মধ্যেই কাজগুলো নিয়ে যেতেন লাকি। এর বাইরে কিছুই জানি না।

লাকি তার সহকর্মী ইবনে মাসুদ রানার উদ্দেশ্যে সুইসাইড নোটে লিখেছেন, ‘পৃথিবীতে মুত্যু যন্ত্রণা সহ্য করে বেঁচে থাকার চেয়ে মরে যাওয়া অনেক ভালো। আজ (২৪ জুন মঙ্গলবার) বিকেল পর্যন্তও বেঁচে থাকার ইচ্ছা মনের গভীর কোণে উঁকি দিয়েছে। কিন্তু তোমার অবজ্ঞার কারণে সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেললাম। হ্যাঁ, তোমাকে বলছি- সুপ্রিয় আস্থাভাজন, বন্ধুপ্রতীম ইবনে মাসুদ স্যার।... যখন আমি তোমার সকল কথা বিশ্বাস করলাম, ভরসা করতে থাকলাম, ভালোবাসলাম তখন তুমি আমার হাত ছেড়ে দিলে। তুমি আমাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে আমাকে ভোগ করলে। আমি কি দোষ করেছিলাম আমাকেই কেন টার্গেট করলে। সমাজের কাছে আমাকে অপরাধী করলে।’

তিনি আরও লিখেছেন, ‘আমার এ দুই বছরে আমি যত রাগ, যত কষ্ট, যত দুর্ঘটনা ঘটিয়েছি সবই তোমার জন্য। তুমি আমাকে খুন করে ফেললে জান। পৃথিবীতে আমি বাঁচলেও তোমার কিছু আসে যায় না, মরলেও না। কারণ আমাদের তো কাগজে সম্পর্ক নেই। কোথাও তো চুক্তিভিত্তিক কোনো দলিল নেই। তবুও কীভাবে জড়িয়ে গেলাম জানি না। ভালো থেকো। ‘তোমার জান বলছিলাম যে নামে আর কাউকে ডাকোনি’।

তিনি আরও লিখেছেন, ‘তুমি জানতে তোমার বাসা থেকে বের হওয়ার পর আমি কোনো দুর্ঘটনা নিশ্চিত ঘটাব। তবু আটকালে না। তুমি চাচ্ছ আমি মরে যাই, আর তুমি জগৎ সংসারে ভালো থাকো। আমি এখন পোকার খাবার বিষ খাব, আসার সময় কিনে এনেছি। আমার সঙ্গে যা করলে দুনিয়ার কোনো মানুষের সঙ্গে করো না প্লিজ। আমার মৃত্যুর জন্য তুমি দায়ী, আমি চাইলে ধর্ষণ মামলা করতে পারতাম। তোমাকে জোর করে বিয়ে করতে পারতাম কিন্তু আমি বেঁচে থেকে দেখতে পাব না। আমি মরে যাওয়ার পর যা হয় হোক।’

এ ব্যাপারে লাকির বাবা আব্দুল লতিফও বলেন, ‘আমি কৃষক মানুষ। অনেক কষ্ট করে ইডেন কলেজ পর্যন্ত পড়াইছি। বাড়ির কাছে চাকরি পাওনে খুবই খুশি অইছিলাম। সেই সুখ আমার সইল না। হঠাৎ ২৪ তারিখ রাইতে তার চিৎকারে ঘরে গিয়ে দেখি বিষ খাইছে। অবস্থা খারাপ। নিলাম মধুপুর হাসপাতালে। সেখান থেকে ময়মনসিংহ মেডিকেলে। তারপর শুক্রবার মইরা গেল। ময়নাতদন্ত ও দাফনের পর জানলাম কত কিছু। তাই হত্যার জন্য দায়ী ইবনে মাসুদের বিচারের দাবিতে মামলা করছি।

ইবনে মাসুদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাকে পাওয়া যায়নি।

তবে তার কর্মস্থল গোপীনাথপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দিলরুবা খান বলেন, আমি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমেই কিছু বিষয় জানতে পেরেছি। ইবনে মাসুদ রানা তিন দিনের জন্য ছুটি নিয়েছেন রোববার। তিনি বিদ্যালয়ে আসেননি। তার স্ত্রীর মাধ্যমে ছুটির আবেদন পাঠিয়েছেন।

এ ব্যাপারে মধুপুর থানার ওসি এমরানুল কবীর বলেন, লাকির বাবা আব্দুল লতিফ বাদী হয়ে মামলা করেছেন। আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া চলমান। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পর সুনির্দিষ্টভাবে পদক্ষেপ নেব।

রূপালী বাংলাদেশ

Shera Lather
Link copied!