মঙ্গলবার, ১৭ জুন, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


বালিয়াডাঙ্গী (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: জুন ১৬, ২০২৫, ০৮:৪৭ পিএম

উন্নত চিকিৎসার অভাবে মারা গেলেন ঠাকুরগাঁওয়ের সাংবাদিক মজিবর

বালিয়াডাঙ্গী (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: জুন ১৬, ২০২৫, ০৮:৪৭ পিএম

সংবাদিক মজিবর রহমান শেখ। ছবি- সংগৃহীত

সংবাদিক মজিবর রহমান শেখ। ছবি- সংগৃহীত

অন্যের জন্য যিনি জীবনভর কাজ করেছেন, তুলে ধরেছেন মানুষের দুঃখ-বেদনা ও দুর্দশার গল্প। কিন্তু সেই মানুষটাই যে এক সাগর দুঃখ ও বেদনা নিয়ে তিন দশক ধরে মফস্বলের মাঠ চষে বেড়িয়েছেন তা ক’জনে জানতো। 

যে মানুষটি অন্যের দুর্দশার গল্প ছান্দনিকভাবে ফুটিয়ে তোলেন তার ভেতরের অন্ধকারের গল্পই বা ক’জনে রাখতো। সংসারের টানাপড়েনেও ছুটেছেন অন্যের গল্প বুনতে। কে জানতো যে মানুষটি অন্যকে নিয়ে সংবাদের শিরোনাম করতো আজ তিনি নিজেই সংবাদের শিরোনাম হবেন। 

বলছি, ঠাকুরগাঁওয়ের প্রবীণ সংবাদিক মজিবর রহমান শেখ এর কথা। ৩০ বছর ধরে সংবাদের পেছনে ছুটেছেন শহর থেকে উপজেলা, ইউনিয়ন, গ্রামঞ্চলে। তার সেই ছুটে চলা প্রাণবন্ত দেহটি এখন অন্ধকার কবরে শয্যাশায়ী। সদা হাস্যোজ্জ্বল প্রবীন সাংবাদিকের মৃত্যু হয়েছে অর্থ সংকটে ও উন্নত চিকিৎসার অভাবে।

সোমবার (১৬ জুন) ভোরে রংপুর মেডিকেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। (ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্নাইলাহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছে ৪৮ বছর। 

মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, সন্তান, ভাই-বোনসহ অসংখ্য শুভাকাঙ্ক্ষী রেখে গেছেন। তার মৃত্যুতে শোকাহত পরিবারকে সমবেদনা জানিয়েছেন জেলার সাংবাদিকরা।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মরহুমের ভাগিনা তানভিন হাসান তানু।

প্রবীণ সংবাদিক মজিবর রহমান শেখ জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার বাড়িয়া ইউনিয়নের বাধমিছিল গ্রামের মৃত নজরুল ইসলামের ছেলে। তিনি দেশের জনপ্রিয় সংবাদ মাধ্যম ঢাকা পোস্ট এর সিনিয়র নিউজ এডিটর মাহাবুর আলম সোহাগ ও তারকা সাংবাদিক ৭১ টেলিভিশন-দৈনিক ইত্তেফাক ও জাগো নিউজের ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি তানভির হাসান তানু’র মামা।

এই প্রবীণ সাংবাদিকের মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে সাংবাদিক মহলে। মৃত্যুর খবরে সহকর্মীরা ছুটে যান তার গ্রামের বাড়িতে।

সাংবাদিক তানভিন হাসান তানু জানান, সাংবাদিক মজিবর রহমান শেখ দুই সপ্তাহ আগে ‘ব্রেইন স্টোক’ করেছিল। এরপর ঠাকুরগাঁও জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। জেনারেল হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসা না থাকায় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কিছু দিন চিকিৎসা নিয়ে খানিকটা সুস্থ্যবোধ করলে বাসায় চলে আসেন। 

কিন্তু গতকাল হঠাৎ আবারো ব্রেইন স্টোক করেন। পরিবারের লোকজন ঠাকুরগাঁও জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করালে কর্তব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুরে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। পরিবারের লোকজন রংপুর ইসলামিয়া হাসপাতালে ভর্তি করান। সেখানে স্বাস্থ্যের উন্নতি না হওয়ায় রাতেই রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা করা হয় মামাকে। এরপর চিকিৎসাধীন অবস্থায়  আজ ভোরে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

তিনি আরও বলেন, সকাল সাড়ে ১১টায় মরহুমের প্রথম জানাজা জেলা শহরের সালন্দর উচ্চ বিদ্যালয় অনুষ্ঠিত হয়। পরে বাদ আসর মামার গ্রামের বাড়ি বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার পাড়িয়া মাদ্রাসা মাঠে দ্বিতীয় জানাযা শেষে পারিবারিক করবস্থানে দাফন কাজ সম্পন্ন করা হয়। জানাজায় জেলার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিক, শিক্ষকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন। 

জেলার সাংবাদিকরা বলেন, সিনিয়র সাংবাদিক মজিবর রহমান শেখ ভাইয়ের মৃত্যু মেনে নেওয়া কঠিন। তার কাছ থেকে জেলার অনেক সাংবাদিক জ্ঞানমূলক চর্চা ও পরামর্শসহ অনেক কিছু শিখেছেন। তার মধ্যে কোনও রাগ বা অভিমান ছিল না। তিনি সবাইকে স্নেহ ও ভালোবাসা দিয়ে হাসিখুশি রাখতেন। মজিবর রহমান শেখ ভাই হাসিখুশি মানুষ ছিলেন। তার পরিবারকে সমবেদনা জানানোর ভাষা আমাদের জানা নেই।

সাংবাদিক তানভির হাসান তানু তার ফেসবুকে লিখেন, একজন মফস্বল সংবাদকর্মী অর্থের অভাবে চিকিৎসা না করাতে পেরে সহজে মৃত্যু বরণ করে তাই উদাহরণ আমার মামা। (মজিবর রহমান শেখ) আল্লাহ তুমি আমার ও আমার পরিবারকে শোক সইবার শক্তি দাও মাবুদ।

জাকির মোস্তাফিজ মিলু নামে আরেক প্রবীণ সাংবাদিক লিখেন, মজিবর রহমান শেখ অকালে চলে গেল, জজকোর্টের পত্রিকা দোকানে দেখা হতো প্রায়ই। অনেক এনার্জেটিক হাসিখুশি ছিল ছেলেটা। চিকিৎসায় তার অর্থ কষ্ট হয়েছিল, এটাই মফস্বলের একজন দাপুটে সাংবাদিকের প্রকৃত অবস্থা, প্রায় বিনা-পয়সার মজুর তারা! শ্রদ্ধা ভালবাসা শোক জানাই তার স্মৃতিতে!

আরেক প্রবীণ সাংবাদিক জসিম উদ্দীন লিখেন, অর্থের অভাবে চিকিৎসা করতে না পেরে একপ্রকার বিনা চিকিৎসায় মৃত্যবরণ করেন তিনি। মফস্বল সংবাদকর্মীরা মিডিয়া হাউজ থেকে কোন প্রকার আর্থিক সুবিধা না পেয়ে সারাজীবন দারিদ্রতার সঙ্গে যুদ্ধ করেন জীবন যুদ্ধে পরাজিত হন মজিবর রহমান তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। 

বাস্তবতা হলো, এমন অনেক সাংবাদিক আছেন যারা অন্যের কষ্টের কথা ফলাও করে প্রকাশ করতে পারলেও সাংবাদিক নিজেদের কষ্টের কথা প্রকাশ করতে পারেন না বা মুখ ফুটে কারো কাছে বলতেও পারেন না।

Link copied!